চারদিকে হতাশা আর বঞ্চনা : সংসদে এরশাদ


প্রকাশিত: ০৯:৫৭ এএম, ২৯ জুন ২০১৫

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, ঘাটতি শুধু বাজেটেই নয়, ঘাটতি সর্বত্র। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সব জায়গাতেই এখন ঘাটতি চলছে। চারিদিকে বঞ্চনা, চারিদিকে হতাশা। শেয়ারবাজারের ভয়াবহ দৃশ্যের কথা মনে পড়ে। এখন প্রবণতা হচ্ছে- ব্যাংক থেকে ঋণ নাও আর তা মেরে দাও। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

এরশাদ বলেন, বাজেট হচ্ছে সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। সোশ্যালিস্ট সরকারের বাজেটে তাদের দর্শন। ক্যাপিটালিস্ট সরকারের বাজেটে থাকে তাদের দর্শন। এই সরকারের দর্শন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করা। বর্তমান সরকারের দর্শন কি এই বাজেটের প্রতিফলন ঘটবে- যে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির পাঁচ শতাংশ। বিগত অভিজ্ঞতা বলে- স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থাকবে। রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন ঘটানোর মতো নির্দেশনা এই বাজেটে নাই, কারণ মোট বাজেটের প্রায় ৩০ শতাংশই ঘাটতি।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের ভয়াবহ দৃশ্যের কথা মনে পড়ে। শেয়ারবাজার হচ্ছে একটি দেশের অর্থনীতির ব্যারোমিটার। সেই শেয়ারবাজারের কী দশা! সেখানে গিয়েছিলাম। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আহাজারি শুনেছি। তাদের পুঁজি উদ্ধার হয়নি। যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের কথা ভুলে গেছি। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিলে। কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ক্যাপিটাল মার্কেট- যে তিমিরে ছিলো সেখানেই আছে। পুনঃজীবিত করা হয়নি। শেয়ার মার্কেট ধ্বংসের জন্য যারা দায়ী- যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন প্রবণতা হচ্ছে- ব্যাংক থেকে ঋণ নাও আর তা মেরে দাও। অর্থমন্ত্রী শনিবার সংসদে জানিয়েছেন, ৫৬টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এটি মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সরকারি ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। লুট হওয়া টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নেই। এবার বাজেটে সেই লুটের টাকা পূরণের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকাও লুট হবে। এটা জনগণের দেওয়া করের টাকা। এই পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাতিল করে শিক্ষা খাতে দেওয়া হোক।

বিদেশে অর্থপাচার সম্পর্কে তিনি বলেন, পত্রিকায় রিপোর্ট দেখলাম সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের অর্থপাচার ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুইস ব্যাংকে ২০১২ সালে জমা হয়েছে এক হাজার ৯৯১ কোটি। ২০১৩ সালে জমা হয়েছে তিন হাজার ১৪৯ কোটি, ২০১৪ সালে জমা হয়েছে চার হাজার ২৮৩ কোটি।  আমরা কেউ বিদেশে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারিনা। কারা এই অর্থ পাচার করে? তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিন। পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।

ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে চান? শিক্ষা ব্যতীত তা সম্ভব নয়- দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম মুছে যাচ্ছে,
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন চাপা পড়ে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে এশিয়ার ১০০ শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই।
    
এরশাদ বলেন, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। প্রতিবছর লাখ লাখ যুবক শিক্ষা শেষ করে বের হচ্ছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে। কিন্তু চাকরির সুযোগ নেই। শিক্ষিত বেকাররা টাইম বোমার চেয়েও ভয়াবহ। দেশে কতজন বেকার আছে- ১২৮ পৃষ্ঠার ভাষণের মধ্যে তার পরিসংখ্যান নাই। সরকারের লক্ষ্য থাকতে হবে জব-জব-অ্যান্ড জব ক্রিয়েশন।

তিনি বলেন, ইয়াবা-ফেনসিডিল-প্যাথেডিন-হিরোইনের বিস্তার মহামারী আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এর বিস্তার ঘটতে পারেনা। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষিত সমাজ মাদকে আসক্ত হচ্ছে। মাদকের হাত থেকে সমাজকে বাঁচাতে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। অনেক সময় আইন শৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীই এর সঙ্গে জড়িত। রক্ষক যদি ভক্ষক হয় মানুষ যাবে কোথায়।
    
তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশ কোথায়? দেশি-বিদেশি কেউতো এগিয়ে আসছে না। আস্থার সংকট। ব্যাংকে এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আইডেল পড়ে আছে। শিল্পায়নের জন্য সহায়ক পরিবেশ নাই আমি বলেছি- বাংলাদেশকে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দিতে হবে। তা শুধু যানজট নিরসনের জন্য নয়।  প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নাই।

বিচারের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, হাজার হাজার মামলা জমা পড়ে আছে। এই মামলা জট থেকে বিচার প্রার্থীরা মুক্তি পাবেন কীভাবে? Justice delayed কেবল justice denied নয় justice betrayed। আমি হাইকোর্ট বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে নিয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করেছে। যদি সেই ব্যবস্থা থাকতো- তাহলে আজ প্রধান বিচারপতিকে এই হতাশার কথা বলতে হতো না। তবে বিদ্যমান কাঠামোতেও বিভিন্ন বিভাগে সার্কিট কোর্ট বসানো যেতে পারে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের স্বার্থে বিভাগীয় শহরে সার্কিট বেঞ্চ বসানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, আমি নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চেয়েছি। বর্তমানে যে পদ্ধতি নির্বাচন হচ্ছে- তাতে কখনোই নির্বাচন বিতর্কমুক্ত ও ত্রুটিমুক্ত হবে না। প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচন পরিবর্তন করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিচ্ছি। এখন নির্বাচন কালো টাকা ও পেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে আছে।

এইচএস/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।