খুলনায় ছেলের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করলেন বাবা


প্রকাশিত: ১০:২৫ এএম, ২৮ জুলাই ২০১৫

খুলনার লবণচরা থানার পুটিমারি বিল থেকে উদ্ধারকৃত ছেলে সোহাগ খলিফার মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করেছেন বাবা আব্দুল বারিক খলিফা। এ ঘটনায় তিনি প্রকৃত হত্যাকারী চিহ্নিত করে চারজনের বিরুদ্ধে সোমবার খুলনার নালিশি আমলী আদালত ‘গ’ অঞ্চলে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন, বটিয়াঘাটা উপজেলার শান্তিনগর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু লিয়াকত হোসেন বয়াতি, জামাল হোসেন বয়াতি, সোহাগ বয়াতি ও শওকত বয়াতিসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়।

এদিকে, হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ওসির শাস্তি দাবি করে মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বটিয়াঘাটা উপজেলার শান্তিনগর এলাকায় বসবাসের সুবাদে উল্লিখিত আসামিদের সঙ্গে সোহাগ খলিফা যৌথভাবে মৎস্য চাষ করতেন। ৩/৪ বছর ব্যবসা করার পর আসামিরা কোনো হিসাব না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। এ অবস্থায় সোহাগ খলিফা পাওনা টাকার জন্য তাদের চাপ দেয়। এরপর তারা সোহাগকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

গত ১৩ জুলাই রাতে সোহাগ স্থানীয় আলুতলা খেয়াঘাটে গেলে প্রধান আসামি লিয়াকত তার দোকানে বসিয়ে সোহাগকে বিষ মিশ্রিত রুটি ও চা পান করায়। এক পর্যায়ে সোহাগ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দোকানের পেছনে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ পুটিমারি বিলে ফেলে দিয়ে আসে। পরদিন সকালে ছেলের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন। তিনি মরদেহের কাছে গেলে আসামি লিয়াকতও সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিতে থাকে।

পরবর্তীতে ছেলে নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করার কথা বলে তাকে বটিয়াঘাটা থানার ওসির কাছে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সেখানে আগে থেকে টাইপকৃত একটি কাগজে তাকে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। লেখাপড়া না জানায় তিনি স্বাক্ষর করলে ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লা কাগজটি রেখে দিয়ে বলেন, ‘যান জিডি হয়ে গেছে’। পরদিন বারিক খলিয়া জানতে পারেন তার ছেলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিরীহ ১৫ জনের নামে মামলা হয়েছে। যাদের সাথে তার কোনো বিরোধ নেই এবং অনেককেই তিনি চেনেন না।

এদিকে, হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ওসির শাস্তি দাবি করে মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শাওন অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র আসকের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক (খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক) মো. মাসুদুর রহমান শান্তিনগর এলাকায় জমি কেনার পর ভূমিদস্যু লিয়াকত ও জামাল বয়াতিসহ তাদের সহযোগীরা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।

 এছাড়া গত ১ জুলাই রাতে জালিয়াত চক্রের মূলহোতা জামাল বয়াতিসহ উল্লিখিত আসামিদের কয়েকজন তার পুটিমারি-রাঙ্গেমারি মৌজার মৎস্য প্রজেক্টে মাছ লুট করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় ঘেরের পাহারাদার আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বটিয়াঘাটা থানার ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামালকে ছেড়ে দেন।

ওসি জানায়, তার এলাকায় ব্যবসা করতে হলে থানাসহ চাঁদাবাজদের অর্থ দিতে হবে। কিন্তু তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি বারিক খলিফাকে দিয়ে সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা রেকর্ড করেন। সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ওসির শাস্তি দাবি করে বুধবার দুপুর ১২ টায় খুলনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার উপদেষ্টা আব্দুস সালাম মন্টুসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আলমগীর হান্নান/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।