জাপান মাতারবাড়ীতে ও চীন পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করবে
সম্প্রতি একটি মার্কিন বার্তা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপান কক্সবাজার উপকূলের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে। অপরদিকে চীনও কক্সবাজারের নিকটবর্তী সোনাদিয়া অথবা পটুয়াখালীর পায়রায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারে। এ প্রতিবেদনের শিরোনাম দেয়া হয়েছে- ‘ভারত মহাসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রতিযোগিতায় জাপান চীনকে হারিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপান ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিলো। এ প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জাপান চীনকে পরাজিত করেছে। ফলে ভারত মহাসাগরে আঞ্চলিক ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় জাপান এগিয়ে গেলো।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গ নিউজ এজেন্সির প্রশ্নের জবাবে ই-মেইলে জানিয়েছে, জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের মাতারবাড়ীতে ১৮ মিটার গভীর এ সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এটি চীনের জন্য একটি খারাপ খবর। কারণ, এ মাতারবাড়ী থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে চীন আরেকটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলো।
এ চুক্তি চীনের জন্য আরো একটি কারণে খারাপ খবর যে, দেশটি এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামরিক বন্ধন প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। চীনের মোট আমদানির ৪০ শতাংশ তেল এ অঞ্চল দিয়ে পরিবহন করা হয়। বঙ্গোপসাগরে চীন, জাপান ও ভারতের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। এ তিন দেশই কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক সুফল লাভে বঙ্গোপসাগরে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি সোনাদিয়ায় চীনের সহযোগিতায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আলোচনা এখনো চলছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হয়নি। বাংলাদেশে দুটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। একটি হচ্ছে চট্টগ্রাম অপরটি মংলা। দুটিই অগভীর সমুদ্রবন্দর। ফলে বড় জাহাজগুলো এ বন্দর দুটিতেই ভিড়তে পারে না। ছোট ছোট জাহাজে করে গভীর সমুদ্রে অবস্থানকারী এসব জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করা হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটিরই অপচয় হয়।
মাতারবাড়ীতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হতে যাচ্ছে তা ১৮ মিটার (৫৯ ফুট) গভীর হবে। ফলে বিশাল কন্টেইনার জাহাজগুলো সহজেই এ বন্দরে ভিড়তে পারবে।
সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে একটি জাপানি কোম্পানি ২০০৯ সালে সমীক্ষা সম্পন্ন করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দিকে এ বন্দর নির্মাণে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন। এক সময় তিনি চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। বিশেষ করে ২০১২ সালের পর। চীনও সোনাদিয়া প্রকল্পে সহায়তার কথা ঘোষণা করে।
পত্রপত্রিকাগুলো অনুমান করেছিলো গতবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরকালে এ ব্যাপারে একটি চুক্তি হবে। কিন্তু তা হয়নি। সে সময় চীনের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সোনাদিয়া বন্দরের ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে আরো আলোচনা চালাতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, দেশটির পরিকল্পনামন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তফা কামাল গত জানুয়ারিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ চীনকে এ কাজ দেয়ার বিরোধী।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দুটি বন্দর নির্মাণেই সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর মূলত ব্যবহৃত হবে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য কয়লা আমদানি করতে। অপরদিকে সোনাদিয়া হবে পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্রবন্দর।
এসএইচএস/আরআইপি