বিদেশ সফরের নিয়ম মানছে না অনেক ক্রীড়া ফেডারেশন

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:১৯ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গেমসে অংশ গ্রহণের নামে আদম পাচারের অভিযোগ নতুন নয়। কে কখন বিদেশে যান, ফিরে আসেন কি-না তার তদারকি না থাকাতেই ক্রীড়াদলের সঙ্গে বিদেশে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ার একটা রেওয়াজ তৈরি হয়েছিল দেশে।

নানা অভিযোগের পর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিদেশে দল প্রেরণের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা তৈরি করে। বিশেষ করে যে সব খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা সরকারি আদেশ (জিও) নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা সভা-সেমিনারে যান তাদের মুচলেকা দেয়াসহ আরো অনেক শর্ত পালন করতে হয়।

কিন্তু জিও নেয়ার সময় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যতটা কঠোরতা দেখায়, ফিরে আসার পর তার ছিঁটেফোটাও থাকে না। বিভিন্ন দলের বিদেশ গমনের খবর জানা গেলেও ফিরে আসার খবর কেউ রাখে না।

তাইতো ক্রীড়া প্রশাসনের তদারকির ঢিলেমিতে আবার নানা অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের বিরুদ্ধে। অনিয়মের পরিমানটা বেশি ছোট ও অখ্যাত ফেডারেশনগুলোর বিরুদ্ধে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিদেশগামী ক্রীড়াদলকে জিও দেয়ার সময় অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেয়। সফরের ব্যয়ভার কে বহন করবে, কতদিন থাকা যাবে এবং আসার পর ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে সফরের বিস্তারিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে-এমন অনেক কিছু। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শেষের শর্তটি মানছে না বেশিরভাগ ক্রীড়া ফেডারেশন।

জাতীয় ক্রীড়া পষিদসূত্রে জানা গেছে, কোনো ক্রীড়া দল বিদেশে গেলে তারা ফিরে আসার পর সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের ওই সফরের বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়া বাধ্যতামূলক হলেও বেশিরভাগ ফেডারেশনেই এ নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে কী ফলাফল করছে, সে সফর থেকে প্রাপ্তি কী-কোনো কিছুই জানতে পারে না ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

সরকারী আদেশের গুরুত্বপূর্ণ শর্তটি উপেক্ষিত আবার চারিদিকে কানাঘুষা উঠছে খেলার নামে আদম পাচারের বিষয়টি। কারণ, যাওয়ার সময় ক্রীড়াবিদরা তাদের সব শর্ত পূরণ করে জিও নিলেও দলের সবাই ফিরছেন কি-না, কিংবা কারা ফিরলেন কারা থেকে গেলেন সেই মনিটরিংটা নেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেছেন,‘কি বলবো ভাই, জানেইতো বিভিন্ন ফেডারেশনের সভাপতি পদে কারা আছেন। তারা যখন আমাদের ফোন করে বলেন-তালিকা পাঠিয়েছি, জিওটা করে দেন, তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অবশ্য কম নজরই থাকে এসব বিষয়ে। নিজেদের ঘরটাও তারা ঠিক রাখতে পারেনা অনেক সময়। প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অনেক কোচও বিদেশ চলে যান তাদের অনমুতি ছাড়া। কখনো কখনো কিছু ডিসিপ্লিনের খেলোয়াড়রা বিদেশে যান টুর্নামেন্ট খেলতে সেটা ফেডারেশনই জানে না।

তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখন নাকি বিদেশে টুর্নামেন্ট খেলে আসার পর প্রতিবেদন দেয়ার রেওয়াজটা একটু বেড়েছে। কারণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩৯ জন ক্রীড়াবিদকে এক সঙ্গে সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রদান করায় অনেক ফেডারেশন এখন তাদের বিদেশ সফরের মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে।

কারণ প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর ওই সময় অনেক ফেডারেশন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে গিয়ে বিদেশে তাদের অর্জনের সাফাই গেয়েছিল। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তখন তাদের জানিয়ে দেয়, বিদেশ সফর করে এসে ফলাফলের প্রতিবেদন জমা দেয়ার ওপর ভিত্তি করেই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীতেও ক্রীড়াবিদদের জন্য এমন উৎসাহমূলক সংবর্ধনা ও পুরস্কার দেবেন-সে প্রত্যাশায় এখন কিছু ফেডারেশন বিদেশে টুর্নামেন্ট শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে ক্রীড়া পরিষদে। তবে যাদের উদ্দেশ্যে গলদ আছে, তারা শুধু জিও নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে। তারপর তাদের সম্পর্কে আর কোনো তথ্য থাকে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে।

নতুন করে এমন অভিযোগ ওঠায় জিও’র নিয়মকে আরো কঠিন এবং যারা বিদেশ সফর করবে তাদের ফিরে আসার পর প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করার জন্য নতুন নীতিমালা করতে যাচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও। এ নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করলেন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা।

আরআই/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।