দম ফেলার ফুরসত নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শ্রমিকদের
ঈদে নতুন জামার পাশাপাশি নতুন জুতা এনে দেয় বাড়তি আনন্দ। তাইতো ছেলে-বুড়ো সবারই ঈদে নতুন জুতা যেন চাই ই চাই। আর এই ঈদকে কেন্দ্র করে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় তিন শতাধিক কারখানার ১০ হাজার পাদুকা শ্রমিক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎপাদিত এসব জুতা অত্র অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্ভাবনাময় এই পাদুকা শিল্পকে আরো বিস্তৃত করার পাশাপাশি বিদেশে পাদুকা রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সর্বপ্রথম ১৯৬৩ সালে ভারতের পাটনার মাহমুদ আলী নামের এক ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুমারশীল মোড়ে একটি পাদুকা কারখানা স্থাপন করেন। ঈগল সুজ নামে ওই কারখানায় ১০/১২ জন শ্রমিক কাজ শুরু করেন। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একের পর এক গড়ে ওঠে পাদুকা কারখানা। তুলনামূলকভাবে লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় এ শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উদ্যোক্তারা নিত্য-নতুন গড়ে তুলছেন পাদুকা কারখানা। আর এতে করে প্রতি বছরই কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে এসব পাদুকা কারখানায় জেলার অসংখ্য বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পশ্চিম মেড্ডা, পীর বাড়ি বাস স্ট্যান্ড, সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলী বাজার, ভাটপাড়া, রাজঘর, সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর ও তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের অষ্টগ্রামে তিন শতাধিক পাদুকা কারখানা রয়েছে। এসব পাদুকা কারখানায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।
এসব কারখানায় আধুনিক ডিজাইন, মানসম্মত, টেকসই ও রুচিশীল জুতা তৈরি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতার বাজার গড়ে উঠছে। লালা, রক্সি, জিপসি, সিটি, ইসপিসহ নানা নামের আরামদায়ক জুতা এখন ছেলে-বুড়োসহ সব বয়সী মানুষের প্রথম পছন্দ।
এদিকে প্রতি বছর ঈদ মৌসুম এলেই এ অঞ্চলের পাদুকা শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ঈদকে কেন্দ্র করে এখন দিন-রাত একযোগে জুতা তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা।
সরেজমিনে গত শুক্রবার দুপুরে কয়েকটি পাদুকা করাখানা ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা জুতা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের যেন একটু দম ফেলারও ফুরসত নেই। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জুতা তৈরির কাজ। এসব জুতা পাইকারদের মাধ্যমে হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের পায়ে।
কয়েকজন পাদুকা কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জাগো নিউজকে জানান, তাদের উৎপাদিত জুতা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া রাজধানী ঢাকার অভিজাত কয়েকটি মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উৎপাদিত জুতা।
এব্যাপারে জেলা পাদুকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি কাজী শফিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমাদের ব্যবসা ভালো। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নিতে আমরা সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। আমাদেরকে যদি ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ, বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে যদি কারখানার কারিগরদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাদুকা শিল্পের মানোন্নয়নের পাশাপাশি বিদেশে জুতা রফতানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এমজেড /এমএস