মাহমুদউল্লাহর অভিজ্ঞতা-মোসাদ্দেকের ব্যাটিং মিস করছেন সুজন


প্রকাশিত: ০৫:৪৬ এএম, ২৪ মে ২০১৭

বন্ধু-বান্ধব, সমবয়সী ও সমসাময়ীক ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই তাকে ‘চাচা’ বলে ডাকেন। ভাবতে পারেন সেটা শুধুই মৌখিক সম্বোধন। আসলে তা নয়। ক্রিকেট মাঠ ও ক্রিকেট পাড়ায় এমনি এমনি খালেদ মাহমুদ সুজন সবার চাচা নন। আসলে তিনি ‘সার্বজনীন’ চরিত্র। যার আচরণ, কথাবার্তা  ও কর্মকান্ড, সব কিছুতেই সার্বজনীন চিন্তা-ভাবনা। আশেপাশের সবার কথা ভাবা, তাদের যত্ন নেয়া ও তাদের নিয়ে পথ চলাই তার সহজাত বৈশিষ্ট।

নিজের চেয়ে ক্লাব ও সহযোগীদের নিয়ে ভাবতেই বেশি তার। সুজন যে সত্যিকার সার্বজনীন চরিত্র, নিজের চেয়ে তার কাছে দল বড়, তার প্রমাণ আছে তার খেলোয়াড়ি জীবনেই। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ব্রাদার্সের হয়ে খেলার সময় অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন নিজের পেমেন্টটা অন্যদের অ্যাডভান্স হিসেবে দিয়ে দিয়েছেন বেশ কবার। এখানেই শেষ নয়। খালেদ মাহমুদ সুজন সব সময়ই সমবয়সী-সমসাময়ীক এবং বয়সে ছোটদের অন্যরকম নির্ভরতা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতসহ বর্তমান প্রজন্মের বহু ক্রিকেটারের অভিভাবক সুজন। তাদের সবচেয়ে বড় পরামর্শদাতা। দুঃসময়ের সঙ্গীও। আর সবচেয়ে বড় কথা এক নিবেদিত প্রাণ ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের প্রতিমূর্তি খালেদ মাহমুদ সুজন।

ক্রিকেট, মাঠ আর ক্রিকেটার, তার জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। ক্রিকেট তার প্রথম ভালোবাসা। মাঠ আর ক্রিকেটাররা তার নিরন্তর সঙ্গী। মোদ্দাকথা পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর লড়িয়ে মানসিকতার চমৎকার মিশেলে গড়া অন্যরকম এক ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের নাম খালেদ মাহমুদ। ক্রিকেট মেধা-বুদ্ধি আর প্রজ্ঞার সঙ্গে এই সবের মিশেলে খালেদ মাহমুদ সুজন এক সফল কোচ হিসেবেও হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত। সাফল্য যার নিরন্তর সঙ্গী।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে খালেদ মাহমুদ সুজন এখন সবচেয়ে দক্ষ ও কার্যকর প্রশিক্ষক। গত দুই লিগে সুজন যে দলকে কোচিং করিয়েছেন, সেই প্রাইম ব্যাংক আর আবাহনীই হয়েছে লিগ চ্যাম্পিয়ন। নামী ও হাই প্রোফাইল বিদেশি কোচকে পিছনে ফেলে বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন কোচ সুজন। তার প্রশিক্ষণে এবারো কাগজে কলমে অন্যতম সেরা দল আবাহনী। প্রাইম দোলেশ্বর আর প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সমান থেকে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের চেয়ে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে সুপার লিগ শুরু করছে আকাশী হলুদ জার্সির দল।

এখন পর্যন্ত লিগ যাত্রা কেমন ছিল? শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে, কি করবে তার দল? এবারো হাসবে শেষ হাসি, এসব নিয়েই জাগো নিউজের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। আসুন শুনি সে কথোপকোথন : 

জাগো নিউজ : প্রাইম দোলেশ্বরের সঙ্গে শেষ ম্যাচ না হারলে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের সঙ্গে সমান যৌথভাবে শীর্ষে থেকে সুপার লিগ শুরু করা যেত। সেটা কি আরও ভালো হতো না?
খালেদ মাহমুদ সুজন : হ্যা, জিততে পারলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু ঐ এক ম্যাচ জিতলেই যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতাম বা ঐ ম্যাচ হারায় যে আমাদের সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে গেছে এমন নয়। কারণ একটা সহজ হিসেব দেই, আমরা গাজী গ্রুপের সমান থাকলেও চ্যাম্পিয়ন হতে হলে সুপার লিগে বাকি ম্যাচ জিততে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে হারাতেই হবে। সুপার লিগে বাকি ম্যাচগুলো জিতে যদি গাজী গ্রুপের কাছে হেরে যাই তাহলে হবে না। আমাদের অন্য সব ম্যাচ জিততে হবে আর গাজী গ্রুপকে অবশ্যই হারাতে হবে। আমরা গাজী গ্রুপকে হারাতে পারলে হেড টু হেডে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবো। আমাদের নেট রান রেটও বেশ ভালো। তবে সব কথার শেষ কথা, সুপার লিগে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।

জাগো নিউজ : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তাসকিন আহমেদ আর সাঞ্জামুল ইসলামকে কেমন মিস করছেন?
খালেদ মাহমুদ সুজন : তাদের অভাবতো অবশ্যই অনুভব করছি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অভিজ্ঞতা অনেক। রিয়াদের থাকাটা একটা অন্যরকম অ্যাডভান্টেজ থাকতো। মোসাদ্দেক সৈকত এখন লোকাল ক্রিকেটে হিরো। সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। বাঁহাতি স্পিনার সাঞ্জামুল থাকলে আমার স্পিন অপশনটা সমৃদ্ধ থাকতো। আমরা একটা বিদেশি জেনুইন ব্যাটসম্যান অলরাউন্ডার আনতে পারতাম। এখন বোলিং অলরাউন্ডার আনতে হয়েছে। তবে এটা সত্য যে, বোলিং খানিকটা দুর্বল ও কমজোরি হয়ে গেছে। মোদ্দা কথা তাদের মিস করছি না তা বললে ভুল বলা হবে। তবে যে দলটি আছে সেটাও খারাপ না।

জাগো নিউজ : সেটা কেমন দল?
খালেদ মাহমুদ সুজন : মূলত এক ঝাক তরুণের দল। কিন্তু সেটাও অনেক স্ট্রং ও বেশ ক্যাপেবল। লিটন দাস, মিঠুন, শুভগত ও সাকলাইন পরীক্ষিত পারফরমার। সাথে শান্ত, আফিফ, সাইফ, সাদমান-সাইফউদ্দীনদের নিয়ে বেশ প্রতিভাবান ক্রিকেটারের সমন্বয় আছে। আমার মনে হয় তারুণ্য নির্ভর হলেও নিঃসন্দেহে আবাহনীর ব্যাটিং লাইন আপ সেরা। তার প্রমাণ খুঁজতে বেশি দূর যেতে হবে না। আবাহনী একমাত্র দল যারা সর্বাধীক ৩০০ করেছে।

জাগো নিউজ : কিন্তু সে অনুযায়ী বোলিংটা কি অত ভালো হয়েছে?
খালেদ মাহমুদ সুজন : শুধু বোলিং না। আমার মনে হয় আমাদের দলের সমন্বয়টা তেমন ভালো হয়নি। আমরা অনেকগুলো ম্যাচ জিতেছি। তবে বেশির ভাগ ম্যাচে আবাহনী আবাহনীর মত খেলেনি। আমার মনে হয় প্রথম পর্বে কেবল মাত্র প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গেই আমরা ট্রু চ্যাম্পিয়নের মত খেলতে পেরেছি। মোহামেডানের সঙ্গে ৩৬৬ করেও জিততে কষ্ট হয়েছে। মাত্র ২৫ রানে জিতেছি। ব্রাদার্সের সঙ্গেও প্রায় একই অবস্থা হয়েছে। বোলিং নিয়ে তাই একটু চিন্তিত। ভালো বোলার আছে। তবে সেটা প্রমাণ দিতে পারেনি।

জাগো নিউজ : সুপার লিগে আবাহনীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?
খালেদ মাহমুদ সুজন : আমিতো প্রতিটি দলকেই সমান সমীহর চোখে দেখছি। না দেখে উপায় কি বলুন? লিগে আমরা শেখ জামালের কাছেও হারছি। কাজেই তাদের হালকা ভাবে নেবার প্রশ্নই ওঠে না। প্রতিটি দলই স্ট্রং। প্রাইম দোলেশ্বর বেশ ভালো দল। বাবুল ভাইয়ের নেতৃত্বে ভালো ক্রিকেটও খেলছে। ফরহাদ রেজা ভেরি গুড ক্যাপ্টেন। একজন নিবেদিত প্রাণ ক্রিকেটার। পরিশ্রমি। নিজে পরিশ্রম করে। নিজে খেলে। দলকেও চাঙ্গা করতে পারে। গুড লিডার। তেমন বড় নাম হয়তো নেই। বাট ভেরি গুড টিম লিডার। যেমনই পারফরম করুক দলকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সও অনেক ভালো দল। বিজয় (আনামুল হক), মুমিনুল, পারাভেজ রসুল আর বোলার আবু হায়দারও খুব ভালো খেলছে। স্পিনাররাও ভালো বল করছে। প্রাইম ব্যাংক খুব অলরাউন্ড টিম। ব্যাটিং ও বোলিং, দুই ডিপার্টমেন্টেই বেশ ক`জন ভালো পারফরমার আছে। আসলে সব টিমই ভালো। প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার সামর্থ্য আছে সবার। যে কোন দল যে কাউকে হারাতে পারে। দেখেন মোহামেডানের রকিবুল আমাদের বিরুদ্ধে একাই ১৯০ রান করে আমাদের কি চিন্তায়ই না ফেলে দিয়েছে।

জাগো নিউজ : আচ্ছা, গরমে কি প্রভাব ফেলতে পারে?
খালেদ মাহমুদ সুজন : গরম প্রতিটি দলকেই কাবু করছে। এ গরমে ৫০ ওভার ফিল্ডিং করা খুব কঠিন। ফিল্ডিংয়ে প্রবলেম হতে পারে। আমরা যে তিনটি ম্যাচ হেরেছি সবগুলোতে ফিল্ডিং ও ক্যাচ মিসের কারণে। কাজেই আমি গরম নিয়ে চিন্তায় আছি।

জাগো নিউজ : আপনাকে ধন্যবাদ
খালেদ মাহমুদ সুজন : আপনাকেও ধন্যবাদ

এআরবি/এমআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।