অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশেও থাকছেন নাসির!
প্রধান নির্বাচক ও কোচের মুখে বার বার একটি কথা- ‘আমরা উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখতে চাই।’ কী সেই উইনিং কম্বিনেশন? গোলমেলে ঠেকছে? না মোটেই গোলমেলে ঠেকার কথা নয়। এখানে টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা উইনিং কাম্বিনেশন বলতে সর্বশেষ টেস্টকে মানদণ্ড ধরছেন।
গত মার্চে কলম্বোর পি সারা ওভাল মাঠে নিজেদের শতমত টেস্টে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। সেই ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ী দলকে ধরে রাখতেই উৎসাহী চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এন্ড কোং।
আসুন দেখে নেই ওই অবিস্মরনীয় জয়ের স্বপ্ন সারথী ছিলেন কোন ১১ জন? স্কোরকার্ড সাক্ষী দিচ্ছে- তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও শুভাশিষ রায়।
এবার অস্ট্রেলিয়ার সাথে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য যে ১৪ জনের দল প্রথমে ঘোষণা করা হয়েছে, এই ১১ জনের ১০ ছিলেন সে তালিকায়। একমাত্র পেসার শুভাশিষ রায়ের জায়গা হয়নি সেখানে।
শুভাশিষ ১৪ জনের বাইরে। শততম টেস্ট খেলা ১০ জনের মধ্য থেকে আরও একজন থাকছেন না প্রথম টেস্টে। চোখের ইনজুরির কারণে ঝরে পড়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। শেষ মুহুর্তে বাদ দিয়ে দলে নেয়া হয়েছে মুমিনুল হককে।
ইতিহাস জানাচ্ছে, কলম্বোর পি সারা ওভালে শততম টেস্টে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানের সাহসী, তেজোদ্দীপ্ত ও কার্যকর ইনিংস খেলেছিলেন মোসাদ্দেক। কাজেই তিনি ছিলেন অটোমেটিক চয়েজ। চোখের সমস্যা না হলে অনিবার্যভাবেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশে থাকতেন এ তরুণ।
প্রশ্ন উঠেছে, মোসাদ্দেক যখন ১৪ জনের দলেই নেই, তাহলে তার জায়গায় খেলবেন কে? মুমিনুল তো টপ অর্ডারে ব্যাট করেন। তার ব্যাটিং পজিশন হয় তিন না হয় চার নম্বর। আর মোসাদ্দেক শততম টেস্টে ব্যাট করেছেন আট নম্বরে।
অবশ্য আগের দিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে বাঁ-হাতি তাইজুল না নামলে হয়ত সাত নম্বরেই খেলতেন মোসাদ্দেক। তার মানে, ধরে নেয়া যায় এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মোসাদ্দেক সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবেই বিবেচনায় ছিলেন।
তাহলে তার জায়গা যদি মুমিনুলকে খেলানো হয় তাহলে সাতে ব্যাটিং করতে হবে তাকে। যা তার পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারের সাথে বেমানান। টেস্টে মুমিনুল এখন পর্যন্ত কখনই এত নিচে ব্যাট করেননি। ২২ টেস্টে মাত্র দুটি পজিশনেই ব্যাট করেছেন কক্সবাজারের ২৬ বছর বয়সী এ যুবা।
তিন নম্বরে ১৩ বার (এক শতক ও ছয় হাফ সেঞ্চুরিতে ৮১১ রান)। আর চার নম্বরে ব্যাট করেছেন ৯ বার (তিন শতক ও পাঁচ অর্ধশতকে ৮৭৭ রান)। যে ব্যাটসম্যান তিন ও চার নম্বরে নেমে এমন অসাধারন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, তাকে কি আর মোসাদ্দেকের মত অত নিচে (সাত নম্বরে) খেলানো যায়?
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তা মনে হয় না। তাহলে মোসাদ্দেকের জায়গায় খেলবেন কে? নাসির? সম্ভাব্য সব রকম হিসেব-নিকেশ ও সমীকরণ দেখাচ্ছে নাসিরই সম্ভাব্য বিকল্প। দু’বছরের বেশি সময় আগে ২০১৫ সালের জুলাইতে। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেছিলেন নাসির।
ওই ম্যাচে তার ব্যাটিং পজিশন ছিল আট নম্বর। ১৭ টেস্টে একটি সেঞ্চুরি ও ছয় হাফ সেঞ্চুরিসহ নাসিরের সংগ্রহ মোট ৯৭১ রান। গড় ৩৭.৩৪। মোসাদ্দেকের মত নাসিরও মিডল অর্ডার। টেস্টে পাঁচ নম্বরে খেলেছেন দু’বার। সাত নম্বরে ১২ বার। আর আট নম্বরে ব্যাট করেছেন চারবার।
২০১৩ সালের মার্চে গলে শ্রীলঙ্কার সাথে একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি করা নাসির ক্যারিয়ারের প্রায় পুরো সময় নিচে ব্যাট করেছেন। সে কারণেই তাকে মোসাদ্দেকের বিকল্প ভাবা হচ্ছে। তাই ধরে নেয়া যায় মোসাদ্দেকের চোখের সমস্যায় মুমিনুল ১৪ জনে ফিরলেও আসলে ভাগ্য খুলেছে নাসিরেরই।
ঘয়তো প্রথম টেস্টে নাসিরকেই ১১ জনে দেখা যাবে। তবে অন্য একটি ইস্যুতে নাসিরের ভাগ্য ঝুলে যেতে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম যদি কিপিং করেন, তাহলে নাসির হয়ত নিশ্চিতভাবেই মোসাদ্দেকের জায়গায় দলে থাকবেন। আর মুশফিক কীপিং না করলেই বিপত্তি।
মুশফিক কিপিং না করলে সেকেন্ড কিপার হিসেবে ১৪ জনের দলে থাকা লিটন দাস অবধারিত কিপিং করবেন। তখন একাদশে নাসিরের থাকার পথ প্রায় রুদ্ধ হয়ে যাবে। কেউ কেউ হয়ত সাব্বিরের জায়গায় নাসিরকে খেলানোর কথা বলবেন, তা বলতেই পারেন; কিন্তু সাব্বির রহমান তো মাঠে শততম টেস্ট খেলেছেন।
বার বার বলা হচ্ছে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙ্গা হবে না। তাই ওই ম্যাচ খেলা কারো বাদ পড়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর সাব্বির সে খেলায় উভয় ইনিংসে চল্লিশের ঘরে (৪২ ও ৪১) রানও করেছিলেন। তাই তাকে বাদ দেবার প্রশ্নই আসে না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে মোসাদ্দেকের ক্যাটাগরির ক্রিকেটার (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান কাম অফস্পিনার) হবার কারণে সম্ভাব্য বিকল্প হলেও নাসিরের খেলা নির্ভর করছে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কিপিং করার ওপর।
মুশফিক উইকেটের পিছনে গøাভস হাতে দাঁড়ালেই নাসির ১১ জনে থাকবেন। আর মুশফিক কিপিং না করলে লিটন খেললেই নাসির ছিটকে পড়বেন বাইরে। তবে নাসিরের নিজের ও তার ভক্ত-সমর্থকদের জন্য একটি আশার খবর, শততম টেস্টে মুশফিক কিপিং করেছিলেন।
ওই সিরিজের আগে কিপিং প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শততম টেস্টে দারুণ কিপিং করেছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। দীর্ঘ সময় কিপিং করার কারণে ক্লান্তি, অবসাদ ভর করে। সে কারণেই অধিনায়ক মুশফিক চার কিংবা পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেননি। প্রথম ইনিংসে সাত নম্বর আর দ্বিতীয় ইনিংসে ছয়ে ব্যাট করেছেন।
কাজেই এবার ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট সিরিজেও হয়ত গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে দাঁড়াতে চাইবেন টাইগার অধিনায়ক। তিনি কিপিং করলেই নাসিরের ‘পোয়াবারো’। তখন তার খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে পুরোপুরি।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি