যে কারণে নেপালে বারবার ভূমিকম্প


প্রকাশিত: ০৫:৩৮ এএম, ১৩ মে ২০১৫

গত ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি নেপাল। এরই মধ্যে গত সোমবার আবারও ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নেপাল। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে এটি দ্বিতীয় শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত।

মঙ্গলবার আবার ভূমিকম্পের আধা ঘণ্টা পরই ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক কারণেই এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তি।

কী সেই ভূতাত্ত্বিক কারণ? বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, কমবেশি আড়াই কোটি বছর আগে ভারত একটি আলাদা দ্বীপ ছিল, যা দ্রুত সরে এসে এশিয়ার সঙ্গে ধাক্কা খায়। মধ্য এশীয় টেকটোনিক প্লেটের নিচ দিয়ে ভারতীয় প্লেটটি ঢুকে যায়। এর ফলে এ অঞ্চলের পর্বতগুলো এখনো আকার পাচ্ছে। প্রতিবছর এই প্লেট দুটি দেড় থেকে দুই ইঞ্চি পরস্পরের দিকে সরে আসছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে প্রচণ্ড চাপের। টেকটোনিক প্লেট হচ্ছে ভূত্বকের বিশাল আকারের খণ্ড, যা সঞ্চরণশীল।

যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানবিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড রথারি বলেন, হিমালয় পর্বতমালা ভারতীয় প্লেটের ওপর দিয়ে প্রবলভাবে চাপ দিচ্ছে। সেখানে দুই থেকে তিনটি বড় ধরনের চ্যুতি রয়েছে। আর আছে কিছু খুব মৃদুগতিতে সঞ্চরণশীল চ্যুতি। এগুলোর সঞ্চরণের কারণেই ঘটছে ভূমিকম্প।

গত কয়েক দশক ধরেই কাঠমাণ্ডুর মানুষকে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে নেপালের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি অনেকটা অনিবার্যই বলা চলে। কারণ, সেখানকার ভূমির গঠনই ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া নেপালের বাড়িঘর নির্মাণের কৌশল ঝাঁকুনি থেকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট কার্যকর নয়। অর্থাৎ সেগুলো ভূমিকম্প-সহনশীল নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিওহ্যাজার্ডস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও গবেষক ব্রায়ান টাকার বলেন, কাঠমাণ্ডু ও এর আশপাশের অঞ্চল পুরনো হ্রদের শুকনো ভূত্বক দিয়ে তৈরি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি। শুধু কাঠমাণ্ডু নয়, ইস্তাম্বুল, তেহরান, তাবরিজ ও আশখাবাদও (তুর্কিমেনিস্তানের রাজধানী) এমন ভয়ঙ্কর ভূমির ওপর অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এলাকাও ভূমিকম্পের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ আফ্রিকান, আরবীয় ও ভারতীয় প্লেট উত্তরদিকে ইউরেশিয়ান প্লেটকে চাপ দিচ্ছে।

হিমালয় অঞ্চলের অধিবাসীদের বেশির ভাগই যে ধরনের বাড়িঘরে বাস করে, সেগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত এগুলো দুর্বল ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মাণ করা। আগের অভিজ্ঞতা থেকে আরেকটি বড় ধরনের উদ্বেগের কথাও মনে রাখতে হবে, তা হলো ভূমিধসের আশঙ্কা। এ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলটির অনেক গ্রাম পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। এসব গ্রাম মাটি ও পাথরের নিচে চাপা পড়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

জিওহ্যাজার্ডস ইন্টারন্যাশনালের মতে, গড়ে প্রতি ৭৫ বছর পর পর নেপালসহ ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত করছে। ৮১ বছর আগে ১৯৩৪ সালে ৮ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালের ১০ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৮৮ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার আরেক ভূমিকম্পে মারা যায় এক হাজার মানুষ।

ব্রায়ান টাকার জানান, নব্বইয়ের দশকে তাঁরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ১৯৩৪ সালের মতো ভূমিকম্প যদি আবার ঘটে তবে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাবে। কারণ নেপালের শহরগুলোতে লোকসংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর বড় বড় দালানকোঠা যা উঠছে, সেসবও ভেঙে পড়বে সহজেই।  সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, আল-জাজিরা, বিবিসি।

এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।