গেইলকে ঠেকাতে কুমিল্লার ট্রাম্পকার্ড মুজিব জাদরান

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৭

অধিনায়ক তামিম ইকবাল আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাফল্যের জিয়নকাঠি কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের হাতে। ২০ নভম্বের রাতে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৪ উইকেটে হারানোর পর প্রেস কনফারেন্সে কথা বলতে এসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল বলে বসেন, ‘কোচ সালাউদ্দীন স্যার আমাদের যা যা প্ল্যান করে দেন, আমি তা মাঠে বাস্তব রূপ দেয়ার চেষ্টা করছি। তাতে সাফল্যও ধরা দিচ্ছে।’

কুমিল্লার অধিনায়ক এমন কথা বলতেই পারেন। দল সাজানো থেকে শুরু করে, বোলার ব্যবহার ও ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করা- সব জায়গায় অন্যরকম মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন কুমিল্লার কোচ সালাউদ্দীন।

কখন কোথায় কাকে কোন দলের কোন বাঘা পারফরমার কাজে লাগাতে হবে- সে কৌশলটা তো ভালোই ঠিক করতে পারছেন সালাউদ্দীন। আর তাই তো প্রথম পর্বে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাঁ-হাতি ক্রিস গেইলের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে সালাউদ্দীন কার্যকর অস্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন আনকোরা মেহেদি হাসানকে।

প্রধানতঃ ব্যাটসম্যান। পরে অফস্পিনার মেহেদি অফস্পিন বোলিংও করেন। তাকে দুদিন বলে-কয়ে প্রস্তুত করেছেন গেইলের বিপক্ষে বল করতে। নিজের দিনে গেইল ভয়ঙ্কর। যে কোন বোলিং শক্তিকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন; কিন্তু ডানহাতি অফস্পিনারের মাপা ও সুনিয়ন্ত্রিত ডেলিভারির বিপক্ষে বিগ হিট নিতে তার একটু হলেও সমস্যা হয়।

এটা মনগড়া ব্যাখ্যা নয়। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সে কথাই জানাচ্ছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশে খেলতে এসে জাতীয় দলের তখনকার অফ স্পিনার সোহাগ গাজীর বলে স্বাচ্ছন্দে খেলতে পারেননি গেইল। উত্তাল উইলোবাজি থামিয়ে ভয়ঙ্কর গেইলকে রীতিমত বশ করে ফেলেছিলেন সোহাগ গাজী।

তা দেখেই হয়ত এবার ছক কষে মেহেদি হাসানকে উদ্বোধনী বোলার হিসেবে ব্যবহার করা। আর তাতে সাফল্যও ধরা দিয়েছে। ওই আনকোরা অফ স্পিনারেরর করা প্রথম ওভারে নিশ্চিত লেগবিফোর উইকেটের হাত থেকে বেঁচে যান গেইল।

তবে আরেক বিধ্বংসী উইলোবাজ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মূল্যবান উইকেট ঠিকই জমা পড়ে মেহেদির পকেটে। রংপুর রাইডার্সের সাথে প্রথম সাক্ষাতে কুমিল্লার জয়ের নায়ক বনে যান ওই অকেশনাল অফ স্পিনার মেহেদি।

এবার আবার রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচ। কাল শনিবার আবার সালাউদ্দীনের শিষ্যদের সামনে টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটের দুই ভয়ঙ্কর উইলোবাজ গেইল-ম্যাককালাম। এবার কি অস্ত্র ব্যবহার করবেন সালাউদ্দীন? আবারো মেহেদির অফস্পিন? নাকি নতুন কোন ‘গ্যাম্বল’? সবার না হোক কারো কারো মাথায় এ প্রশ্ন কিন্তু উকি-ঝুঁকি দিচ্ছে।

শুধু রংপুর ভক্তদের কথা বলা কেন? আগামীকাল রংপুর-কুমিল্লা ম্যাচে ভিক্টোরিয়ান্সদের রণকৌশলের কথা ভাবতে গেলে প্রথমই চলে আসছে গেইল ও ম্যাককালামকে আটকানো প্রসঙ্গ?

শনিবারের ম্যাচে কোচ সালাউদ্দীনের কৌশল ও লক্ষ্য-পরিকল্পনার আগাম খবর জানতে গিয়ে মিললো এক নতুন তথ্য। আগামী কালের ম্যাচেও থাকছে এক নতুন চমক। এবার গেইল আর ম্যাককালাম ঝড় থামাতে কুমিল্লা সালাউদ্দীনের নতুন অস্ত্র, ‘মুজিব জাদরান।’

আফগান যুব (অনুর্ধ্ব-১৯) দলের অফস্পিনার। মাত্র ১৬ বছর ২৪৮ দিনের ওই আফগান কিশোরের বোলিং দেখে বিমোহিত কোচ সালাউদ্দীন। তাকে ঠিক প্রথাগত অফস্পিনার মানতে নারাজ কুমিল্লার কোচ।

তার সম্পর্কে জানাতে গিয়ে সালাউদ্দীন বলেন, ‘ঠিক প্রথাগত অফস্পিনার নন ওই আফগান কিশোর। অফ স্পিন করার পাশাপাশি কিছু দুসরা ও অভিনব ডেলিভারি বের হয় তার হাত থেকে। অফ স্পিনার হিসেবে টার্ন করানোর ক্ষমতা প্রচুর। এর বাইরে স্টক ডেলিভারিও একাধিক। যা যে কোন ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেবার জন্য যথেষ্ঠ। কোন ডেলিভারি কোন দিকে ঘুরবে, কি হবে অফস্পিন, দুসরা নাকি অন্য কিছু- বোঝা কঠিন। যা আমি নিজে নেটের পিছনে দাঁড়িয়েও ঠাউরে উঠতে পারিনি।’

বলার অপেক্ষা রাখে না, আফগানিস্তানের অফস্পিনার বলেই হয়ত মুজিব জাদরানের বোলিং কারিশমার কথা সেভাবে জানে না ক্রিকেট বিশ্ব। না হয় গত এক বছরেরও কম সময় তার বলে কুপোকাৎ পাকিস্তান , বাংলাদেশ ও নেপাল যুব দলের ব্যাটসম্যানরা।

জানেনই তো নিশ্চয়ই বাংলাদেশ যে এই গত অক্টোবর মাসে আফগানিস্তান যুব দল (অনুর্ধ্ব-১৯) সিরিজ হেরেছে। হেরেছে না বলে নাস্তানাবুদ হয়েছে বলাই যুক্তিযুক্ত হবে। ৪-১‘এ সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ যুব দল। সেটা মূলতঃ মুজিব জাদরানের অসাধারন অফ স্পিন বোলিংয়ের জবাব দিতে না পারার কারণেই।

সেই সিরিজে সিলেটে এক ম্যাচে বাংলাদেশ যুব দলের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১৯ রানে ৭ উইকেট দখল করেছেন এই মুজিব জাদরান। ৪ অক্টোবর ৭ উইকেট পাওয়া মুজিব বাংলাদেশের বিপক্ষে + পাঁচ ম্যাচের সিরিজে মোট ( ৪/২২+৩/২৩+১/১০+৭/১৯+২/২৪) ১৭ উইকেট দখল করেন।

এ ছাড়া এশিয়া যুব কাপের পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ রানে ৫ উইকেট আর সেমিতে নেপালের বিপক্ষে ৬ উইকেট দখল করে হৈ চৈ ফেলে দেন। সেই মুজিব জাদরান এখন কুমিল্লা শিবিরে। সব কিছু ঠিক থাকলে হয়ত কাল মাঠে নামবেন। দেখা যাক সালাউদ্দীনের নতুন অস্ত্র কতটা কাজে দেয়?

এইতো সবে শেষ হওয়া এশীয় যুব ক্রিকেটে মুজিব জাদরানের অভিনব অফস্পিন খেলতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে উঠেছেন ভারত ও পাকিস্তান যুব দলের ক্রিকেটাররা।

এআরবি/আইএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।