ভাগ্য এবং আন্তরিক চেষ্টা দুটোই প্রয়োজন : মাশরাফি
একজন ক্রিকেটার অধিনায়ক হিসেবে পাঁচ আসরে চারবার চ্যাম্পিয়ন। সেই অধিনায়কের নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০১২ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসকে চ্যাম্পিয়ন করানো দিয়ে শুরু সাফল্যের সোপানে যাত্রা। এর পরের বছর আবার একই দল, তার নেতৃত্বেই বিপিএল চ্যাম্পিয়ন।
২০১৫ সালে তৃতীয় আসরে আবার ট্রফি হাতে শেষ হাসি মাশরাফির। তবে সেবার আর ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের অধিনায়ক হিসেবে নয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে। সেবার কুমিল্লাকে চ্যাম্পিয়ন করে টানা তিনটি বিপিএল চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক হবার দুর্লভ কৃতিত্ব দেখান মাশরাফি।
এরপর গতবার সাফল্যের দেখা পাননি শুধু। সেবার তার দল কুমিল্লা শেষ চারেও যেতে পারেনি। ওই একটি বছর সাফল্যের দেখা মেলেনি। এবার আবার শেষ হাসি মাশরাফির। বিপিএলের পঞ্চম আসরের ট্রফি নড়াইল এক্সপ্রেসের হাতেই।
বিপিএল যেন তারই আসর হয়ে গেছে। প্রেস কনফারেন্সে এক সিনিয়র সাংবাদিকের রসিকতা, ‘আপনি যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন, আপনার দল যেভাবে প্রায় প্রতিবার ট্রফি জিতছে, তাতে করে আগামীতে না আবার এ আসরের নাম ‘মাশরাফি প্রিমিয়ার লিগ’ হয়ে যায়!
এটা নিছক রসিকতা। তারপরও প্রশ্নের মধ্যে একটা অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আছে। সত্যিই তো, বিপিএলে অধিনায়ক মাশরাফি যেভাবে পাঁচবারের মধ্যে চারবার চ্যাম্পিয়ন হলেন, সেটা অনেক বড় কৃতিত্ব অবশ্যই।
অধিনায়ক মাশরাফি আর বিপিএল তাই মিলেমিশে একাকার। ‘দুজনে দুজনার’; কিন্তু এমন আকাশছোঁয়া সাফল্যের রহস্য কী? বিনয়ী মাশরাফির প্রথম ব্যাখ্যা, আগেরবার তো সেমিফাইনাললে উঠিনি। কোনো রহস্য নাই। লাক ফেবার না করলে কিছুই সম্ভব না। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। লাক ফেবার করেছে তাই পেরেছি।’
শুধু ভাগ্যই কি বারবার সাফল্যের প্রসূতি? না অন্য কোনো চাবিকাঠিও আছে। আন্তরিক চেষ্টা আর ভালো করা ও সাফল্যের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষার কি কোনোই মূল্য বা ভূমিকা নেই? এবার মাশরাফির মুখে খানিক অন্য কথা, অবশ্যই আছে। প্রচেষ্টাটা খুব বড়। শুধুমাত্র ভাগ্যের ওপর বসে থাকলে চলবে না। আপনি চেষ্টা করলেন না; কিন্তু লাকের ওপর বসে থাকলেন, তাহলেতো আর হবে না। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু দিন শেষে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে কিংবা যেকোনো ভালো কিছু করতে হলে ভাগ্যের আনুকূল্য অবশ্যই লাগে। আমি এটাই বিশ্বাস করি। আমরা সেমিফাইনাল থেকে অন্যরকম চেহারায় ছিলাম। কারণ, আমাদের ভেতরে ওই ক্ষুধাটা ছিল। আমরা মাঠে গিয়ে কিছু করতে চাই। আমাদের প্রতিটি ম্যাচই শেষ ম্যাচ ছিল। ওই জিনিসটা সেমিফাইনালের শুরু থেকেই আমাদের মাথায় কাজ করেছে।
আজকের ফাইনালে জয়ের রূপকার গেইল। মাশরাফি ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, এ বছর রংপুর রাইডার্সের সাথে চুক্তির পর তিনি প্রথমেই গেইলকে আনার কথা বলেছিলেন। তার মনে হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখনো গেইল সেরা। তার দিনে বিশ্বের যেকোনো বোলিং চুরমার হয়ে যায়। যাবেও। তাই মাশরাফি আশায় ছিলেন, গেইল সময়মতো খেলে দিলেই সাফল্য ধরা দেবে। তবে গেইল ইলিমিনেটর রাউন্ড এবং ফাইনালে এত ভালো খেলবেন, ছক্কার বৃষ্টি বইয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষ বোলিংকে দুমড়ে-মুচড়ে এভাবে ম্যাচ জেতাবেন- ঠিক এতটা না ভাবলেও তার ধারণা ছিল গেইল জ্বলে উঠলে প্রতিপক্ষর জয়টা কঠিন হয়ে যাবে।
কিন্তু জায়গামতো গেইল তার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছেন। এ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের এক জোড়া সেঞ্চুরিতেই আসলে রংপুর চ্যাম্পিয়ন। তাই মাশরাফির খুশির মাত্রা বেশি। খুব ভালো লাগছে। রংপুরে যখন সাইন করি তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল, দলটা যেন সেমিফাইনাল খেলে। অনেক কষ্ট করে সেমিফাইনালে উঠতে হয়েছে। তখনই ফ্র্যাঞ্চাইজিরা খুশি ছিলেন।
কিন্তু আমরা জানতাম আমাদের দুই তিনজন বড় খেলোয়াড় আছেন। তারা যদি ম্যাসিভ ড্যামেজ (প্রতিপক্ষ বোলিংকে ধ্বংস করে) করতে পারে তাহলে অন্য দলের জেতা কঠিন। জায়গামতো গেইল, চার্লস আর ম্যাককালাম ঠিকই জ্বলে উঠেছেন। আমরা যা চাচ্ছিলাম তারা সেটাই করে দেখিয়েছে।’
ফাইনালে টস হেরে খুশি ছিলেন মাশরাফি। এমনিতেই নানা সংস্কার মানেন। তার একটি হলো টস হারা। তার নিজের অনুভব ও উপলব্ধি, টস হারলে সেদিন পারফরমেন্স ও ফল নাকি ভালো হয়। আর মঙ্গলবারের ফাইনালে টস হারাটাকে সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহিত করে মাশরাফি বলেন, ‘আমি সংশয়ে ছিলাম। তাই সব সময় চেয়েছি টস হারতে। টস হারাতে ভালো হয়েছে। টস হারলে আমার ভেতর থেকে একটা ফিলিংস আসে।’
এমন সাফল্যের পর কেউ কেউ ভাবছেন কি জানি মাশরাফি বুঝি আবারো জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফিরবেন। সে সম্ভাবনাকে নাকচ করে মাশরাফি বলে দিলেন, ‘প্রথমত কামব্যাকের কথা চিন্তা করছি না। দ্বিতীয়ত আমার আজে-বাজে জিদ নেই। আমি যখন বিপিএল খেলছি, তা টিভিতে অনেক মানুষ দেখেছ। আমি সব সময় চেষ্টা করি, আমি যেটা খেলি, যেখানেই খেলি আমার শতভাগ দিতে। কত দূরে কি হবে, তা পরিকল্পনা করি না।
জাতীয় দলের হয়ে আর না খেললেও বিপিএলের মতো আসরগুলো ঠিকই খেলবেন। কেন খেলবেন? তার ব্যাখ্যাও আছে। মাশরাফি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি খেলব না কেন। সত্যি করে বলছি, আমি এখানে খেললে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছি। আমারও তো পরিবার আছে। বিপিএলে খেলার সামর্থ্য আমার আছে। বিপিএল ও ঢাকা লিগ অবশ্যই খেলব। আর পাশাপাশি এখন একটাই ফরম্যাট খেলছি। আমার জন্য অনুশীলন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ম্যাচ অনুশীলন যদি না করতে পারি তাহলে একেবারে খেলাটা কঠিন। আমি যতটুকু সুযোগ পাই সেটা আমার জন্য ভালো। দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে দুটি চারদিনের ম্যাচ খেলেছি। আমি চেষ্টা করেছি আমার সেরাটা দিয়ে খেলার।
এআরবি/আইএইচএস/বিএ