ভারতীয় পেসে লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ০৩:৪২ পিএম, ৩০ মে ২০১৭

এই মাঠেই একদিন পর মূল লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ইংলিশ কন্ডিশন নিয়ে আগে থেকেই দুশ্চিন্তা ছিল যে, সেখানকার কন্ডিশনে কেমন করে বাংলাদেশ। লন্ডনের সেই কেনিংটন ওভালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামার একদিন আগেই নিজেদের প্রস্তুত করে তোলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ; কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতীয় পেসারদের তোপেই লণ্ডভণ্ড হলো টাইগারদের ব্যাটিং লাইন-আপ।

ভারতের করা ৩২৪ রানের জবাবে ২৩.৫ ওভারে মাত্র ৮৪ রানেই অলআউট হয়ে গেল সাকিব আল হাসান অ্যান্ড কোং। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে আগুন ঝরিয়েছেন উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামি, জসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়ারা। স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনও নিলেন এক উইকেট। বাংলাদেশ হেরে গেল ২৪০ রানে।

৩২৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ১১ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফিরে যান সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান। দুজনই শিকার উমেশ যাদবের। ২ রান করতে পেরেছেন সৌম্য। সাব্বির খুলতে পারেননি রানের খাতাই। এরপর ৭ রান করা ইমরুল কায়েস ধরাশায়ী হয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমারের কাছে।

শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে দায়িত্ব নিয়ে খেলা দরকার ছিল অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের। নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এক রাশ হতাশা হতাশা উপহার দিয়ে সাজঘরে ফিরে গেলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। দুজন ফিরেছেন ভুবনেশ্বরের শিকার হয়ে। ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দেন তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। উমেশ যাদবের বলে দিনেশ কার্তিকের হাতে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেক। সাকিব ৭ রান করতে সক্ষম হয়েছেন। রানের দেখা পাননি মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক।

দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক মুশফিকুর রহীম। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে হাল ধরবেন তিনি। এমন প্রত্যাশাই বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু পারলেন না। দলকে বিপর্যয়ে রেখেই বিদায় নিলেন মুশফিক। মোহাম্মদ সামির বল কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তিনি ধরা পড়েন রবীন্দ্র জাদেজার হাতে। ১৮ বলে দুটি চারের সাহায্যে মুশফিক করেছেন ১৩ রান।

মেহেদী হাসান মিরাজ ও সানজামুল ইসলামকে দিয়ে কি ৩২৫ রানের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব? তা কী করে হয়! অষ্টম উইকেটে মিরাজ-সানজামুলের ৩০ রানের জুটিই সর্বোচ্চ। জসপ্রিত বুমরাহর শিকার হওয়া আগে মিরাজ করেছেন ২৪ রান (৩৪ বলে চারটি চারে)। মিরাজের ইনিংসটি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ৩৭ বলে দুটি চারে ১৮ রান করেছেন সানজামুল। তিনি ফেরেন অশ্বিনের বলে।

ভারতের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন উমেশ যাদব ও ভুবনেশ্বর কুমার। একটি করে উইকেট দখলে নিয়েছেন চারজন। মোহাম্মদ সামি, জসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ভারত। শিখর ধাওয়ান, দিনেশ কার্তিক, হার্দিকা পান্ডিয়ার ব্যাটিং নৈপুণ্যে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৪ রান তুলেছে বিরাট কোহলির দল। সাবধানেই পা ফেলছিলেন দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম ওভারটি দেখেশুনে খেলেছেন তারা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন রুবেল হোসেন। বোলিং এসেই চমক দেখান তিনি। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রোহিতের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন রুবেল। মাত্র ১ রান করেই সাজঘরে ফিরে গেছেন রোহিত। দলীয় ৩ রানের মাথায় বিদায় নেন ভারতীয় এই ওপেনার।

শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আজিঙ্কা রাহানেকে হারিয়ে ফেলে ভারত। রুবেল হোসেনের পর ভারতীয় শিবিরে আঘাত হানলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার সরাসরি বোল্ড করেন রাহানেকে। ১৩ বলে একটি চারে ৮ রান করেই সাজঘরে ফিরে যেতে হলো ভারতের এই ব্যাটসম্যানকে।

সঙ্গী হারিয়েও বিচলিত হননি শিখর ধাওয়ান। একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করছিলেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে দিনেশ কার্তিককে নিয়ে গড়েন ১০০ রানের জুটি। জমে ওঠা এই জুটি ভাঙেন সানজামুল ইসলাম। বাংলাদেশি এই স্পিনারের কাছে ধরাশায়ী হন শিখর ধাওয়ান। ৬৭ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৬০ রান করেন ভারতীয় এই ওপেনার।

পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দিনেশ কার্তিকের সঙ্গে জুটি গড়েন কেদার যাদব। চতুর্থ উইকেটে ভারত পায় ৭৫ রান। দারুণ এক ডেলিভারিতে কেদারকে বোল্ডআউট করে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সানজামুল। ৩৮ বলে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ৩১ রান দলের স্কোরশিটে জমা করেন কেদার।

আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রানের খাতাই খুলতে পারেননি দিনেশ কার্তিক। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে হারই মানেননি। নিজেকে মেলে ধরেছেন দারুণভাবেই। ব্যাট হাতে বাংলাদেশি বোলারদের শাসন করেছেন কার্তিক। ফিফটি তুলে নিয়েছেন। এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। শেষ পর্যন্ত আর শতকের দেখা পাননি। সতীর্থদের ব্যাটিংয়ে সুবিধা করে দিতেই সেচ্ছায় অবসরে গেলেন কার্তিক। ক্রিজ ছাড়ার আগে নামের পাশে যোগ করেন ৯৪ রান। তার ৭৭ বলের ইনিংসটি সাজানো ৮টি চার ও একটি ছক্কায়।

বরীন্দ্র জাদেজাকে ৩২ রানে থামান রুবেল হোসেন। তবে হার্দিক পান্ডিয়াকে কেউ থামাতে পারেননি। শেষ দিকে ঝড় তোলেন আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলা এই অলরাউন্ডার। ৫৪ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮০ রানের মূল্যবান এক ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন পান্ডিয়া। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে (৫) বোল্ড করেন রুবেল। ভুবনেশ্বর কুমার অপরাজিত ছিলেন ১ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে বোলিং করেছেন আটজন বোলার। উইকেট পেয়েছেন তিনজন। ৮ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ১ উইকেট লাভ করেছেন মোস্তাফিজ। সবচেয়ে সফল বোলার রুবেল হোসেন। ৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৫০ রান খরচায় দখলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সানজামুল ইসলামের পকেটে জমা পড়েছে দুটি উইকেট।

এনইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।