রমজান পরবর্তী দোয়া
রমজান ইতিমধ্যে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে। আগামী রমজান আমাদের মাঝে যেন ফিরে আসে আমরা আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করি। জীবনে বারবার ফিরে আসুক রমজান ও ক্বদর। মুমিন জীবনের চাওয়ার বিষয়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। একজন নামাজি ব্যক্তি যেমনিভাবে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের অপেক্ষায় থাকে। ঠিক তেমনি মুসলিম উম্মাহর জীবনে চাওয়া-পাওয়ার একটি হচ্ছে রমজান ও ক্বদর। পাশাপাশি রমজানের শিক্ষা যেন তার জীবন থেকে হারিয়ে না যায় তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকে। আল্লাহ আমাদেরকে তার বক্রতা রক্ষা ও দয়া কামনার বিষয়টি কুরআন কারিমে বান্দার জন্য উল্লেখ করেছেন।
তা হচ্ছে- ‘রাব্বানা লা তুঝেগ কুলুবানা; বা`দা ইজ হাদাইতানা; ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাহ; ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত 8)
অর্থ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! (একবার যখন) তুমি আমাদের (সঠিক) পথের দিশা দিয়েছ, (তখন আর) তুমি আমাদের মনকে বাঁকা করে দিও না; একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের প্রতি দয়া কর; কেননা যাবতীয় দয়ার মালিক শুধুমাত্র তুমিই।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৮)
আল্লাহ তাআলার নিকট আমাদের চাওয়া-পাওয়া হচ্ছে- গোমরাহীর পর হেদায়াত, অন্ধত্বের পর দৃষ্টিশক্তি, পথহারা হবার পর সঠিক পথ ফিরে পাওয়া, চিন্তার নৈরাজ্যের পর সত্যের নিশ্চিত সন্ধান লাভ, সৃষ্টির গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহর গোলামীতে আবদ্ধ হওয়া এবং তুচ্ছ পার্থিব মোহ থেকে মুক্ত হয়ে বৃহত্তর পরকালীন স্বার্থের প্রতি মনোযোগী হওয়ার গুরুত্ব যে কত বেশি, সেটা একমাত্র মুমিন বান্দার হৃদয়ই যথাযর্থভাবে উলব্ধি করে থাকে। সে বুঝতে পারে আল্লাহ তাআলা ঈমানের প্রতিদানেই এতসব অমূল্য সম্পদ তাকে দান করেছেন। আর এ জন্যেই বান্দা ফেলে আশা অন্ধকার পথে ফিরে যেতে ভয় পায়। যেমনি ভয় পায় আলোকোজ্জ্ব যাত্রী অন্ধকার পথে যেতে, ছায়াময় পরিবেশের যাত্রী যেমন ভয় পায় রৌদ্রতপ্ত মরুপ্রান্তরে ফিরে যেতে।
আল্লাহদ্রোহী ও নাস্তিকতার অসার, শুষ্ক, তিক্ত ও দুর্ভাগ্যময় পরিণতি যে ভোগ করে এসেছে, সে ছাড়া অন্যকেউ ঈমানের প্রফুল্লতার স্বাদ অনুভব করতে পারে না। গোমরাহী ও উদভ্রান্ততার কষ্ট যে ভোগ করে এসেছে, একমাত্র সেই উপলব্ধি করতে পারে ঈমানের শান্তি ও পরিতৃপ্তির সীমাহীন স্বাদ। এ কারণেই মুমিন বান্দাহগণ আল্লাহর দরবারে এই দোয়ার মাধ্যমে জানায়, হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে হেদায়াত করার পর আর আমাদের অন্তরকে বাকা করে দিও না। মুমিন বান্দাহ এটুকু বলেই ক্ষান্ত থাকে না, রবং আল্লাহর সেই অনুগ্রহও কামনা করে, যা সে গোমরাহী ত্যাগ করে হেদায়েত লাভের মাধ্যমে অর্জন করেছে এবং ঈমানের ন্যায় অসাধারণ দান তারা পেয়েছে। তারা বলে, আর আমাদেরকে তোমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান কর। নিশ্চয় তুমি পরমদাতা।
উম্মাহাতুল মু`মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ দোয়া করতেন, ‘হে হৃদয়সমূহকে পরিবর্তনকারী, আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের ওপর স্থিতিশীল রাখ।’ হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি এ দোয়াটা এতো ঘনঘন করেন কেন? তিনি বললেন, ‘প্রত্যেকটি অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝখানে থাকে। তিনি ওটাকে স্থির রাখতে চাইলে স্থির রাখেন। আর বক্র বা অস্থির করে দিতে চাইলে বক্র বা অস্থির করে দেন।`
তাইতো ঈমানের বলে বলিয়ান অন্তর যখন বুঝতে পারে যে, আল্লাহর ইচ্ছা রোধ করার কোনো উপায় নেই, তখন পরম ঐকান্তিকতা ও উদগ্রীবতার সঙ্গে সে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনা করে ও তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে, যাতে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত সব নেয়ামত বান্দার জন্য অক্ষুণ্ন থাকে।
হে আল্লাহ! আপনি রমজান পরবর্তী এই সময়ে আমাদেরকে দয়া করুন। আপনার অপার অনুগ্রহে সিক্ত করুন। এ দোয়াটির আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
এমএমএস/এমএস