বিপিএলে ঢাকাই রাজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

বিপিএল মানেই কী তবে ঢাকার রাজত্ব? এবারেরটা বাদ দিলে বিপিএলের মোট চারটি আসর মাঠে গড়িয়েছে। এর মধ্যে একবারই কেবল ঢাকার বাইরে শিরোপা গিয়েছে। ২০১৫ সালে মাশরাফির নেতৃত্বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স জিতেছিল বিপিএলে শিরোপা। এছাড়া বাকি তিনবারই বিপিএল শিরোপা থেকেছে ঢাকায়। প্রথম দু’বার ঢাকা গø্যাডিয়েটর্স নামে। গতবার জিতেছে ঢাকা ডায়নামাইটস নামে। প্রথম দু’বার মাশরাফির নেতৃত্বে। গতবার জিতেছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে।

ব্যাক্তি বাদ দিলে বিপিএলে সবচেয়ে সফল কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনটি বিপিএল শিরোপাই উঠেছে ‘অধিনায়ক’ মাশরাফির হাতে। কিন্তু ব্যাক্তিগত ণৈপুন্যেও চেয়ে বিপিএল এখন হয়ে পড়েছে সার্বজনীন। দলীয় নৈপুন্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজি। নির্দিষ্ট কেউ প্রতিটি ম্যাচে দলকে জিতিয়ে দিচ্ছে না।

চলতি বিপিএলে এখনও পর্যন্ত হওয়া ২০ ম্যাচের মধ্যে ১৮ ম্যাচেই ফল হয়েছে, দুটি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। বিজয়ী দলের নির্দিষ্ট একক কোনো পারফরমার নেই, যার হাত ধরে প্রতিটি ম্যাচে জিতে যাচ্ছে দলগুলো। এমনকি, খাঁটি সত্য কথা হলো- এখনও পর্যন্ত কোনো একক নেতৃত্বের ক্যারিশমা দিয়েও জিততে পারেনি কোনো দল। বিজয়ী দলের জয়ে কেউ না কেউ একদিন দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন এবং দলকে জয় এনে দিচ্ছেন।

তবে চূড়ান্ত সাফল্যের মালা গলায় তুলে ধরতে হলে কিংবা যে দলটি চূড়ান্ত সাফল্য পাবে, সেই দলটিতে অবশ্যই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। গত ২০ ম্যাচে সেই ধারাবাহিকতা দেখাতে পেরেছে কেবল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস। পয়েন্ট টেবিলের অবস্থানই নয় শুধু, পারফরম্যান্সের নিরিখেই বলতে গেলে এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন সাকিব আল হাসানের দলই। এরপর রয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অবস্থান।

প্রথমে আসা যাক পয়েন্ট টেবিলের অবস্থানের বিচারে। এখনও পর্যন্ত ৬ ম্যাচ খেলে ঢাকার জয় চারটিতে। দুর্ভাগ্য তাদের। একটি ম্যাচ ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। এই ৬ ম্যাচে ঢাকার পয়েন্ট ৯। শীর্ষেও রয়েছে তারা। রানরেটও ঢের বেশি। ২.২৯১। এত বেশি রান নিয়ে এগিয়ে থাকা সত্যিই স্বস্তিদায়ক।

dhaka

এবার আসা যাক দলটির পারফরম্যান্সে। উদ্বোধনী ম্যাচেই সিলেট স্টেডিয়ামে তারা মুখোমুখি হয়েছিল স্থানীয় দল সিলেট সিক্সার্সের। উদ্বোধনী ম্যাচ, স্থানীয় দর্শকদের চাপ- যে কারণেই হোক হেরে গিয়েছিল ঢাকা। বলা যায় বিপিএলের এবারের আসরে প্রথম ম্যাচেই চমক সৃষ্টি হলো। অথচ, দলটিতে তারকার অভাব নেই। সাকিব আল হাসান তো আছেনই। সঙ্গে এভিন লুইস, কুমার সাঙ্গাকারা, কাইরন পোলার্ড, মোসাদ্দেক হোসেন, ক্যামেরন ডেলপোর্ট, আদিল রশিদ, আবু হায়দার রনি।

দ্বিতীয় ম্যাচেই অবশ্য খুলনা টাইটান্সকে পেয়ে জয়ের ধারায় ফিরেছে ঢাকা। চলতি আসরের সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছিল তারা ওইদিন। এভিন লুইস, ক্যামেরণ ডেলপোর্ট এবং কুমার সাঙ্গাকারা জ্বলে উঠেছিলেন সেদিন। সিলেট থেকে ঢাকায় আসার পর নিজেদের আসল চেহারাটাও যেন ধীরে ধীরে বের করতে শুরু কওে ঢাকা ডায়নামাইটস। দলটির শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পেলো পাকিস্তানি বুমবুম অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদিকে পেয়ে। নিজের প্রথম ম্যাচে বলতে গেলে সিলেট সিক্সার্সকে একাই হারিয়ে দিলেন তিনি। ১২ রানে ৪ উইকেটের পাশাপাশি ১৭ বলে ৩৭ রান। ঢাকার জয়ে রাখল বিশাল অবদান।

পরের ম্যাচে ঢাকার সামনে আবারও খুলনা টাইটান্স। এবারও উড়ে গেল খুলনা। এদিন ঢাকার হয়ে জ্বলে উঠলেন কাইরন পোলার্ড। ১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা যখন চরম হতাশা উপহার দিচ্ছিল, তখন জহুরুল ইসলাম অমি (৪৫) এবং কাইরন পোলার্ড (৫৫) মিলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। ২৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন পোলার্ড। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে পরের ম্যাচটি ভেসে গেলো বৃষ্টিতে।

dhaka

এরপর শনিবার ঢাকা ডায়নামাইটস মাঠে নামলো রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে। আবারও ২০০ প্লান উপহার দিল ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। এভিন লুইসের সঙ্গে এদিন জ্বলে উঠলেন কাইরন পোলার্ড। লুইস করলেন ৬৪ রান। পোলার্ড অপরাজিত থাকলেন ২৫ বলে ৫২ রান করে। মাঝে অল্প-বিস্তর পারফরম্যান্স করলেন সাঙ্গাকারা, আফ্রিদিরা, সাকিবরা। তাতেই দাঁড়িয়ে গেলো ২০১ রানের স্কোর। জবাবে রাজশাহী যখন ব্যাট করতে নামলো, তখন বল হাতে জ্বলে উঠলেন আফ্রিদি। আবারও নিলেন ৪ উইকেট। সঙ্গে জ্বললেন আবু হায়দার রনি, সাকিব আল হাসানরা।

এখনও পর্যন্ত ৫ ম্যাচ খেলে ২০৪ রান নিয়ে রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ঢাকার এভিন লুইস। শীর্ষে সিলেটের ওপেনার উপুল থারাঙ্গা। তার সংগ্রহ ৬ ম্যাচে ২০৭ রান। উইকেট শিকারীদের শীর্ষ ৫ জনের ২ জনই ঢাকার। শীর্ষে রয়েছেন ঢাকার পেসার আবু হায়দার রনি। ৫ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১০ উইকেট। ১০ উইকেট রয়েছে খুলনার পেসার আবু জায়েদ রাহীরও। ঢাকার শহিদ আফ্রিদি ৩ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৯ উইকেট। সুনিল নারিন ৬টি, সাকিব আল হাসান নিয়েছেন ৫ উইকেট।

ঢাকার সমর্থকদের জন্য সুখবর, দলটিতে যোগ দিয়েছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। বিপিএলে যে সত্যি সত্যি মাঠ কেঁপে উঠবে এবার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আবারও ঢাকার মাথায় উঠছে বিপিএলের মুকুট, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।

ঢাকার পর এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দলটির নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে প্রথম তিন ম্যাচে খেলতেই পারেননি। পরের দুই ম্যাচ খেলেছেন। ৫ ম্যাচ খেলে কুমিল্লা জিতেছে ৪টিতে। পয়েন্ট ৮। তালিকায়ও তারা দুই নম্বরে। কুমিল্লা হেরেছে কেবল, সিলেট পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সের কাছে। এরপর চিটাগং ভাইকিংস, রাজশাহী কিংস, আবারও চিটাগং ভাইকিংস এবং সর্বশেষ তারা হারিয়েছে তারকাভর্তি দল রংপুর রাইডার্সকে।

dhaka

ব্যাক্তিগত সাফল্যের এই দলটির খেলোয়াড়রা কম পিছিয়ে নেই। ইমরুল কায়েস নিয়মিত পারফরম্যান্স করছেন। সঙ্গে ক্যারিবীয় মিডল অর্ডার মারলন স্যামুয়েলস, ইংল্যান্ডের জস বাটলাররা নিয়মিত রান করেই যাচ্ছেন। লিটন কুমার দাসও কম যাচ্ছেন না। মাঝারিমানের ইনিংস খেলছেন প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই। যা জয়ের ক্ষেত্রে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

বোলারদের ক্ষেত্রে কুমিল্লা ভাগ্যবান, তারা পেয়েছে আফগান স্পিনার রশিদ খানকে। নিয়মিতই দুর্দান্ত বোলিং করে যাচ্ছেন তিনি। রয়েছেন পেসার আল আমিন হোসেন। তরুণ অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। শেষ ম্যাচে যোগ হয়েছেন অফ স্পিনার মেহেদি হাসান। সবচেয়ে বড় কথা, কুমিল্লা দলটির শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকজন পাকিস্তানি। আগের ম্যাচেই তারা যোগ দিয়েছেন। শোয়েব মালিক, হাসান আলি, ফাখর জামানরা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন করে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বাকি দলগুলোর মধ্যে খুলনা টাইটান্স, রাজশাহী কিংস এখনও জ্বলে উঠতে পারেনি ঠিক মত। সিলেট সিক্সার্স প্রথম তিন ম্যাচে উড়েছিল। পরের তিন ম্যাচ হেরে এখন রয়েছে ব্যাকফুটে। ঢাকাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত দল রংপুর রাইডার্স। মাশরাফির নেতৃত্বাধীন দলটিতে তারকার ছড়াছড়ি। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, ক্রিস গেইল, রবি বোপারা, লাসিথ মালিঙ্গা, থিসারা পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, শাহরিয়ার নাফীস, রুবেল হোসেন, সোহাগ গাজী। বলতে গেলে তারাভর্তি টাইটানিক। কিন্তু তারাই বার বার ডুবছে। পয়েন্ট টেবিলে রংপুর রয়েছে একেবারে তলানীতে। যদিও খেলেছে মাত্র ৪ ম্যাচ। জিতেছে মাত্র ১টিতে। পরাজয় ৩টিতে। পয়েন্ট মাত্র ২। পরের ম্যাচ থেকে কী ঘুরে দাঁড়াতে পারবে মাশরাফি, গেইল, ম্যাককালামদের দলটি? 

বিপিএলের পয়েন্ট তালিকা

দল

ম্যাচ

জয়

হার

ফল হয়নি

পয়েন্ট

রান রেট

ঢাকা ডায়নামাইটস

২.২৯১

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

০.৮৯১

খুলনা টাইটান্স

-০.১৩২

সিলেট সিক্সার্স

-০.৭২২

রাজশাহী কিংস

-০.৮৭৯

চিটাগং ভাইকিংস

-০.৬৩৮

রংপুর রাইডার্স

-০.৫৭৪

আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।