মির্জা ফখরুলের জামিন বহাল
নাশকতার অভিযোগে পল্টন থানায় দায়ের করা তিন মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করার ফলে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রইলো। একই সঙ্গে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে ফখরুলকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য বলা হয়েছে। ফখরুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভাসকুলার সার্জারির ত্ত্ত্বাবধানে বিদেশেও নিতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির ও মুরাদ রেজা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, সগীর হোসেন লিওন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, এহসানুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে রোববার বিকেলে ফখরুলের স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কর্তপক্ষ। প্রতিবেদনটি আদালত আমলে নিয়ে ফখরুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পারবে মর্মে এই জামিন দেন।
পল্টন থানায় করা পৃথক তিন মামলায় গত ২১ জুন হাইকোর্ট মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অন্তর্ববর্তীকালীন জামিন দেন। সে আদেশের স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার বিচারপতির কাছে গেলে, চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। আবেদনের শুনানি করে সোমবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রাখেন।
ছয় মাস ধরে কারাবন্দি ফখরুল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। ফখরুল অসুস্থ হয়ে পড়লে আদালতের নির্দেশে গত ১৩ জুন তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
আপিল বিভাগের আদেশের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তার অসুস্থতার গ্রাউন্ডে জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেয়া ছয় সপ্তাহের জামিন বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই আদেশের ফলে এখন আর মির্জা ফখরুলের মুক্তি পেতে কোনো বাঁধা নেই। কিন্ত বর্তমান সরকার চাইলে তো মুক্তিতে বাধাঁ দিতেই পারে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, এর আগে গত ৯ জুলাই মির্জা ফখরুলের স্বাস্থ্যগত প্রদিবেদন জমা দিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। ওই দিনের রিপোর্ট যথাযথ প্রক্রিয়াই হয়নি, তাই তার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আপিল বিভাগ একটি বোর্ড গঠন করার জন্য বলেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে। আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী জামিনের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাস্থ্যগত রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দাখিল করেন (বিএএসএমএমইউ) মেডিকেল বোর্ড।
সোমবার ওই প্রতিবেদন দেখার পর আদালত স্বঃপ্রণোদিত হয়ে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিন বহাল রাখার আদেশ দেন। এখন তিনি উন্নত চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে পারবেন। তবে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে সারেন্ডার (আত্মসমর্পন) করতে হবে।
গত ২১ জুন এ তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে জামিন দেয় হাইকোর্ট। রাজধানীর পল্টন এলাকায় হরতালের মধ্যে নাশকতার উস্কানি, প্ররোচনা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে গত ৪ ও ৬ জানুয়ারি এসব মামলা দায়ের করে পুলিশ।
গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আটক আছেন।
এফএইচ/বিএ