বাংলাদেশকে অবিস্মরণীয় জয় উপহার দিলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ
সাকিব সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। মাহমুদউল্লাহ অপেক্ষায়। মোসাদ্দেক এসে যেভাবে রান নিতে শুরু করে দিলেন, তাতে শঙ্কা জাগলো আর দুটি রান কী হবে না মাহমুদউল্লাহর। অবশেষে হলো, ট্রেন্ট বোল্টকে ৪৭তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পূরণ করলেন মাহমুদউল্লাহ।
মোসাদ্দেকের সামনে তো আর বাধা নেই। সুতরাং, অ্যাডাম মিলনেকে স্লিপ এবং গালির ভেতর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েই লাফ দিলেন মোসাদ্দেক। শূন্যে ঘুষি ছুঁড়লেন। অপরপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহর লাফটা ছিল আরও প্রসস্ত। শূন্যে ঘুঁষি ছুড়লেন তিনিও। ড্রেসিংরুমের সামনে তখন মাশরাফির মুখে বাঘের গর্জন।
মাশরাফির চিৎকার দেখলে মনে হবে যেন সত্যিই রয়েল বেঙ্গল টাইগার গর্জন করে চলেছে। ৫ উইকেটে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর এই স্মৃতি যে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে! ১৬ বল হাতে রেখেই অবিস্মরণীয় এক জয় পেলো বাংলাদেশ। শুধুমাত্র মাহমুদউল্লাহ আর সাকিব আল হাসানের সৌজন্যে।
এমন ব্যাটিং, এমন জয় স্বপ্নেই শুধু কল্পনা করা যায়। বাস্তবে খুব একটা ধরা দেয় না। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডকে ২৬৫ রানে বেধে রাখার পর জয়ের স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল; কিন্তু ৩৩ রানে তামিম, সৌম্য, সাব্বির এবং মুশফিক ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সমর্থকরা শুধু ভেবেছিল, কত সম্মানজনকভাবে হারা যায়!
কিন্তু টিম বাংলাদেশের পরিত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হলেন দু’জন, সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দু’জনের জোড়া সেঞ্চুরি অবিশ্বাস্য স্বপ্নকেই হাতের মুঠোয় পুরে দিলো। দু’জনের ২২৪ রানের অসাধারণ এক জুটি বাংলাদেশকে এনে দিল অবিস্মরণীয় এক জয়। সে সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের সেমির আশাও টিকিয়ে রাখলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দিলো নিউজিল্যান্ডকে।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অসাধারণ একটি জুটি। এমন একটি জুটিই প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর আশা ছিল তামিম ইকবাল দাঁড়াতে পারবেন। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৫ রান। তামিমের ওপরই ছিল সমস্ত আশা-ভরসা; কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই যখন তিনি আউট হয়ে গেলেন, তখন সে আশা পরিণত হলো শঙ্কায়।
২৬৫ রানে কিউইদের বেধে রাখার পর কী তাহলে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে না? অতৃপ্তি নিয়েই ফিরে যেতে হবে? এমনই আশা-আশঙ্কার দোলাচলে দুলতে দুলতে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা যখন সাত-পাঁচ ভাবছিল, ততক্ষণে উইকেট থেকে বিদায় নিয়ে নিলেন সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার এবং মুশফিকুর রহীমও।
৩৩ রানে চার উইকেট নাই। মহা বিপর্যয়ে বলা চলে বাংলাদেশ। এই বিপর্যয় থেকে কে রক্ষা করবে? কে দেখাবে আশা? পয়া ভেন্যু সোফিয়া গার্ডেন কী তবে আজ খালি হাতেই ফেরত পাঠাবে? সমর্থকরা যখন এসব ভাবছিলেন, তখন উইকেটে নেমে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসান।
সেই চেষ্টা থেকেই জুটিটাকে ধীরে ধীরে বড় করতে লাগলেন তারা দু’জন। শেষ পর্যন্ত সেই জুটির রান ১০০ পার হলো। হলো দেড়শ’ পার। শেষ পর্যন্ত ২০০ ও পার হলো। থামলো ২২৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে। তামিম-মুশফিকের ১৭৮ রানের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করলেন তারা।
বাংলাদেশ যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল সেখান থেকে আশার আলোও দেখাতে শুরু করে দিয়েছিলেন তারা দু’জন। বাংলাদেশ তো নিয়মিতই জেতা ম্যাচ হেরে যায়। আজ হারা ম্যাচ কী জিততে পারবেন মাশরাফিরা! এমন চিন্তা যখন উদয় হচ্ছিল, তখন শুরুতে সাকিব-মাহমুদউল্লাহ দু’জনই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকালেন। এরপর হাঁকালেন জোড়া সেঞ্চুরি।
২৫৭ রানের মাথায় সাকিব যখন ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হলেন, তখন তার নামের পাশে ১১৪ রান লেখা। বাংলাদেশও জয়ের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে। সেখান থেকে বাকি কাজ করে দিলেন মাহমুদউল্লাহ আর মোসাদ্দেক। ৫ উইকেটে জিতে গেলো বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছিল ৫ উইকেটে। এবারও বাংলাদেশ জিতলো ৫ উইকেটে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৬৫/৮(গাপটিল ৩৩, রনকি ১৬, উইলিয়ামসন ৫৭, টেলর ৬৩, ব্রুম ৩৬, নিশাম ২৩, অ্যান্ডারসন ০, স্যান্টনার ১৪*, মিল্ন ৭, সাউদি ১০*; মাশরাফি ০/৪৫, মুস্তাফিজ ১/৫২, তাসকিন ২/৪৩, রুবেল ১/৬০, সাকিব ০/৫২, মোসাদ্দেক ৩/১৩)।
বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৬৮/৫ (তামিম ০, সৌম্য ৩, সাব্বির ৮, মুশফিক ১৪, সাকিব ১১৪, মাহমুদউল্লাহ ১০২*, মোসাদ্দেক ৭*; সাউদি ৩/৪৫, বোল্ট ১/৪৮, মিল্ন ১/৫৮, নিশাম ০/৩০, স্যান্টনার ০/৪৭, অ্যান্ডারসন ০/১৯, উইলিয়ামসন ০/১৯)।
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী (১৬ বল হাতে রেখে)। ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান।
আইএইচএস