কার ঘরে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি


প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ৩১ মে ২০১৭

খুবই সংক্ষিপ্ত এবং ধারাল। মাত্র আট দলের টুর্নামেন্ট। অথচ কতটা পাওয়ারফুল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সময়ের তুলনায় বর্তমানে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এর চেয়ে আকর্ষণীয় আর কোনো ক্রিকেট নেই। সেই টুর্নামেন্টটিই শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১ জুন) থেকে। উদ্বোধনী দিনেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি দুই আসর বিরতি দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আসা বাংলাদেশ।

১৯৯৮ সালে আইসিসি মিনি বিশ্বকাপ কিংবা নকআউট বিশ্বকাপ দিয়ে বাংলাদেশ থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছিল এই টুর্নামেন্টটির। এরপর থেকে বেশ কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের এই ফরম্যাটে এসে দাঁড়িয়েছে টুর্নামেন্টটি। নামও নির্ধারিত হয়ে গেছে, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।

নতুন ফরম্যাটে বিশ্বকাপের সমমানের নয়, তবে বিশ্বকাপের চেয়ে কম আকর্ষণীয়ও নয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। র‌্যাংকিংয়ে সেরা আটে থাকা দলগুলোকে নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর এখন নিয়মিতই আয়োজন হচ্ছে চার বছর পরপর। যার অষ্টম আসর এবার বসছে শুধু ইংল্যান্ডে। এর আগের আসরের (২০১৩ সালে) আয়োজকও ছিল ইংল্যান্ড। তবে একা নয়, ওয়েলসকেও সঙ্গে নিয়েছিল যৌথ আয়োজক হিসেবে।

২০০৬ সালে খেলার পর সর্বশেষ দুই আসরে অনুপস্থিত ছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে। আইসিসির নতুন ফরম্যাট অনুযায়ী সেরা আট দলের মধ্যে বাংলাদেশ থাকতে পারেনি বলেই দুই আসরে টাইগারদের অনুপস্থিতি। সে কারণে হয়তো বাংলাদেশে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে উন্মাদনাও ছিল কম।

কিন্তু এবার যোগ্যতা অর্জন করেই, যোগ্য দল হিসেবেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছে বাংলাদেশ। র‌্যাংকিংয়ে সেরা আট নয়, এবার অংশ নিচ্ছে সেরা ছয়ে থেকেই। র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পেছনে তিন সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৯ নম্বরে চলে যাওয়ার কারণে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিরই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তারা এই টুর্নামেন্টে খেলতে পারছে না, নিয়মের মধ্যে থাকতে না পারায়।

দীর্ঘ প্রায় একযুগ পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তাই এবার এই টুর্নামেন্টের আকর্ষণ এবং আবেদনও অন্যমাত্রার। উন্মাদনাও বেশি। বাংলাদেশ কেমন করবে? অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে খেলতে হবে। কী করবে মাশরাফি বিন মর্তুজারা? তার ওপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে চলে গেছে র‌্যাকিংয়ের ছয় নম্বর স্থানে। হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। সুতরাং প্রত্যাশার পারদ চওড়া হয়েছে আরও অনেক বেশি।

বাংলাদেশ কী করতে পারবে- তা নিয়ে যেমন চলছে জল্পনা-কল্পনা, ঠিক তেমনি চায়ের কাপে ঝড় উঠছে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন নিয়েও। কে হবে আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন? কারা তুলে ধরবে ১৮ জুন ফাইনালের পর সোনালি শিরোপাটা?

১৯৯৮ সালে আইসিসি মিনি বিশ্বকাপের সূচনা হওয়ার পর নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এই আসর। ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ দেয়া হয় মার্কিন মূলকের দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে। ক্রিকেট যে দেশে জনপ্রিয় নয়, সেই দলটিকে এই টুর্নামেন্টে সুযোগ দিয়ে এর মানই যেন অনেক নিচে নামিয়ে দেয়া হয়। ব্রেট লি, মাইকেল ক্যাসপ্রোভিজ, জ্যাসন গিলেস্পিদের আগুনে বোলিংয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হতে হয়েছে তাদের।

টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে অটোমেটিক খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ; তবে ২০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার আসরেই বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে চরম হতাশা। ২০০৬ সালে শাহরিয়ার নাফীসের সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র জয় এলেও টুর্নামেন্টে ছিল বাংলাদেশের খুবই বাজে পারফরম্যান্স। এ কারণেই আইসিসি টুর্নামেন্টের ফরম্যাট নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসে এবং শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করে র‌্যাংকিংয়ের সেরা আটটি দল নিয়েই আয়োজন হবে এই টুর্নামেন্ট।

যেকোনো টুর্নামেন্টেই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এবং স্বাগতিকরাই থাকে ফেবারিটের তালিকায়। বর্তমান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফেবারিট কে এই বিবেচনায় এলে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং স্বাগতিক ইংল্যান্ডই এবার সবচেয়ে ফেবারিট টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে। ভারত শুধু কাগুজে বাঘই নয়, শক্তিশালীও বটে। দলটির কয়েকজন ক্রিকেটার আইপিএলে বাজে পারফরম্যান্স করলেও টুর্নামেন্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে এসে ঠিকই নিজেদের ঘুচিয়ে নিয়েছে। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে ছেড়েছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রয়োজন পেসারদের সম্মিলিত আক্রমণ। দারুণ একটি পেস কম্বিনেশন পেয়ে গেছে ভারত। উমেষ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিম বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি, হার্দিক পান্ডিয়াদের নিয়ে গঠিত পেস আক্রমণ এখন অনেক শক্তিশালী। ব্যাটিংয়ে তো সব সময়ই তারা সেরা।

স্বাগতিক ইংল্যান্ড টুর্নামেন্ট শুরুর আগে র‌্যাংকিংয়ে এক নম্বরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। এমনিতেই স্বাগতিক দর্শকদের সমর্থন পাবে তারা। একই সঙ্গে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং শক্তি- ইংল্যান্ডকে এবার ফেবারিটের জায়গায় রাখতেই হচ্ছে। তার ওপর স্বাগতিক হিসেবে প্রথম কোনো দেশের শিরোপা জয়ের দারুণ সুযোগ তার সামনে।

টুর্নামেন্টের আরও দুই মোস্ট ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে এক নম্বর স্থানে থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে আসছে প্রোটিয়ারা। এবি ডি ভিলিয়ার্সের নেতৃত্বে দলটি যে একেবারে বাজে ফর্মে আছে তা কোনোভাবেই বলা যায় না। কারণ, ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হারলেও শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের বলা যায় বিধ্বস্ত করেছে প্রোটিয়া পেসাররা। এক কাগিসো রাবাদাই তছনছ করে দিয়েছে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, ডু প্লেসিস, জেপি ডুমিনি, এবি ডি ভিলিয়ার্স- বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনআপ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো সব রসদই রয়েছে এই প্রোটিয়া দলে। ভাগ্য যদি বেঁকে না বসে, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যাম্পিয়নশিপ অন্য কারও পক্ষে ঠেকানো সম্ভব নয়।

স্টিভেন স্মিথের অস্ট্রেলিয়াও টপ ফেবারিট। দলটির বোলিং শক্তি অনেক শক্তিশালী। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জস হ্যজলউড এবং জেমস প্যাটিনসনদের নিয়ে গড়া পেস ডিপার্টমেন্ট বিশ্বের যেকোনো ব্যাটিং শক্তিকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে। এই চার পেসারকে সঙ্গে নিয়েই হয়তো একাদশ সাজাতে পারে অস্ট্রেলিয়া। স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নারই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাটিং শক্তি। যেকোনো দলের বোলিং লাইনআপে ভীতি তৈরি করার জন্য তারা দুজনই যথেষ্ট। এছাড়া অ্যারোন ফিঞ্চ, ক্রিস লিন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা তো প্রতিপক্ষের সামনে মূর্তিমান আতঙ্ক।

বাকি থাকে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ। এর মধ্যে কন্ডিশনের বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডও থাকবে এগিয়ে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তাদের জায়গা করে নিতে হবে সেমিফাইনালে। কাজটা খুব কঠিন। তবে দলটি রয়েছে দারুণ ফর্মে। কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বে মার্টিন গাপটিল, টম ল্যাথাম, কোরি অ্যান্ডাসরন, লুক রনকি, কলিন মুনরো, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, রস টেলর, নেইল ব্রুমরা রয়েছেন কিউই দলে। সুতরাং অনেক দূর চলে যেতে পারে ব্ল্যাক ক্যাপ্সরা।

সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বে পাকিস্তানও দুর্দান্ত একটি দলে পরিণত হচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের করা ৩৪১ রান টপকে গিয়েছিল পাকিস্তান। দলটি সব সময়ই আনপ্রেডিক্টেবল। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করে দিতে পারে। ভারত, শ্রীলঙ্কা কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে দলটির। সুতরাং পাকিস্তানকে নিয়েও বাজি ধরতে পারে যে কেউ। র‌্যাংকিংয়ে যেখানেই থাকুক, পাকিস্তানকেও ফেবারিটের খাতায় না রাখার কোনো উপায় নেই।

শ্রীলঙ্কা সব সময়ই বড় টুর্নামেন্টের দল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, টুর্নামেন্ট শুরু হলে বদলে যায় তারা। যদিও র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পেছনে চলে গেছে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের নেতৃত্বে দলটি একটা অন্তর্বর্তী সময় পার করছে; কিন্তু আসল টুর্নামেন্টে জ্বলে উঠতে পারে তারাও।

বাকি থাকে বাংলাদেশ। দুই আসর বিরতি দিয়ে নিজেদের যোগ্যতাবলেই উঠে এসেছে এবারের টুর্নামেন্টের মূল পর্বে। বিশ্বের শক্তিশালী দলগুলোকে এখন নিয়মিত হারাতে পারে মাশরাফির দল। নিউজিল্যান্ডকেও কিছুদিন আগে হারিয়েছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে খেলবে। তবুও এ দেশের ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ খেলবে সেমিফাইনাল। আর ক্রিকেটার সাব্বিরের প্রত্যাশা তো বাংলাদেশ ফাইনালও খেলবে। এমনকি শিরোপাও জিতবে। আকাশকুসুম কল্পনা মনে হতে পারে। তবে গৌরবময় অনিশ্চয়তার ক্রিকেটে তো অনেক কিছুই সম্ভব। সাব্বিরের কথাটাই না শেষ পর্যন্ত ফলে যায়!

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।