রাস্তা ভাঙন রোধের কাজ শেষ না হতেই ব্লকে ধস
ঝালকাঠি পুলিশ লাইনের পূর্ব দিক সংলগ্ন রাস্তা রক্ষায় সুতালড়ি খালের ভাঙন রোধের কার্যক্রম শেষ না হতেই ব্লকে ধস নামতে শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ব্লকের এ ধস শুরু হয়। সুতালড়ি ব্রিজের উত্তর পাশ থেকে ১০০ মিটার ভাঙন রোধ হলে কৃষ্ণকাঠি ও উত্তর কৃষ্ণকাঠি এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক লোকের চলাচলের জন্য একমাত্র পথটি রক্ষা পেত। কিন্তু কাজের নিম্নমান ও সঠিক পরিকল্পনা না করে দায়সারাভাবে পরিকল্পনার মাধ্যমে বালু ভর্তি বস্তা খালের উপরিস্তরে ফেলায় ধস নামতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝালকাঠি পৌর এলাকার পূর্ব কৃষ্ণকাঠি (সুতালড়ি) পুলিশ লাইনের পূর্ব পাশ সংলগ্ন প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তাটির অর্ধেকেরও বেশি খালে বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তাটি আরসিসি (খোয়া, সিমেন্ট, বালু ও রড) ঢালাই থাকলেও অর্ধেকাংশেরও বেশি খালে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ঢালাই খালের দিকে কাত হয়ে গেছে। এ কারণে পুলিশ লাইনের সীমানা প্রাচীরও ছিল হুমকির মুখে। সীমানা প্রাচীর ধসে পড়লে অরক্ষিত হয়ে পড়তো পুলিশ লাইন ও অস্ত্রাগার।
ভাঙন রক্ষার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে খালের মূল ভাঙন রোধ না করে উপরি স্তরে খুঁটি দিয়ে ব্লক ফেলা হয়েছে। নির্মাণ শ্রমিক মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ১৮ বস্তা বালিতে ১ বস্তা সিমেন্ট মিশিয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ব্লক তৈরি করছি। ১৮ বস্তা বালিতে ১ বস্তা সিমেন্ট মেশালে সিমেন্ট-বালু জমাট বাধে কিনা জিজ্ঞাসা করলে মাসুম বলেন, এভাবেই আমরা ব্লক তৈরি করছি। তবে জমাট বাধতে সময় লাগে।
ঝালকাঠি পৌর এলাকার কৃষ্ণকাঠি সুতালড়ি পুলিশ লাইনের পেছনের বেদে পল্লীর সরদার সর্পরাজ আ. রহিম জাগো নিউজকে জানান, পৌর এলাকা বর্ধিত করণের সময় এ এলাকাকে বর্ধিতকরণের আওতায় নেয়া হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত পানি সংযোগ, রাস্তাঘাট ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। আমরা পৌরসভার চাহিদামত ভূমিকরসহ সবকিছুই পরিশোধ করে যাচ্ছি। এখানে ৫০ মিটার প্রস্থ খালে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা ২০০৩ সাল থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। ৩/৪ বছর ধরে ভাঙনের আকার আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে।
একটি ব্রিজ দেখিয়ে তিনি বলেন, দেখেন, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ব্রিজটি এখন খালের মধ্যে। কতদূর দিয়ে এলাকাবাসী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা তৈরি করে চলাচল করছে। এখানে ২০১১ সালে ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনের এমপি ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আলহাজ আমির হোসেন আমু, পৌর মেয়র আফজাল হোসেন এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাসকে আমন্ত্রণ করে এখানে আনা হয়েছিল। তারা এসে দেখে সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গেছেন। আশ্বাস আশ্বাসেই রয়ে গেছে। পরে ২০১২ সালে লিখিত ভাবে আবার তাদেরকে অবগত করানো হয়েছে। চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির কিছু অংশে ভাঙন রোধের কার্যক্রম শুরু হলেও কাজ শেষ হতে না হতেই ভাঙন শুরু হয়েছে।
রাস্তা রক্ষার জন্য ভাঙন রোধের ব্লকেই ধস নামতে শুরু হয়েছে। প্রথমে অল্প করে ধস নামলেও আস্তে আস্তে ধসের মাত্রা বেড়েই চলছে। ঠিকাদার আ. সালামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ১০ ফুট পাইলিং দিয়ে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধের জন্য ডিজাইন ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ব্লকের নীচের মাটি বসে যেতে সময় লাগে। কাঁচা মাটির উপরে ব্লক ফেলায় মাটি দেবে যাওয়ায় ফাঁক হয়ে গেছে। মাটি সেট হলে আর দেবে যাবার সম্ভাবনা নেই। এতে যেসব স্থানে দেবে গেছে সেসব স্থানে পরে ব্লক ফেলা হবে।
এমজেড/আরআইপি