সুখস্মৃতির ভেন্যুতে কি হবে মাশরাফিদের স্বপ্নপূরণ?


প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ০৮ জুন ২০১৭

ঠিক এক যুগ আগের ঘটনা। ইংল্যান্ডে চলছিল ন্যাটওয়েস্ট ত্রিদেশীয় সিরিজ। অ্যাশেজের জন্য ইংল্যান্ড সফর করছিল তখন অস্ট্রেলিয়া। তার আগেই প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছিল ওই ত্রিদেশীয় সিরিজটির। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজের অপর সদস্য, বাংলাদেশ।

প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত হয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল। দ্বিতীয় ম্যাচে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে মুখোমুখি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার সেই দলটিতে কে ছিলেন না? প্রতিটি নাম শুনলেই মনে হবে খুব ভয়ঙ্কর। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথ্যু হেইডেন, রিটি পন্টিং, ডেমিয়েন মার্টিন, মাইকেল ক্লাব, মাইক হাসি, সাইমন ক্যাটিচ, ব্র্যাড হজ, জেসন গিলেস্পি, মাইকেল কাসপ্রোভিজ, গ্লেন ম্যাকগ্রা।

বাংলাদেশ বলে দ্বিতীয় সারির কোনো দল মাঠে নামায়নি অসিরা। পন্টিংয়ের নেতৃত্বে এই দলটিই তখন দিগ্বিজয় করে ফিরছিল। তাদের সামনে দাঁড়াতে বিশ্বের সেরা সেরা যে কোনো দলেরই বুক কেঁপে ওঠে। সে জায়গায় পন্টিংদের সামনে তখনকার বাংলাদেশ তো স্রেফ লিলিপুট।

টস করতে নামলেন রিকি পন্টিং আর হাবিবুল বাশার। টস জিতলেন রিকি পন্টিংই। উইকেট ছিল খানিকটা ভেজা। এমন উইকেটে টস জিতে ফিল্ডিংই বেছে নেন যে কোনো অধিনায়ক। কী ভেবে পন্টিং ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নিলেন। ভেবেছিলেন হয়তো, বাংলাদেশের বোলারদের সামনে পেয়ে তার ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং প্র্যাকটিসটা ভালোমত করে নিক। বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠালে ১০০ থেকে ১৫০ রানের মধ্যে অলআউট হয়ে যাবে, তখন অসিদের ব্যাটিং প্র্যাকটিসটা হবে না। যেটা হয়েছিল সিরিজের প্রথম, ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ ম্যাচে।

ভাগ্যটা বুঝি তখনই ভর করেছিল টাইগারদের কাঁধে। ব্যাট করতে নেমে অসি ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই ধুঁকছিল। মাশরাফির বলে গিলক্রিস্ট আউট হলেন শূন্য রানে। তাপস বৈশ্যর বলে পন্টিং বিদায় নিলেন ১ রানে।

ডেমিয়েন মার্টিন আর মাইকেল ক্লার্ক না দাঁড়ালে লজ্জাতেই হয়তো পড়তে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। শেষ পর্যন্ত মার্টিনের ৭৭ আর ক্লার্কের ৫৪ রানের ওপর ভর করে ৫ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়াল ২৪৯ রান। এছাড়া ম্যাথ্যু হেইডেন ৩৭, মাইক হাসি ৩১ এবং সাইমন ক্যাটিচ করেন ৩৬ রান।

cheer

এমন শক্তিশালি একটি দল বাংলাদেশি বোলিংয়ের সামনে মাত্র ২৪৯ রানে অলআউট, বিশ্বাসই হচ্ছিল না রিকি পন্টিংদের। একাদশের বাইরে থাকা অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের হতাশাভরা মুখটি এখনও ক্রিকইনফোর ওয়েবসাইটে ভেসে বেড়াচ্ছে। দারুণ চিন্তিত রিকি পন্টিংয়ের নখ কামড়ানোর দৃশ্য এখনও বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের চোখে ভাসছে।

২৫০ রানের জবাব দিতে নেমে জাভেদ ওমর, নাফিস ইকবাল আর তুষার ইমরান হতাশা উপহার দিয়েই ফিরে গেলেন ৭২ রানের মধ্যে। এরপরই মোহাম্মদ আশরাফুল এবং অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের ১৩০ রানের অনবদ্য এক জুটি। ৭২ বল খেলে সুমন করেন ৪৭ রান। ১০১ বল খেলে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংস আশরাফুলের সেই সেঞ্চুরি।

দলীয় ২০২ রানে হাবিবুল বাশার আর ২২৭ রানে মোহাম্মদ আশরাফুল ফিরে গেলেও আফতাব আহমেদ এবং মোহাম্মদ রফিক মিলে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক জয়ের বন্দরে। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো বাংলাদেশ। ক্রিকেটে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। অঘটন আর চমকের কোনো সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হলে, ২০০৫ সালের ১৮ জুন, কার্ডিফের সোফিা গার্ডেনে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে যে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল, সেটাও উঠে আসবে।

এক যুগ পর সুখস্মৃতির সেই ভেন্যুতে আবারও বাংলাদেশ। এই এক যুগে সোফিয়া গার্ডেনে পা পড়েনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি উপলক্ষে আবারও সোফিয়া গার্ডেনে নতুন এক ইতিহাসের হাতছানি। এক যুগ আগের সেই দলটির সেরা পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজাই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি এখনও খেলছেন এবং দলের অধিনায়ক। তার স্মৃতিতে উজ্জল হয়েই ধরা দিচ্ছে সেই ম্যাচে অসাধারণ জয়ের ঘটনাটি।

এবার দারুণ নাটকীয়তা নিয়ে সোফিয়া গার্ডেনে পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে হেরেছে ইংল্যান্ডের কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচে কেনিংটন ওভালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে নিশ্চিত পরাজয়ের ম্যাচটি বাঁচিয়ে দিলো বৃষ্টি। পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়ায় বাংলাদেশের ঝুলিতে জমা রয়েছে এখন এক পয়েন্ট।

এই এক পয়েন্টই এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে পারবে কি না। এ জন্য দুটি হিসেব মিলতে হবে মাশরাফিদের পক্ষে। নিউজিল্যান্ডকে এই সোফিয়া গার্ডেনে পরাজিত করতে হবে বাংলাদেশকে। পরের দিন ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে।

পারবে কি বাংলাদেশ? কিংবা ভাগ্য কি শেষ পর্যন্ত সহায় হবে বাংলাদেশের? সব কিছুই অজানা। কারণ, প্রথমে বাংলাদেশকে জিততেই হবে। না হয়, কোনো স্বপ্নই আর পূরণ হবে না। স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে বড় বাধা নিউজিল্যান্ড। মাত্র ১৫দিন আগেই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে কিউইদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফিরা। সেই জয়ের স্মৃতির সঙ্গে সোফিয়া গার্ডেনের সুখস্মৃতি মিলেমিশে কি স্বপ্ন পূরণ করবে বাংলাদেশের? অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামীকাল পর্যন্ত। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের ম্যাচটি।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।