অঝোর বৃষ্টিতেও মাঠে ছিলেন চট্টগ্রামের দর্শক


প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৫

বৃষ্টিতে ভেজা সার্থক হল চট্টগ্রামের ১৮ হাজার দর্শকের। শেষ বিকেলের অঝোর বৃষ্টিতেও মাঠে ছিলেন চট্টগ্রামের দর্শক। মেঘের গর্জন আর অবিরাম বৃষ্টি একটুও দমিয়ে রাখতে পারেনি তাদের।

মুহুর্মুহু করতালি আর নানা শ্লোগানে তারা উৎসাহ দিচ্ছিলেন প্রিয় দলকে। তিল ধরনের ঠাঁই ছিলনা গালারিতে। টিকেট না পেয়ে অনেক দর্শক বাইরে অপেক্ষা করে ফেরত গেছেন। স্টেডিয়ামের ভেতরে যত দর্শক বাইরেও ছিল সে পরিমাণ দর্শক। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। ঘরের মাটিতে ভারত-পাকিস্তানের পর শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করার মাধ্যমে সিরিজ জয়ের আনন্দ যেন পাগল করে তুলেছিল দর্শকদের।

সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচটির শুরুতেই সাকিব-মুস্তাফিজদের নজরকাড়া বোলিংয়ে জয়ের সম্ভাবনা হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছিল। এমন এক ইতিহাস গড়ার সামনে টাইগারদের বোলিং তোপের মুখে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ নড়বড়ে, ঠিক তখনই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা।

বিকেলে সাড়ে ৪টার পর থেকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টি টাইগারদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যতই অন্তরায় সৃষ্টি করুক না কেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে স্টেডিয়ামে আসা চট্টগ্রামের ১৮ হাজার দর্শক মাঠ ছাড়েননি। তারা বৃষ্টিতে ভিজেও স্টেডিয়ামে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। তাদের একটাই বক্তব্য, ‘প্রিয় দলের খেলা দেখতে এত কষ্ট করে স্টেডিয়াম পর্যন্ত এসেছি। খেলার ফলাফল না দেখে মাঠ ছাড়ছি না।’

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী সজল বলেন, ‘৫শ’ টাকার টিকিট কিনেছি ১৩শ’ টাকা দিয়ে। অনেক কষ্ট করে সীতাকুন্ড থেকে সকাল সকাল স্টেডিয়ামে এসে লাইন ধরে প্রবেশ করেছি। প্রিয় দল বাংলাদেশ ভালো খেলছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। বৃষ্টিতে ভিজলেও এতো তাড়াতাড়ি মাঠ ছাড়ছি না।’

নগরীর অলংকার মোড় থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশ দলের খেলা দেখতে এসেছেন গৃহবধূ শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, জিম্বাবুয়ে,পাকিস্তান ও ভারতকে হারিয়ে আমরা সিরিজ জয় করেছি। চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ জিতে আমরা সিরিজ জয়ের হ্যাটট্টিক উপভোগ করেছি। সেজন্য অনেক কষ্টে টিকিট কিনে মাঠে এসেছি প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে। বৃষ্টির কারণে কষ্ট হলেও মাঠে থাকছি।’

মাদ্রাসা-ছাত্র ইমন বলেন, ‘৭শ’ টাকা করে প্রতিটি টিকিট কিনেছি। আমরা তিন বন্ধু খেলা দেখতে এসেছি। বাংলাদেশ আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলেছে। কিন্তু বৃষ্টি আমাদের স্বপ্নকে ভন্ডুল করে দিচ্ছিল।’

চকবাজার থেকে আসা কলেজ ছাত্র শাহরিয়ার বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজলেও কোনো দুঃখ নেই।

শুধু শাহরিয়ার বা সজল নয়। প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে সকাল থেকে মাঠে আসতে শুরু করে চট্টগ্রামের দর্শকরা। কারো হাতে জাতীয় পতাকা আবার কারো মুখে লাল সবুজের উল্কি। সবার একটিই প্রার্থনা, বাংলাদেশ দল যেন ঈদের আগে আরেকটি ঈদ উপহার দেয় চট্টগ্রামবাসীসহ পুরো দেশবাসীকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের লাকি গ্রাউন্ড হিসেবে জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম পরিচিত। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর এই মাঠে এ পর্যন্ত ১৫টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে ৯টিতেই জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা। সর্বশেষ ১০ ওয়ানডের মধ্যে ৮টিতেই জিতেছে টাইগারররা। টস জিতে আগে ব্যাট করে সাফল্য কমই পেয়েছে বাংলাদেশ। এ মাঠে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ৮ বার স্বাগতিকরা জয় পেয়েছে ৩টিতে, হেরেছে ৫টি ম্যাচ। ফিল্ডিং নিয়ে ৭ বারের মধ্যে ৪বার জয় এসেছে টস জিতে টাইগার শিবিরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ নির্ধারণী এই ম্যাচেও বাংলাদেশ প্রথমে বোলিং করে জয়ের সেই সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।

জীবন মুছা/এসআরজে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।