কলেজে ভর্তি বিভ্রাট, যার কাজ তাকেই মানায়
শিক্ষাবোর্ড যখন কলেজে ভর্তির ফল প্রকাশ করতে পারলোনা তখনই একটি অনলাইন মিডিয়া থেকে ফোন করে আমার কাছে জানতে চাইলো যে, বোর্ডের এই ডিজিটাল বিপর্যয়ের জন্য সফটওয়্যার শিল্পের কতোটা ক্ষতি হলো? আমি তার প্রশ্ন শুনে হেসেছিলাম। বলেছিলাম, ভাই, এই কাজের সাথেতো সফটওয়্যার শিল্পের কোনো সম্পর্কই নাই। দেশের সহস্রাধিক সফটওয্যার কোম্পানির কোনো একটির সাথে এই কাজের কোনো সম্পর্ক নাই। কোনো সফটওয়্যার কোম্পানি এই কাজটি করেনি। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব এন আই খান বুয়েটের একটি বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে বিনা টেন্ডারে এই কাজটি করেছেন এবং তার দায় জনাব এন আই খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং খান সাহেবের সরকার ও বুয়েটের আইআইসিটির।
এরপর তিনি প্রশ্ন করেন, এতে কি আপনাদের সফটওয়্যার শিল্পের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমি বলেছিলাম, হ্যা হয়েছে। আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি। কারণ সাধারণ মানুষ ভেবেছে আমরা সফটওয়্যার বানাতে পারিনা। কাজটা যে আমরা করিনি এবং এন আই খানের বদৌলতে বুয়েটের আইআইসিটি করেছে সেটিও তারা জানে না। আমাদের ছেলে মেয়েরা সফটওয়্যার ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে একটি পুরোই নেতিবাচক ধারণা পেয়েছে। এই বয়সে যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে ইতিবাচক ধারণা পাবার কথা সেখানে নিজেরা বিড়ম্বনার শিকার হওয়াটা খুবই আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য। বড় বিষয়টা হলো, এতে আরও একবার প্রমাণিত হলো যে, যাদের কাজ তাদেরকে দিয়ে যদি করানো না হয় তবে যথাযথ ফল পাওয়া যায় না।
এরপর এটিএন নিউজে নিউজ আওয়ার এক্সট্রা অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে আমি স্পষ্ট করেই বলেছিলাম যে, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বুয়েটের এমন কাজ করা উচিত হয়নি। বুয়েট সফটওয়্যার বানায়না-সফটওয়্যার বানাতে পারে এমন মানুষ বানায়। এর জন্মের পর থেকে আজ অবধি এমন সফটওয়্যার বানায়নি যেটি মানুষ ব্যবহার করেছে। বুয়েটকে সময় দেয়া, সফটওয়্যার টেস্টিং, ডিবাগিং এসব কাজ করা নিয়েও কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, ১২ লাখ তরুণ-তরুণীর ভাগ্য নিয়ে টি২০ খেলা অন্তত শিক্ষা সচিবের মানায় না। এরপরই দেখেছিলাম শিক্ষা সচিব এবং ড. কায়কোবাদ কি ভয়ংকরভাবে নিজেদেরকে দোষত্রুটিমুক্ত দাবি করার জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করতে থাকেন। কোনো কোনো মিডিয়া তাদেরকে ধোয়া তুলসীপাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টাও করেছেন। একবার ভেবেছিলাম, একটি কড়া উপ সম্পাদকীয় লিখি। আবার ভাবলাম, আমার গায়ে এমনিতেই গন্ধের অভাব নাই। বাংলার ছাত্র কম্পিউটারে বাংলা তৈরি করেই অনেক অপরাধ করে ফেলেছি- আবার যদি বুয়েট নিয়ে কথা বলি তবে কি না কি হয়? হয়তো বলবে, তুই ব্যাটা বুয়েটের দরজা দিয়ে ঢোকার ক্ষমতা রাখিস না বুয়েট নিয়ে কথা বলিস কোন সাহসে? গালিতো জীবনে কম খাইনি-নতুন গালি খাবার কাজটা না হয় করলামই না।
ঠিক এমন একটি সময়ে ১৩ জুলাই ১৫ দৈনিক জনকণ্ঠে জাকারিয়া স্বপনের একটি লেখা ছাপা হয়। স্বপনকে আমি তার বুয়েট জীবন থেকে চিনি। আমার সেগুন বাগিচা অফিসে ছাত্র জীবন থেকেই নিয়মিত যাতায়াত করতো। আমি বাংলা ফন্ট বানিয়ে সেটি টেস্ট করতে দিতাম ওকে। পরে সে প্রশিকা শব্দ নামক একটি বাংলা সফটওয়্যার প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়। একসময়ে র্যাঙ্গস-এর সাথে কাজ করে। তারপর বিদেশ যায় এবং সেখান থেকে ফিরে আবার অনলাইন মিডিয়ার জগতে কাজ করছে। সচরাচর সব বিষয়েই কথা হয়। আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। সে যখন আমেরিকায় তখন অভ্র-র বিজয় কীবোর্ড চুরি নিয়ে আমাকে একদল লোক প্রচুর গালাগাল করে। তখন আমার মেধাস্বত্বের সপক্ষে তার একটি শক্তিশালী অবস্থান ছিলো। এবার আমি যখন রিদমিক থেকে বিজয় কীবোর্ড সরানোর জন্য গুগলকে অনুরোধ করি এবং গুগল সেটি সরায় তখন আমার চাইতেও একটি শক্তিশালী অবস্থান নেয় জাকারিয়া স্বপন। দেশের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে অনেক বিষয়েই আমরা কাছাকাছি বা একমত পোষণ করি। তবে আমি মোটেই ধারণা করিনি যে, বুয়েটের ছাত্র স্বপন বুয়েট বিষয়ে একটি অত্যন্ত স্পষ্ট অবস্থান নিতে পারবে। ওর লেখার ওপরে একজন মন্তব্য করেছে- স্বপন ভাই এবার বুয়েটে আপনি অবাঞ্ছিত হবেন। ওর লেখা থেকে তুলে ধরছি;
“চোখের সামনে জলজ্যান্ত দেখতে পেলাম কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে কিভাবে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা এবং তাদের পরিবারগুলো ঝামেলার ভেতর পড়েছে। নিদারুণ মানসিক কষ্টে পড়েছে। যার বিজ্ঞানে পড়ার কথা তাকে দেয়া হয়েছে বাণিজ্যে, যার কলাতে পড়ার কথা তাকে দেয়া হয়েছে বিজ্ঞানে। যার ঢাকা কলেজে পড়ার ইচ্ছা তাকে না জানিয়েই রেখে দেয়া হলো নিজের স্কুল সংলগ্ন কলেজটিতেই। আমি ভর্তি হব, কিন্তু আমাকে না জানিয়েই স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা যে আমার রোল নাম্বার জানে সে গিয়ে ঠিক করে দিয়েছে আমার ভবিষ্যত। ভাবতেই আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কলেজে পড়া হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আমি যদি ঢাকা কলেজে পড়ার সুযোগ না পেতাম তাহলে আজকে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তা হতো না।
একটি কলেজ শিক্ষার্থীর জীবনকে ঠিক করে দেয়। এর ওপর নির্ভর করেই ঠিক হবে তার রেজাল্ট এবং কোন্ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে তার ঠিকানা। কিন্তু আমাদের কিছু মানুষের খামখেয়ালি কিংবা অজ্ঞতার জন্য কম্পিউটার নামক যন্ত্রের দোহাই দিয়ে লাখ লাখ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতকে লণ্ডভণ্ড করা হয়েছে। শুধু যে লণ্ডভণ্ড করেই ক্ষান্ত হয়েছেন তা নয়। তারা তাদের এই অপকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র লজ্জা অনুভব করেননি। মানুষের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাননি। তারা উল্টো দাপটের সঙ্গে মিডিয়াতে বলে বেড়াচ্ছেন এগুলো ছাত্রছাত্রীদের ইনপুট ভুল। আরও বলছেন, বড় কোনো কাজ করতে গেলে এমন ছোটখাটো ভুল নাকি হতেই পারে। এটা নাকি ছোটখাটো ভুল। অবস্থা বেসামাল হয়ে গেলে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য প্রেস ব্রিফিং করে ভুল স্বীকার করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ।
কিন্তু তাঁর আশপাশের মানুষগুলোর দম্ভ তো এখনও কমেনি। যেই বুয়েটের ওপর পুরো বিষয়টি চাপিয়ে দেয়া হলো সেই বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটিবারের জন্য বলেনি আমরা দুঃখিত। তারা বলেনি, কারণ তারা দুঃখিত নয়। তারা আমাদের সবাইকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে কোটি টাকার চেকগুলো ঠিকই পকেটে ঢুকিয়েছে। এটা নিয়ে কিছু মিডিয়া সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। কারও তো কোনো টনক নড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা আসলে এখনও অসভ্য জাতিতেই আছি। কিন্তু তারা অনেক স্মার্ট। তারা ধরেই নিয়েছেন আমাদের এই দুর্ভোগে তারা ফেলতেই পারেন দেশটা তো তারা ইজারা নিয়ে নিয়েছেন, তাই না?”
জাকারিয়া স্বপন এই বক্তব্য প্রকাশ করেই আমাদের এক শ্রেণির আমলা এবং বুয়েটের নগ্ন চরিত্র উন্মোচন করেছেন। তাদের দম্ভ ও অহংকার যে একটি জাতির কতো বড় সর্বনাশ করতে পারে তার কথাও বলেছেন। তবে যে কথাটি বলেননি সেটি হচ্ছে এই আমলাদের এটিই প্রথম তুগলকি কাজ নয়। যিনি এই কাজের নায়ক তিনি আইসিটি ডিভিশনে থেকে এমন আরও অনেক কাজ করে এসেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসে আরও অনেক কাজ করেছেন। এর মধ্যে একটি কাজ হচ্ছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ওয়েব পেজ বানানোর নির্দেশ দেয়া। দেশের লক্ষ লক্ষ প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পেজ থাকা ভাল। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েব পেজ তৈরি করার ক্ষমতা রাখে কিনা, সেগুলো আপডেট করার লোকবল ও কারিগরি ক্ষমতা তাদের আছে কিনা বা কোন মানদণ্ডে এটি করতে হবে এসব হাজারো প্রশ্ন উত্তরহীন রেখেই এমন একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
ভর্তি বিষয়ে জাকারিয়া স্বপন আরও লেখেন; “কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত যে জটিলতা তার মূল কারণ কী আমরা তা জানি। মিডিয়াতে অনেকবার এসেছে। বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞানের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি খোঁজ নিয়ে যেটুকু জেনেছি তার মূল কারণ কতিপয় ব্যক্তির ম্যাজিক দেখানোর উচ্চাভিলাষ। তারা শেষ মুহূর্তে এসে অনলাইনে আবেদনপত্র নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সরকারকে দেখাতে চান যে, দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। কিন্তু এই ধরনের একটি কাজ করতে গেলে যে পরিমাণ প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন ছিল তা নিতে পারেনি। এবং বুয়েটও টাকার লোভ সামলাতে পারেনি। তারাও অনুরোধে ঢেকিটা গিলতে গিয়েছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। সব গুবলেট পাকিয়ে গেছে।এবারে পাঠকদের কিছু প্রশ্ন করি। আচ্ছা বলুন তো বুয়েট কবে থেকে সফটওয়্যার বানায়? কিংবা বুয়েটের কোন্ সফটওয়্যারটা বাংলাদেশের কোন্ সমস্যা সমাধান করেছে? একটা-দুটো উদাহরণ দিতে পারবেন কেউ? পাঠকদের বোঝার জন্য বলছি, বুয়েট কিংবা যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বাণিজ্যিক পণ্য তৈরি করা নয়।
তাদের কাজ ভালভাবে ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে, গবেষণা করে ভবিষ্যতের বিশেষজ্ঞ তৈরি করা। তাদের কাজ পড়ানো এবং গবেষণা করা (যদিও সেই কাজটিই তারা ভাল করে করছে না)। বুয়েট সম্পর্কে আরও দুটো বিষয় পাঠকের জানা প্রয়োজন। বুয়েটে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ নামে একটি বিভাগ রয়েছে, যেখানে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিগ্রি দেয়া হয় (এবং এই অধমেরও বুয়েটের সেই ডিগ্রি একটা রয়েছে বটে); তারা কখনই কোন পণ্য তৈরি করে না। পাশাপাশি বুয়েটে একটি আলাদা ইনস্টিটিউট রয়েছে, যারা বাইরের কাজ করে থাকে। তবে তাদের মূল কাজ হওয়া উচিত কনসাল্টেন্সি, পণ্য তৈরি করা নয়। অন্যের তৈরি করা পণ্য তারা যাচাই-বাছাই করে দিতে পারে। পণ্য তৈরি করা এবং তা পরীক্ষা করার ভেতর অনেক ফারাক। যে কারণে বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা পাস করে ইন্টেল, মাইক্রোসফট, সিসকো, ওরাকল, গুগল, লিঙ্কডইন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং তারা কেউ বুয়েটের সেই ইনস্টিটিউটে চাকরি নিয়েছে বলে শুনিনি। কিন্তু যেই বুয়েটের এ ধরনের কাজের কোন দক্ষতা নেই তাদেরই দেয়া হয়েছে সেই কাজ, যেন ভুল-ক্রটি হলেও কেউ এটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে।
এই হলো আমাদের ঔদ্ধত্য। পুরো জাতিকে আমরা বুড়ো আঙ্গুল দেখাব; কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারবে না। বুয়েটও টাকার লোভ সামলাতে পারেনি। তারাও কাজটি নিয়েছে। এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের ছেলে-মেয়েদের এমন শিক্ষাই দিয়েছে যে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলের গণ্ডি পার হয়েই বুঝে ফেলেছে এই দেশে সঠিকভাবে কিছু হয় না, আমরা সঠিকভাবে কিছু করতে পারি না। তারা তাদের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই এখানে লেখাপড়াটা শেষ করবে। তারপর যারা পারবে পঙ্গপালের মতো এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে। তারপর আর কোনদিন এইদিকে পা বাড়াবে না। এটাই হলো আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।”
জাকারিয়া স্বপনকে ধন্যবাদ দিই এজন্য যে, এই বিষয়ের মূল প্রসঙ্গগুলো তিনি আলোচনা করেছেন। আমি তার সাথে যোগ করতে চাই যে, এই সংস্থাটি বুয়েটের শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে কাজ করায় এবং আমাদের অভিজ্ঞতা হলো যে, শিক্ষার্থীরা বুয়েট থেকে পাশ করে কিছু সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ না করে নিজেরা সফটওয়্যার বানাতে পারে না। এদেরকে দিয়ে এমন একটি পরিক্ষা নিরীক্ষা কেন শিক্ষা সচিব করতে গেলেন সেটি কারও বোধগম্য নয়। অন্যদিকে সরকারের কোন কোন মহলের একটি মনোভাব হচ্ছে কোন এনজিওকে ডেকে এনে বিনা টেন্ডারে কাজ দিয়ে দেয়া। এন আই খান সাহেব ব্যাককে ডেকে এনে এমন একটি কাজ করে এসেছেন। এছাড়াও কোন বেসরকারি সংস্থাকে বিনা টেন্ডারে কাজ দেবার ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত জনাব এন আই খানেরই রয়েছে।
তবে বিষয়টিতে আরও একটু আলোকপাত করার দরকার এজন্য যে বুয়েটের এই আইআইসিটি সরকারের প্রায় সকল কেনাকাটায় খবরদারি করে। তারা কম্পিউটারের স্পেসিফিকেশন থেকে শুরু করে এর যাচাই বাছাইসহ সকল কিছুতেই মতামত প্রদান করে। যারা এই খাতের ব্যবসায়ী তারা অহরহ অভিযোগ করেন যে, বাজারে প্রচলিত পণ্যের চাইতে তারা তাদের জানা পণ্য নিয়েই নিজেদের জ্ঞানের প্রকাশ ঘটান। ফলে কেনাকাটার প্রকল্পগুলো নাইটমেয়ারে পরিণত হয়। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি যে বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ ও আপটুডেট তথ্য সম্পর্কে খবর রাখেন না এবং বাংলাদেশে এর প্রয়োগ নিযেও কোনো ধারণা রাখেন না। অথচ এরাই সকল কাজের পরামর্শক।
জাকারিয়া স্বপন তার নিবন্ধে আরও লিখেছেন, “বাংলাদেশে একটি বড় গোষ্ঠী দাঁড়িয়েছে, যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কম্পিউটার বিজ্ঞান নয়; কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে। চিৎকার করে সব সমস্যার ডিজিটাল সমাধান বের করে ফেলেন। এর মূল কারণ হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেব যেহেতু আন্তরিকভাবে চান দেশে তথ্যপ্রযুক্তির একটি বিপ্লব হোক, তাই তাদের খুশি করার জন্য কিছু অতি চালাক মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটাকে ব্যবহার করে যা ইচ্ছে তাই করতে পারছেন। এটা যদি আজকে স্বাস্থ্যবিষয়ক কোন প্রোগ্রাম হতো তাহলে ডাক্তারগোষ্ঠী কিংবা ফার্মাসিউটিক্যাল প্রফেশনালরা এটাকে নেতৃত্ব দিতেন। ”
জাকারিয়া স্বপনের এই বক্তব্য যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এন আই খানকে কেন্দ্র করে হয় তবে সেটি স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি ঢালাওভাবে করা উচিত হয়নি বলে আমি মনে করি। কম্পিউটার বিজ্ঞানী না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা যাবে না এটি কোন বাইবেলে, কোন আইনে বা কোথায় আছে সেটি জানি না। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে আরও বহু লোকের মতো কম্পিউটার বিজ্ঞানীরাও অবদান রেখেছেন। কিন্তু কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়েননি বলে আর কেউ কোনো অবদান রাখেননি সেটিতো সত্য নয়। ১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক স্তরে আমার লেখা বই দিয়ে কম্পিউটার বিষয়টি পড়ানো শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে আমার লেখা বই দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটার শেখানো শুরু হয়।
কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই যাতে সাধারণ মানুষ নেতৃত্ব দেয়নি। বরং এই প্রশ্নটি করা যেতে পারে যে, কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ে আমাদের ছেলে মেয়েরা গুগল ফেসবুকের জন্য যা করেছে তার তুলনায় বাংলাদেশের জন্য কি করেছে? জাকারিয়া স্বপনকে বুঝতে হবে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেশের কোনো কম্পিউটার বিজ্ঞানীর শ্লোগান নয়। বাংলার ছাত্র শেখ হাসিনার শ্লোগান। এটি ইশতেহারে ওঠেছে আমাদের হাত ধরে। কে বা কারা এই শ্লোগান দিয়েছে, কে, কখন ও কোথায় দিয়েছে সেটিও তার জানার কথা। ডিজিটাল বাংলাদেশ ডাক্তারি বিদ্যাও নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেশের আপামর জনগণের বিষয়। দেশের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বেন এমনটি ভাবতে হলে ২১০০ সালেও সেটি হবে কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে। আমি দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাংলাদেশের জনগণই গড়বে। সম্ভবত তখনও কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক ইত্যাদিতেই কাজ খুঁজবেন।
লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক।
এইচআর/এমএস