কেমন ছিল মেসির পূর্বপুরুষরা?

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪০ এএম, ০১ মে ২০১৮

স্টিল ফ্যাক্টরির ম্যানেজার জর্জ মেসির চার সন্তানের ভেতর তৃতীয় সন্তান হলেন লিওনেল মেসি। মেসির মা সেলিয়া চুচ্চিটিনি লোহা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী। এতটুকু ফুটবল জানাশোনা মানুষদের প্রায় অনেকেই জানেন। কিন্তু কেউ কি জানেন মেসির দাদার দাদা কে ছিলেন? কী ছিল তার পেশা? কোন দেশের নাগরিক ছিলেন তিনি? এগুলো এতদিন অনেকটাই অজানা ছিল সকল ফুটবলানুরাগীদের কাছে। কিন্তু সম্প্রতি মেসির পূর্বপুরুষদের ইতিহাস ফুটে ওঠে মার্কার এক প্রতিবেদনে। মেসির বংশের রয়েছে ১২৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস।

মেসির দাদার দাদা ছিলেন এঞ্জেলো মেসি। ১৮৬৬ সালে ইতালির রেসানাতি শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এঞ্জেলো মেসির আরেক ভাইয়ের নাম ছিল জিওভান্নি মেসি। জিওভান্নি ছিলেন এঞ্জেলোর ৮ বছরের ছোট। মারিয়া লাতিনি নামক এক মেয়েকে বিয়ে করার পর ইতালির মন্টেফানো শহরে বসবাস শুরু করেন এঞ্জেলো মেসি। সূর্য ওঠার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মন্টেফানোর একটা দুর্গে কাজ করতেন দুই ভাই এঞ্জেলো এবং জিওভান্নি। কিন্তু তারা যা উপার্জন করতেন সেটা ছিল একদমই নগন্য। পরিবারের সকল সদস্যের ওই যৎসামান্য উপার্জন দিয়ে খুশি করানো সম্ভব হতো না তাদের।

বিশ শতকের শুরু দিকে ইতালিয়ানদের জীবন অনেক দুঃখদুর্দশার ভেতর দিয়ে কেটেছিল। এঞ্জেলো এবং মারিয়াও তাদের থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন না। অন্য অনেক ইতালিয়ানের মতো তারাও সিদ্ধান্ত নিলেন ইতালি ছেড়ে চলে যাবেন। ১৮৯৩ সালে তারা ইতলির আঙ্কোনা থেকে ট্রেনে চড়েন, পরবর্তীতে জেনোয়া থেকে একটি জাহাজে নৌকায় ওঠেন ইতালি ত্যাগের উদ্দেশ্যে। এক মাসেরও বেশি সময় পর তাদের জাহাজ পৌঁছায় আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে। রোজারিওতে পৌঁছানোর পর আর কোনোদিনই তারা ইতালিতে তাদের পদধূলি দেননি।

এঞ্জেলো এবং জিওভান্নির অক্ষরজ্ঞান ছিল খুবই সীমিত যে কারণে তারা আর একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তার ওপর আর্জেন্টিনা এবং ইতালির মাঝে ছিল আটলান্টিক মহাসাগর। তারা সেই সময়টা খুব গরিব ছিল যে কারণে টাকা খরচ করে সম্পর্ক বজায় রাখাও সম্ভব হয়নি তাদের জন্য। কেবল ধনীরাই সাগরপাড়ের টেলিফোন কলের মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পেতেন। তারা কীভাবে লেখতে হয় সেটাও জানতেন না, তাই চিঠি লেখাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এতসব ঝুটঝামেলার মাঝে তাই দুজনের ভেতর আর কখনো যোগাযোগ হয়নি।

দুই ভাইয়ের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর একজনের খবর আরেকজনের জানা কোনোদিক দিয়েই সম্ভব ছিল না। কিন্তু ২০০৫ সালে এই অলৌকিক কাজটাই সম্ভব হয়ে যায় ইতালির রেসানাতি শহরের গ্রাম্য পত্রিকার এক সাংবাদিক ফ্রান্সেসকো ফিওরদোমোর মাধ্যমে। ইতালিতে জীবনের শেষ পর্যন্ত অবস্থান করায় জিওভান্নির বংশধরদের চিহ্নিত করা তেমন কঠিন কাজ ছিল না। তবে বিপত্তি বাধে জিওভান্নির আরেক ভাই এঞ্জেলোকে নিয়ে। আর্জেন্টিনায় থাকার কারণে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কারা সেটা জানার জন্য সাহায্য নেয়া হয় এক কোস্টারিকান সাংবাদিকের। তার সহায়তায় ইমিগ্রেন্ট অফিসের পুরাতন নথি খুঁজে অবশেষে পাওয়া যায় এঞ্জেলো মেসির একটি বিবৃতি। জেনোয়া থেকে রোজারিও যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই বার্সেলোনাতে এঞ্জেলোদের জাহাজ কিছুক্ষণের জন্য ভিড়িয়েছিল। এই বিবৃতিটা ছিল তখনকার। সেটির সূত্র ধরেই আর্জেন্টিনার রোজারিওদের খোঁজ চালানো হয় এবং অবশেষে পাওয়া যায় জর্জ মেসিকে।

এঞ্জেলো যেমন মেসির দাদার দাদা ঠিক তেমনই লিয়ান্দ্রো এবং আলেহান্দ্রোর দাদার দাদা ছিলেন জিওভান্নি মেসি। এর মানে দাঁড়ায় লিয়ান্দ্রো এবং আলেহান্দ্রো মেসির চাচাতো ভাই হলেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার লিওনেল মেসি। সম্প্রতি নিজের অতীত ইতিহাস স্মরণ করে এক সাক্ষাৎকার দেন লিয়ান্দ্রো এবং আলেহান্দ্রো মেসি।

ইতালির গাত্তুসো ক্লাবের ৪০ বছর বয়সী সাবেক মিডফিল্ডার আলেহান্দ্রো বলেন, ‘এর মানে এটাই দাঁড়ায় আমি এবং মেসি চাচাতো ভাই। তিন অথবা চার বংশ পর আমাদের জন্ম। আমি পরিবারের অন্য শাখার সন্তান যেখানে ‘মেসি’ পদবী সবার নামের সাথেই আছে। আপনি টেলিফোন অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন চাইলে।’

আলেহান্দ্রো মেসির সাথে দেখা করার অনেকবার চেষ্টা করেও ভাগ্য প্রসন্ন না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। আলেহান্দ্রো বলেন, ‘২০০৪ সালে মেসির বাবা জর্জ মেসি ইতালির রেসানাতিতে আসেন কারণ মেসির দরকার ছিল কমিউনিটি পাসপোর্টের। কিন্তু পরিবারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় তাকে পাসপোর্ট দেয়নি ইতালিয়ান কর্তৃপক্ষ। এইসব তথ্য যদি সেদিন তাদের কাছে থাকতো তাহলে মেসি ইতালিয়ান পাসপোর্ট পেতো এবং সে একজন ইতালিয়ান হতো, স্প্যানিশ না।’

‘এবার বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনাই পাবে কারণ ইতালি এবার অংশ নিচ্ছে না। কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখানকার মানুষ লিওর জন্য খুব ব্যাকুল এবং তার প্রতি সম্মানও দেখায় অনেক। যদি বিশ্বকাপে ইতালি-আর্জেন্টিনা খেলাও হতো তাহলে তাহলে রেসানাতির মানুষ আর্জেন্টিনাকেই সমর্থন দিতো।’

ইতালির কোন ক্লাবে মেসির খেলা প্রসঙ্গে আলেহান্দ্রো বলেন, ‘আমার মনে হয় না এটা কখনো সম্ভব হবে। সে হয়তো কোনো একটা সময়ে বার্সেলোনা ছেড়ে ইংল্যান্ডে গার্দিওলার ক্লাবে যেতে পারে কিন্তু সে যদি ইতালিতে আসতো তাহলে আমরা সেটাকে খুব বেশি উপভোগ করতাম।’

মেসির সাথে কখনো দেখা না হলেও মেসির ছোট বোনের সাথে দেখা হয়েছে আলেহান্দ্রোর। সেই কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘মেসির ছোট বোনের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা সবাই রোজারিওতেই বসবাস করছে। আমি লিওর সাথেও অনেকবার চেষ্টা করেছি দেখা করতে কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় পারিনি। ‘ফেস্তা দেলে মার্সে’ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য এই প্রদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়ান মারিও স্পাকা মেসিকে একবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি প্রধানত হয়ে থাকে তরিনোর সান বেনেদেত্তোতে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সে আসতে পারে নি। সত্যি কথা বলতে আমি তার সাথে একবার দেখা করতে চাই, তার সাথে হাত মেলাতে চাই এবং আমাদের পরিবারের ইতিহাস তাকে বলতে চাই। আমি আশা করছি মেসি বিশ্বকাপ জিতবে এবং এখানে আমাদের বাসায় এসে সবার সাথে আনন্দ করবে কারণ এই ঘরটা তারই।’

আরআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।