বাংলাদেশে হিজড়াদের অধিকার


প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ০২ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশে হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার ও সমাজে তাদের অবস্থান নিয়ে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসে তাহমিমা আনামের একটি নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি এই লেখিকা ও ঔপন্যাসিকের ওই নিবন্ধটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
চলতি বছরের ৩০ মার্চ বাংলাদেশি ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে ইসলামি মৌলবাদীরা ঢাকার রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় হাতে-নাতে এক ঘাতককে ধরে ফেলে লাবণ্য নামের এক হিজড়া। তার এই সাহসিকতার কারণে পরবর্তীতে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত আরো দু`জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। সে সময় লাবণ্যের এই সাহসিকতার জন্য দেশজুড়ে তুমুল প্রশংসা শুরু হয়। কিন্তু একই সঙ্গে লাবণ্য প্রশ্ন তোলেন কবে হিজড়া সম্প্রদায়কে দেশের অন্যান্য নাগরিকের ন্যায় সমান চোখে দেখা হবে।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার হিজড়া সম্প্রদায়কে দেশের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। লাবণ্যের ওই প্রশংসনীয় কাজের পর সরকার হিজড়াদের দেশের পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে হিজড়াদের জন্য একটি ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই হিজড়া সম্প্রদায়কে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সবক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টে তৃতীয় লিঙ্গের এসব ব্যক্তিকে `হিজড়া` লিখতে হয়। তৃতীয় লিঙ্গের ধারণা নিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মে বেশ বিতর্ক রয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক রেকর্ডও রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে যৌনতা সম্পর্কিত সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এখনো ব্রিটিশ আইনে বিচার করা হয়ে থাকে।

তাহমিমা আনাম প্রবন্ধে আরো বলেন, হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকদের নিজস্ব কিছু নীতি-নৈতিকতা রয়েছে। যেটা দেখা যায় ওয়াশিকুরের খুনিকে হাতে-নাতে ধরার পর। কেননা সে সময় লাবণ্য জানায়, সে ওই ঘটনা সম্পর্কে তার গুরু স্বপ্না হিজড়ার অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারবে না।

বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের এসব লোক তাদের গ্রামে বাবা-মা’র সঙ্গে বসবাস করতে পারেন না। আর এটি হয়ে থাকে মূলত দারিদ্রের কারণে। যৌনতা নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও এর জন্য দায়ী। বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি উত্তরাধিকার নিয়ে ব্রিটিশ আইন বাতিল করেছে।

বাংলাদেশে হিজড়ারা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে পরিচিত হতে চায় না। কেননা তারা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে জীবন-যাপন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে হিজড়াদের পরিচয় কঠোর পুরুষ এবং নারীবাদী ধারণার বাইরে এখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কেননা পুরুষ এবং নারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে তাদের কঠোর মনোভাব পোষণ করে থাকে।

নিবন্ধে তাহমিমা আনাম আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে হিজড়ারা একজন সাধারণ নাগরিকের ন্যায় তাদের অধিকার পাবেন। এছাড়া সরকার লাবণ্যকে ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের এই উদ্যোগ খুব ভালো ফল বয়ে আনবে না যদি তাদেরকে `হিজড়া` বিশেষণে ডাকা হয়।

এসআইএস/আরএস/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।