আক্রমণাত্মক অজিদের মোকাবেলায় কী করবে টাইগাররা


প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, ০৫ জুন ২০১৭

সবাই নয়। অনেকেই বলাবলি করেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ কঠিন গ্রুপে পড়েছে। প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল ঐ কথায় যুক্তির চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করেছে। কিন্তু খেলা মাঠে গড়ানোর পর মনে হচ্ছে ঐ কথাগুলো হারে হারে সত্য।

পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার কি করুণ অবস্থা! ভারতের সঙ্গে আজহার আলী, শোয়েব মালিক আর হাফিজদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। ভারতীয়দের উজ্জীবিত আর প্রত্যয়ী ক্রিকেটের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তানিরা। বড্ড সাধারণ মানের দল মনে হয়েছে পাকিস্তানকে। মাঠে পাকিস্তানিদের রীতিমত ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা দেখে অনেকেই বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ, মহারণ আর চির প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এসব তকমা কেটে ফেলার সময় হয়েছে। ভারত খুব বেশি সমৃদ্ধ আর শক্তিশালী। যার সামনে পাকিস্তান অনেক বেশি দুর্বল, জীর্ণ-শীর্ণ। এটা এখন বড্ড একপেশে লড়াই হয়ে গেছে। আর এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা ডু প্লেসিসি , রাবাদা, মরকেল, ইমরান তাহিদের সামনে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি লঙ্কানদের। এক কথায় অসহায় আত্মসমর্পণ থারাঙ্গা, কুশল মেন্ডিস ও ডিকভেলাদের।

MJP

সে তুলনায় স্বাগতিক ইংলিশদের সঙ্গে খারাপ খেলেনি মাশরাফির দল। কেউ কেউ হয়তো বলবেন ৮ উইকেটে হার অবার ভালো পারফরমেন্স হয় কি করে? স্কোর লাইন দেখে তাই মনে হবে। তবে কঠিন সত্য হলো ক্রিকেটে স্কোর লাইনে সব সময় পারফরমেন্সের সত্যিকার চিত্র ফুটে ওঠে না। এটা সত্যি ক্রিকেটীয় হিসেব নিকেশে ৮ উইকেটে হারও বড় ব্যর্থতার নামান্তর। সে আলোকে হয়তো কেউ কেউ বলতে চাইবেন, বাংলাদেশ ভালো খেলেনি। কিন্তু ১ মে ওভালে মরগ্যান বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের পারফরমেন্সকে এক কথায় খারাপ বলার কোনই সুযোগ নেই।

বোলিং ভালো হয়নি। একজন বোলারও ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে এতটুকু সমীহ আদায় করতে পারেননি। পারলে চিত্রটা ভিন্ন হতে পারতো। শেষ ৫-৬ ওভার বাদ দিলে ব্যাটিংটা ভালোই হয়েছে। তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহীম যথেষ্ট ভালো খেলেছেন। স্বাগতিক ইংলিশদের সাজানো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বাঁহাতি ওপেনার তামিম আর মুশফিকের ১৬৬ রানের পার্টনারশিপের প্রশংসা প্রায় সবার মুখে। ডেথ ওভারে হাত খুলে রানের গতি বাড়াতে পারলে হয়তো স্কোরলাইন আরও মোটাতাজা হতো। তখন ইংলিশরা অত সহজে হেসে খেলে নাও জিততে পারতো।

এছাড়া একাদশ সাজানোও ভালো হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশেষ করে বড় দলগুলোর সঙ্গে ভালো খেলার পূর্ব শর্তই হলো পরিবেশ, পরিস্থিতি ও প্রতিপক্ষের শক্তি-সামর্থ্যের আলোকে দল নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রথমদিন তা করতে পারেনি। যেখানে প্রায় সব দল পেস ডিপার্টমেন্টের পাশাপাশি স্পিন আক্রমণটাকেও শাণিত করে মাঠে নামছে, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দল লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের ওপর নির্ভর করে সাফল্য তুলে নিয়েছে, হারলেও স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দক্ষ এক ঝাঁক ব্যাটসম্যানে গড়া ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান দুই স্পেশালিষ্ট স্পিনার খেলিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ ইংলিশদের বিরুদ্ধে প্রথমদিন মাঠে নেমেছিল চার বোলার নিয়ে।

তবে চার বোলারের পরিবর্তে পাঁচজন বোলার নিয়ে খেললেই বাংলাদেশ জিতে যেত, তা নয়। ক্রিকেটীয় যুক্তি ও ব্যাখ্যায় কোন ভাবেই চার বোলার নিয়ে খেলা সমর্থনযোগ্য নয়। ইংলিশ কন্ডিশনে চার স্পেশালিষ্ট বোলার নিয়ে মাঠে নামার পক্ষে যুক্তিও খুব কম। যা হোক, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিভি ধারাভাষ্য দিচ্ছেন যে সব বিশ্ব বরেণ্য ক্রিকেটার ও পণ্ডিতরা, তারা সবাই এক বাক্যে বলেছেন, ৮ উইকেটে হারলেও বাংলাদেশের পারফরমেন্সে ভালো করার প্রতিশ্রুতি মিলেছে।

তার মানে মাশরাফির দলের আরও ভালো করার সামর্থ্য আছে। সেই সামর্থ্যটা কি? সামনের দুই ম্যাচে সবাই তাই দেখতে উন্মুখ। আর সে কারণেই আজ সবার কৌতুহলি চোখ ওভালে। প্রথম ম্যাচের অতৃপ্তি আর অপ্রাপ্তি ঘুচিয়ে মাশরাফির দল ওভালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কেমন খেলবে? আজ কি করবে বাংলাদেশ? প্রথম দিনের ভুল ত্রুটি শুধরে পারফরমেন্সের গ্রাফ আরও উন্নত করতে পারবে?

পাশেই ওয়েলসের কার্ডিফে ১১ বছর আগে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর রেকর্ড আছে আমাদের। আর তা ভেবে অনুপ্রাণিত হয়ে তামিম, সৌম্য, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরা আরও ভালো কিছু করবেন? নাকি স্মিথ, ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, হ্যাজেলউড আর মিচেল স্টার্কদের আগ্রাসী ক্রিকেটের সামনে সব এলোমেলো হয়ে যাবে, খেলা শুরুর সময় যত ঘনিয়ে আসছে, এসব কৌতূহলী প্রশ্ন ততই বাড়ছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় অজিদের জয়ের তাড়া ও তাগিদ দুইটাই বেশি। তারা চাইবে আজ (সোমবার) পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে সেমির পথকে সুগম করতে। তাই এমনিতেই টিম অস্ট্রেলিয়া মানেই ব্যাটিং ও বোলিংয়ে শতভাগ আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক, আর প্রথম ম্যাচে এক পয়েন্ট পাওয়ায় এখন জিততে মরিয়া থাকবে স্মিথের দল। অজিদের এই মরিয়া ভাব মাশরাফি বাহিনীর জন্য ভালো না খারাপ হবে? সেটাই দেখার।

তবে আজকের ম্যাচে টাইগারদের দুটি আশার খোরাক আছে। এক খেলা যে উইকেটে হবে সেটা তুলনামূলক স্লো আর কিছুটা স্পিন সহায়ক। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, অজিদের অতি আক্রমণাত্মক অ্যাপ্রোচ।

australia

ঠিক তিনদিন আগে একই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখেমিুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ঐ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৯৬ রানের জবাবে লঙ্কানরা অলআউট হয়েছিল ২০৩ রানে। গতকাল ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচে উইকেট যত সজীব, সতেজ ও প্রাণবন্ত ছিল, বল যত চমৎকার গতি বাউন্সে ব্যাটে এসেছে, প্রোটিয়া আর লঙ্কানদের খেলার পিচ তত স্পোর্টিং ছিল না। অনেকটাই মন্থর। সে ম্যাচে হাশিম আমলা সেঞ্চুরি করলেও ম্যাচ সেরা হয়েছেন লেগস্পিনার ইমরান তাহির।

ঐ ম্যাচের চালচিত্রই বলে দিয়েছে পিচ স্লো, বোলারদের পক্ষে। সে হিসেবে বাংলাদেশও হয়তো আজ সাকিবের সঙ্গে একজন বাড়তি স্পিনার নিয়ে খেলতে নামবে। সাধারণ হিসেবে মিরাজকেই ভাবা হচ্ছে সেই বাড়তি স্পিনার। হয়তো স্লো উইকেটে অফস্পিনার মিরাজই হবেন ফাস্ট চয়েজ। আর মিরাজ খেলা মানেই ইমরুল কায়েসের বাইরে চলে যাওয়া। সে ক্ষেত্রে সাব্বির রহমান রুম্মন হয়তো আবার তিনে ফিরে যাবেন।

মিরাজই যে খেলবেন, তাও নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। কারণ অজি ব্যাটিং লাইন আপে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের প্রাধান্য। প্রতিষ্ঠিত ছয়-সাত উইলোবাজের মধ্যে ওপেনার ওয়ার্নার আর ট্রাভিস হেডই শুধু বাঁহাতি। বাকি সব মানে স্মিথ, ম্যাক্সওয়েল আর অ্যারন ফিঞ্চ, ময়েস হেনরিক্স সবাই ডানহাতি। তাদের আটকাতে বাঁহাতি সাঞ্জামুল ইসলামকেও খেলানো হতে পারে। এতগুলো ডানহাতির বিরুদ্ধে একজন বাঁহাতির কার্যকর হবার সম্ভাবনাই বেশি।

এখন ম্যানেজমেন্ট শেষ পর্যন্ত কাকে খেলাবেন? সেটা তাদের বিষয়। শেষ কথা হলো, অস্ট্রেলিয়ানরা ইংলিশদের তুলনায় আগ্রাসী ও আক্রমণাত্তক মানসিকতার দল। যারা প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় থাকে সর্বক্ষণ। কোনভাবেই প্রতিপক্ষকে স্বস্তিতে খেলতে দেয়া যাবে না। তারা যাতে শুরু থেকে গুছিয়ে উঠতে না পারে, সেই চিন্তাটাই থাকে বেশি অজিদের। সেটা ব্যাটিংয়েই হোক কিংবা বোলিংয়ে। বল হাতে হ্যাজেলউড আর স্টার্করা অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। বাড়তি গতি সঞ্চারের চেষ্টাও বেশি করবেন। বাউন্সার ছুড়ে ব্যাটসম্যানকে অস্বস্তিতে ফেলা আর ব্যতিব্যস্ত রাখার ইচ্ছে বেশি।

অন্যদিকে ব্যাটসম্যানরাও অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। শটস খেলার প্রবতাও বেশি। অজিদের এই আগ্রাসী অ্যাপ্রোচটা টাইগারদের জন্য খানিক ইতিবাচক হতে পারে। অতি আক্রমণাত্মক মানেই কোন কিছু পুরোপুরি পরিশিলিত ও সুবিন্যস্ত নয়। অজি বোলাররা যখন বাড়তি গতি সঞ্চারের পাশাপাশি বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করলে বলের নিখুঁত লাইন ও নিশানা ঠিক রাখা কঠিন হবে। তাতে লাভ হবে তামিম, সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেকদের। তারা অফস্টাম্পের বাইরে কিছু আলগা ডেলিভারি পাবেন। শর্ট অফ-লেন্থের বলও মিলবে। যা কাজে লাগাতে পারলে রানের চাকা সচল করা যাবে। একই ভাবে ওয়ার্নার, স্মিথ, ফিঞ্চ ও ম্যাক্সওয়েলরা যত বেশি শট খেলবেন, বাংলাদেশের বোলাররা ততই তাদের আউট করার সুযোগ পাবেন। বুদ্ধি খাটিয়ে সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে পারফরমেন্স ভালো করা সম্ভব।

এআরবি/এমআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।