চোখ রাখুন তাদের দিকে


প্রকাশিত: ১১:২৩ এএম, ৩১ মে ২০১৭

এক একটা টুর্নামেন্ট আসে নতুনের বার্তা নিয়ে। অনেক তারকারই উদ্ভব ঘটে এসব টুর্নামেন্ট থেকে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কী তাহলে তেমনই কিছু প্রতিভার জন্ম দেবে? দিতেও পারে। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে শেষ পর্যন্ত। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বেশ কিছু তারকা সবার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে।

সেই তারকাদের তুলে ধরেছে আইসিসির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট আইসিসি-ক্রিকেট.কমও। প্রতিটি দেশ থেকে একজন করে তরুণ খেলোয়াড়কে আইসিসি তুলে এনেছে, যারা এই টুর্নামেন্টে সবার দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারেন। আইসিসির তৈরি সেই আট তরুণের পরিচয় তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য...

মোস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)
আইসিসি কেন তাকে বাছাই করেছে সেরা তারকা হিসেবে? সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তারা বলছে, মোস্তাফিজের বোলিংয়ে কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আলাদা এই বৈশিষ্ট্যের গুণেই সবাইকে প্রভাবিত করেছেন এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বলতে গেলে মোস্তাফিজ বাংলাদেশের খুঁজে পাওয়া একটি হীরকখণ্ড। তার বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় বিশেষণ হচ্ছে, অফ কাটার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচেই ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট শিকার করে সবার নজরে আসেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচেও নিয়েছিলেন পাঁচ কিংবা তার বেশি উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ মাচে দু’বার পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্বও রয়েছে এই বাঁ-হাতি পেসারের। মোস্তাফিজের আগে জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিতোরি এ কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।

২১ বছর বয়সী এ তরুণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও অনেক বছর সামনে পড়ে রয়েছে। যদি ইনজুরিমুক্ত থাকার পাশাপাশি নিজেকে ফিট রাখতে পারে মোস্তাফিজ, তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তার আধিপত্য অনেক বছর দেখা যাবে।

Rabada

কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম নিজের প্রতিভার ঝলক দেখান রাবাদা। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৫ রানে তুলে নেন ৬ উইকেট। টুর্নামেন্টের পাঁচ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে হন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। এরপর আর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। পরের বছরই ডাক পান দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচেই নিজের জাত চেনান রাবাদা। বাংলাদেশি স্পিনার তাইজুল ইসলামের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকেই গড়েন হ্যাটট্রিক। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি প্রোটিয়া এই পেসারকে। মাত্র ২১ বছর বয়সেই দুর্দান্ত গতির সঙ্গে সুইং, ইয়র্কার ও বাউন্সের মাধ্যমে নিজেকে পরিণত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মূল পেস বোলার হিসেবে। আর আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সম্ভাব্য সেরা তরুণ প্রতিভার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। 

Mitchell

মিচেল সান্টনার (নিউজিল্যান্ড)
ড্যানিয়েল ভেট্টরি থাকায় দলে জায়গা হয়নি মিচেল সান্টনারের। তবে ঘরের মাঠে গত বিশ্বকাপ শেষে ভেট্টরির অবসরের পর দলে জায়গা পান সান্টনার। সুযোগ পেয়েই নিজেকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে অবিচ্ছেদ্য খেলোয়াড় হিসেবে পরিণত করেন তিনি। ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বল হাতে নিজের ঝলক দেখান বাঁ-হাতি এই স্পিনার। ১২৭ রানে অলআউট হয়েও ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতকে মাত্র ৭৯ রানে গুঁড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন এই তারকা।

সান্টনার শুধু বল হাতেই নন, ব্যাট হাতেও সমান পারদর্শী। কিউইদের পক্ষে এখন পর্যন্ত ১৫ টেস্ট, ৩২ ওয়ানডে ও ১৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা সান্টনার আসন্ন চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে আছেন আইসিসির সম্ভাব্য সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের তালিকায়।

Babar

বাবর আজম (পাকিস্তান)
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়েই নিজেকে ক্রিকেট বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন বাবর আজম। ২০১২ সালে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছোটান। মাত্র ৬ ম্যাচে ৫৭.৪০ গড়ে করেন ২৮৭ রান। স্যার ভিভ রিচার্ডস, কেভিন পিটারসেন, জোনাথন ট্রট এবং কুইন্টন ডি ককদের সঙ্গে দ্রুততম হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শও করেন এই তারকা।

২০১৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলে অভিষেক হয় বাবর আজমের। অভিষেক সিরিজেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬০ বলে ৫৪ রান করে ভবিষ্যতের বার্তা দিয়ে রাখেন। আর তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ পায় ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজে। সিরিজে টানা তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরির সঙ্গে তিন ম্যাচেই নির্বাচিত হন ম্যাচ সেরা হিসেবে। আর সিরিজ শেষে হন সিরিজ সেরাও। ক্রিকেট পরিবার থেকে আসা পাকিস্তান তারকা বাবর আজমকে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আইসিসি রেখেছে সম্ভাব্য সেরা তরুণের তালিকায়।

Kusal

 

কুশল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)
কুমার সাঙ্গাকারার অবসরের পর তিন ফরমেটে নানা পরীক্ষা চালাতে থাকে শ্রীলঙ্কা। পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে সাঙ্গাকারার বিকল্প হিসেবে দলে জায়গা করে নেন কুশল মেন্ডিস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে লংকান দলে যাত্রা শুরু করেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। শুরুটা তেমন ভালো না হলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৭৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে লাইমলাইটে চলে আসেন।

টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেতেই বেশি কথা বলে মেন্ডিসের ব্যাট। এখন পর্যন্ত ২৫ ওয়ানডেতে ৩৬.৭৩ গড়ে ৮৪৫ রান করেছেন এই ব্যাটসম্যান। এ বছরই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেন ১০২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। আর এ ইনিংস দিয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেও নিজের প্রতিভার ঝলক দেখান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যানকে আইসিসি রেখেছে সম্ভাব্য সেরা তরুণের তালিকায়।

Jasprit

জসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)
অস্বাভাবিক বোলিং অ্যাকশনের সঙ্গে দুর্দান্ত সব ইয়র্কার দিয়ে এরই মধ্যে ব্যাটসম্যানদের কাছে নিজেকে কঠিন বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভারতীয় বোলার জসপ্রিত বুমরাহ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক সিরিজেই তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৬ উইকেট নেন। সিরিজ শেষে ধোনি বলেন, সিরিজের সেরা আবিষ্কার বুমরা।

এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি বুমরাকে। নতুন বলে ইয়র্কার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের সামনে রুদ্ররূপ ধারণ করেন। নতুন বলের মাস্টার হলেও নিজেকে ইয়র্কার, স্লোয়ার দিয়ে ডেথ ওভারে ব্যাটসম্যানদের রান তোলা থেকে বিরত রাখতে তার জুরি নেই। বর্তমান সময়ে ভারতে তাকে বিবেচনা করা হয় নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ হিসেবে। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই বোলারকে আইসিসি রেখেছে সম্ভাব্য সেরা তরুণের তালিকায়।

Pat-Cummins

প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া)
শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্ত। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই নেন ৬ উইকেট। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে তার শটেই জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডের ন্যায় অভিষেক টেস্টটাও ছিল দুর্দান্ত। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। তবে এরপরই পাল্টে যায় সব গল্প। একের পর এক চোটের থাবায় ছিটকে পড়েন দল থেকে।

এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ওয়ানডে ও ছয় বছর পর টেস্ট দলে জায়গা পান। ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরে আবারও জ্বলে ওঠেন। টেস্টেও ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রতিভা দেখান। এদিকে পেস বোলিং অস্ট্রেলিয়ার জুড়ি মেলা ভার। বর্তমান সময়ে মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউড, জেমস প্যাটিনসন ও প্যাট কামিন্সদের নিয়ে গঠিত বোলিং আক্রমণ টুর্নামেন্টের সেরা। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই কামিন্সকে আইসিসি রেখেছে সম্ভাব্য সেরা তরুণের তালিকায়।

Sam-Billings

স্যাম বিলিংস (ইংল্যান্ড)
বর্তমান সময়ের সবচেয় বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইংল্যান্ডের স্যাম বিলিংস অন্যতম। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজে উইকেট ধরে রেখে বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখিয়েছেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। ইংলিশ দলে থেকে বড় সব শট খেলতে পারদর্শী বিলিংস।

এখন পর্যন্ত ১১ ওয়ানডেতে ২৭.৩৩ গড়ে ২৪৬ রান করা বিলিংসের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিজেকে মেলে ধরার সঠিক জায়গা। আর তাই আইসিসি রেখেছে তাকে সম্ভাব্য সেরা তরুণের তালিকায়।

এমআর/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।