সেই জিদান, সেই বুফন


প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ০৪ জুন ২০১৭

সময়ের ব্যবধান ১১ বছর। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল। দীর্ঘ এই সময়ের ব্যবধানে তৈরি হলো দুটি ছবি। এই দুটি ছবিতে অঙ্কিত কতই না ইতিহাস! আবার কতই না বৈপরিত্য। ছবিই যেন বলে দিচ্ছে অনেক কিছু। তবে দুটি ছবির একটাই যেন বার্তা, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে কত সুন্দর করে প্রতিশোধটা গ্রহণ করলেন জিনেদিন জিদান। জিয়ানলুইজি বুফনকে হারিয়ে।

প্রথম ঘটনাটা ২০০৬ সালের। বিশ্বকাপের ফাইনাল। জার্মানির বার্লিনে অলিম্পিক স্টেডিয়াম। ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে মার্কো মাতেরাজ্জিকে হেডবাটে ফেলে দিলেন জিদান। রেফারি হোরাসিও এলিজোন্দো লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিলেন তাকে।

তার আগে ১১০ মিনিট জিদানের সামনে যেন হিমালয়ের সমান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জিয়ানলুইজি বুফন। ইতালির গোলরক্ষককে ভেদ করে সেদিন কার সাধ্য ছিল আজ্জুরিদের জালে বল প্রবেশ করায়! জিদানের অসংখ্য প্রচেষ্টা এককভাবে রুখে দিয়েছিলেন বুফন।

এমনিতেই ইতালি রক্ষণ নির্ভর দল। বিখ্যাত কাতানেচ্চিও রক্ষণ ফর্মুলা প্রয়োগ করে তারা সেদিন ফ্রান্সকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। তবুও অপ্রতিরোধ্য জিদান রক্ষণ দেয়াল ভেদ করে যতগুলো বল পোস্টে পাঠিয়েছেন, সেখানে চীনের মহাপ্রাচীরের মত বাধার পাহাড় দাঁড়িয়ে ছিলেন বুফন।

শেষ পর্যন্ত হেড বাট ট্র্যাজেডিতে জিদানকে মাঠ থেকেই বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। ফুটবল ক্যারিয়ারটাও সেদিন শেষ করে দিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার। টাইব্রেকারে জিতে বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল বুফনের ইতালি।

বিশ্বকাপ ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণের আগে বুফনকে দেখা গিয়েছিল জিদানকে সান্তনা দিতে। সেই ছবি এখনও জ্বলজ্বল করছে ফ্রান্স সমর্থকদের হৃদয়ে। আর গুগল করলে তো হাজারটা ছবি বেরিয়ে আসে জিদানকে বুফনের সান্তনা দেয়ার দৃশ্য।

জিদান এরপর নিজেকে ধীরে ধীরে কোচ হিসেবে গড়ে তোলেন। আর বুফন তো সেবার সবেমাত্র যেন ক্যারিয়ারই শুরু করেছিলেন। এরপর টানা ১১ বছর বুফন ইতালি এবং জুভেন্তাসের পোস্ট আগলে থেকেছেন। ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপসহ জিতেছেন অনেক কিছুই; কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফিটা জেতা হলো না তার।

জিদান রিয়াল মাদ্রিদের মূল কোচ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন দেড় বছর আগে। এরই মধ্যে জিতে ফেলেছেন দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি এবং একটি লা লিগা। গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এবার জুভেন্তাস এবং সেই জিয়ানলুইজি বুফন। ২০০৬ সালের ফাইনালের পর যেন আরও একবার মুখোমুখি জিদান-বুফন। একজন পোস্টের নিচে, আরেকজন ডাগআউটে।

কার্ডিফের মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামে যখন রেফারির কিক অফের বাঁশি বেজে উঠেছিল, তখন কী জিদানের ১১ বছর আগের স্মৃতি কি খুব মনে পড়েছিল! জানার উপায় নেই। তবে, এটা নিশ্চিত বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের ক্ষত কোনোভাবেই ভুলে যাওয়ার কথা নয় তার। সেই বুফনই যে আজ তার প্রতিপক্ষ হয়ে আবারও দাঁড়িয়েছে পোস্টের নিচে এবং সেই বুফনের বাহুতেই বাধা নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড!

জিদান নিজে মাঠে নামতে পারবেন না। বুফনকে আরও একবার পরীক্ষা নিতে পারবেন না। তবে তিনি যে তার চেয়েও অনেক বেশি! পুরো সমরপরিকল্পনাবীদ! তার সাজানো ছকেই খেলছে রিয়াল মাদ্রিদ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো থেকে শুরু করে করিম বেনজেমা, গ্যারেথ বেল, মার্সেলেদের মত বিশ্বসেরা তারকারা!

জিদান নিজে না পারুন। পারিয়েছেন শিষ্যদের দিয়ে। প্রিয় শিষ্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে দিয়ে দু’বার পরাস্ত করিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষকের মর্যাদা পেয়ে যাওয়া বুফনকে। ক্যারিয়ারের সব অর্জন আর অভিজ্ঞতা যেন মুহূর্তেই লুটোফুটি খেতে শুরু করে দিলো জিদানের পায়ের তলায়। রোনালদোর সঙ্গে বুফনকে বোকা বানিয়েছেন কাসেমিরো এবং আসেনসিও।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরনী মঞ্চে ওঠার আগে হতাশায় পুড়তে থাকা বুফনকে খানিকটা সান্তনা দিলেন জিদান। ১১ বছর আগের দৃশ্যটার পুনরাবৃত্তিই যেন ঘটলো চরিত্রও একই। শুধু ভুমিকাটা ভিন্ন। ১১ বছর আগের বুফনের ভুমিকায় ১১ বছর পর এসে দাঁড়ালেন জিদান। আর জিদানের ভুমিকায় দাঁড়ালেন বুফন। নিয়তি কত সুন্দরভাবেই না ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়! একই পরিস্থিতি, একই চরিত্র শুধু ভুমিকাটা যা একটু ভিন্ন।

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।