‘আরচারির মাশরাফি’ মামুনের ফিরে আসা

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে তার দেখা হয়না বহুদিন। একটু পেছনে তাকিয়ে আবুল কাশেম মামুন বললেন, “সেই ছোটবেলায় মাশরাফির সঙ্গে দেখা হয়েছে। এখন তো তার সঙ্গে দেখা হওয়া কস্টকর। ছুটিতে এসে যখন বাড়িতে ফুটবল খেলে তখন মাশরাফির সঙ্গে দেখা হয়। তবে আমাদের দলের সবাই কিন্তু আমাকে মাশরাফি বলেই ডাকে। তাদের কাছে আমি ‘আরচারির মাশরাফি’।”

এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের কম্পাউন্ড পুরুষ এককের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে বলতে গিয়ে নড়াইলের মামুন ফিরে গিয়েছিলেন অতীতে। পাশে দাঁড়ানো জাতীয় আরচারি দলের প্রধান কোচ নিশিথ দাস মামুনকে দেখিয়ে বলছিলেন সে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।

এশিয়ান আরচারিতে সব ভরসার কেন্দ্রে ছিলেন রোমান সানা। মঙ্গলবার রোমান রিকার্ভ এককের শেষ ষোল থেকে বিদায় নিলে বাংলাদেশের পতাকাটা ধরে রেখেছেন মামুন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। যদিও সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাকে মোকাবিলা করতে হবে ভারতের অভিষেক ভারমাকে। তবে মামুন আত্মবিশ্বাসী ‘আমি পারবো।’

নড়াইলের ছেলে মাশরাফি, মামুনও তাই। দুই জনের বাড়ির মাঝে দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার। মাশরাফি ক্রিকেটের অধিনায়ক, মামুন আরচারি দলের। কম্পাউন্ডে মামুন সেরা আরচারও। তাই তো তার সতীর্থরা সব সময় মামুনকে ডাকেন ‘আরচারির মাশরাফি’ বলে।

মামুন কী ভেবেছিলেন এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবেন? ‘আমার একটা স্বপ্ন ছিল। তবে ভাবতে পারিনি যে আমার এমন রেজাল্ট হবে। প্র্যাকটিসে যে স্কোর করেছি তার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে এখানে। শেষ ষোলতে উঠেছিলাম ১৫০ এর মধ্যে ১৪৯ স্কোর করে। দেশের কোনো আরচার এ স্কোর আগে করেনি। আমি নিজেও বছরে এক দুইবার ১৪৫ স্কোর করেছি। যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমার টার্গেট ছিল ১৪৭, ১৪৬ স্কোর করা। তাহলে অবশ্যই ম্যাচটি জিতব। প্রতিযোগিতায় করেছি তার চেয়ে অনেক ভালো’- কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার পর বলেন আরচারির ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।

এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের পতাকা এখন যার হাতে সেই মামুনের আরচারিতে আসার গল্পটা জানা যাক তার কাছেই, ‘২০০৮ সালে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজ মাঠে আরচারির যুব ক্যাম্প হয়েছিল। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা সামনে রেখে কি খেলা ঠিক হবে? প্রথমে এটা ভেবেছি। আবার ভাবলাম প্র্যাকটিস যেহেতু বাসার সামনে। খেলি না, দেখি কী হয়। অংশ নিয়ে ক্যাম্পে প্রথম হয়েছিলাম। নূর আলম স্যার আমাকে বাছাই করেন।’

এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কম্পাউন্ড এককে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা মামুন প্রথমে খেলতেন রিকার্ভে। ‘নতুন ইভেন্ট কম্পাউন্ড আসার পর কোচকে বললাম এ ইভেন্ট খেলতে চাই। ২০০৯ সালে বিকেএসপিতে গ্রাঁ প্রিতে কম্পাউন্ড টিমে দলগত ব্রোঞ্জ পাই। এরপর দিল্লিতে ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে ফিটা গোল্ড অ্যাওয়ার্ড পাই জুনিয়রে সেরা স্কোর করার কারণে’-বলেন মামুন।

২০১০ সালে ব্যাংককে গ্রাঁ প্রি এবং ২০১১ সালে ইতালি বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারায় খেলাই ছেড়েদিয়েছিলেন মামুন। ‘লেখাপড়া আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে খেলা ছেড়ে দেই। বর্তমানে আমি যশোর এমএম কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র। সর্বশেষ বাংলাদেশ গেমসে রুপা পেয়েছিলাম ব্যক্তিগত ইভেন্টে। তারপর চার বছর গ্যাপ। এবার মাত্র এক বছর ক্যাম্পে ছিলাম। ফিরে এসেই চ্যাম্পিয়নশিপ খেলছি’- আরচারি ছেড়ে দিয়ে আবার ফিরে আসার গল্প বলছিলেন মামুন। ফেরাটা তার দুর্দান্তই বটে।

মামুনের বাবা হোসেন আলী বন বিভাগে চাকরি করতেন। এখন অবসরে। বাড়ির সামনে নার্সারি আছে। সেই ব্যবসা এবং ছেলের আনসারের ভাতা দিয়ে সংসার চলে। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে মামুন ছাড়া কেউ নেই খেলাধুলায়। তবে ‘আরচারির মাশরাফি’র চাকুরি স্থায়ী হয়নি আনসারে। ২০১১ সালে এ সংস্থায় যোগ দিলেও সৈনিক হিসেবে থাকতে চাননি। তবে এশিয়ান আরচারির কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর আনসার থেকে যোগ্যতা অনুসারে তাকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

আরআই/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।