আশরাফুল নিজেও সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন


প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ১৫ মে ২০১৭

১৮ এপ্রিল বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে মোহামেডানের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচেই হয়ত বড় ইনিংস খেলে ফেলতে পারতেন। মোহামেডানের ৩০৭ রানের বিশাল স্কোরের জবাবে চার নম্বরে নেমে ভালোই খেলছিলেন।

শুরুর দিকে অফস্ট্যাম্পের আশপাশে কয়েকটা বলে একটু সমস্যা হলেও তারপর ঠিক নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন। আস্থাও ফিরে পেয়েছিলেন। দেখা মিলেছিল চেনা আশরাফুলের। মোহামেডান পেসার সাজেদুলকে কভার ও এক্সট্রা কভারের মাঝখান দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু।

একই বোলারকে পয়েন্ট ও গালির মাঝমাঝি জায়গা দিয়ে মাটি কামড়ানো স্কোয়ার ড্রাইভ। স্কোয়ার কাট, পুল খেলে ৪০-এর ঘরে পৌঁছে যাওয়া। ৪৯ বলে ৪৬ রান করে আফগান লেগস্পিনার রহমত শাহর বলে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরত আসেন।

তিন বছর সাসপেন্সনের খারা কাটিয়ে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ফিরে এক ম্যাচ পর ফিফটি হাতছাড়া হলো তার। এরপর মাঝে কেটে গেছে ছয় ছয়টি ম্যাচ। মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটে ভীষণ রান খরা। পাঁচ ইনিংস ব্যাট করে মোটে (১০+০+৭+৭+১২) = ৩৬।

অতিবড় আশরাফুল ভক্তেরও মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাদের মনেও জেগেছে প্রশ্ন, তবে কী আশরাফুল ফুরিয়ে গেছেন? আশরাফুল নিজেও খানিক সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন- তিন বছর বাদে ঢাকা লিগ খেলতে নেমে এ কি অবস্থা আমার?

সামর্থ্য নিয়ে যখন মনে দ্বিধা বাসা বাধে, তখন আস্থা ও আত্ববিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে। আশরাফুলেরও তাই হয়েছিল। অবশেষে সে ঘোর অমানিশা কাটলো। কি আশ্চর্য্য! যে মাঠে ২৭ দিন আগে অর্ধশতক হাঁকানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত বিকেএসপির সেই চার নম্বর মাঠেই নিজেকে ফিওে পেলেন।

সোমবার শেখ জামালের বিরুদ্ধে ৮৭ বলে ৮১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচ সেরা। কেমন লাগছে আবার ম্যাচ সেরা হতে পেরে? আশরাফুলের নির্লিপ্ত জবাব, ‘আসলে যে আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম, তার ছিটেফোটাও হয়নি। তাই বলতে পারছি না ভাল লাগছে। আশা ছিল অন্তত গোটা ছয়েক ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দেব। কিন্তু তা আর হলো কই? মাঝে তো রান করাই ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়।’

কেন এমন হলো? মোহামেডানের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচে তো খুব ভাল খেলছিলেন। তারপর পঞ্চাশের খুব কাছে গিয়ে হঠাৎ ফিরে আসলেন। আশরাফুলের আফসোস মাখা বক্তব্য, ‘আর বলেন না। সেই ম্যাচটির কথা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। বিশ্বাস করেন, কেউ হয়ত বাড়াবাড়ি ভাবতে পারেন। মনে হতে পারে, ৫৪ রান পিছনে থেকেও এমন কথা। তাও বলছি, আমার মনে হয় মোহামেডানের সাথে ম্যাচটিতে আমার সেঞ্চুরি করা উচিৎ ছিল। যেভাবে খেলতে চেয়েছি, সেভাবেই খেলতে পারছিলাম। বল ব্যাটের ঠিক মাঝখানে লাগছিল। পা‘ও যাচ্ছিল। শট খেলতে গিয়ে গ্যাপও পাচ্ছিলাম; কিন্তু ক্ষনিকের ভুলে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলো। সেই সেঞ্চুরির সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে সব কেমন যেন হয়ে গেল।’

কি হলো একটু খুলে বলবেন? ‘লিগ শুরুর আগে মনে হচ্ছিল প্রথম দুই তিন ম্যাচের মধ্যে একটি বড় ইনিংস খেলে ফেলতে পারলেই ব্যাস, হয়ে যাবে। আস্থা, আত্ববিশ্বাস চলে আসবে। মোহামেডানের সাথে ম্যাচে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর কেমন যেন দ্বিধায় পড়ে গেলাম। সামর্থ্য নিয়ে সংশয় জাগলো। ক্যারিয়ারে কখনো যা মনে হয়নি, তাই হলো। ভিতরে রাজ্যের সংশয় এসে বাসা বাঁধলো। তবে কি আর হবে না? আমি আর লিগে ভাল খেলে বড় ইনিংস উপহার দিতে পারবো না? এর মধ্যে পারিবারিকভাবে একটা মানসিক উৎপীড়নে পড়ে গেলাম। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আমার শাশুড়ি হাসপাতালে প্রায় কোমায়। প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণা। সব মিলে এমন যে বিদগুটে অবস্থা হয়েছিল বললে বিশ্বাস করবেন না।’

এরপরই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন বলতে গেলে। আশরাফুল বলেন, ‘জানেন শট খেলতে গিয়েও পারছিলাম না। টাইমিং হচ্ছিল না। বল ৩০ গজের বাইরে পাঠাতেও যেন কষ্ট হচ্ছিল। এরকম অবস্থায় গতকাল রোববার প্র্যাকটিসে সিনিয়র বন্ধু আশিক ভাইয়ের (প্রাইম ব্যাংকের সহকারি কোচ) সাথে কথা বললাম। তাকে বললাম, টাইমিং হচ্ছে না। ইয়া হু করে মারছি; কিন্তু বল যাচ্ছে না। তিনি বললেন, তোমার মনে হয় স্ট্যান্স ও ব্যাট সুইংয়ে সমস্যা হচ্ছে। একটু খেয়াল করে ওই দুই জায়গা ঠিক করো। চেষ্টা করলাম। ফলও পেলাম।’

সেই ফলেরই দেখা পেলেন আশরাফুল। তিনি নিজেই জানালেন, ‘পাঁচ, ছয় ম্যাচ ভাল খেলতে না পারার যন্ত্রণার মাঝেও না পারার গøানি মুছে অবশেষে ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলতে পারায় খানিক স্বস্তির পরশ অবশ্যই আছে। এখন চেষ্টা থাকবে শেষ দুই ম্যাচেও ভাল খেলার। দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান রাখার।’

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।