দূরত্ব কমিয়ে আবার কাছাকাছি পাপন-দুর্জয়


প্রকাশিত: ০১:৫৮ এএম, ১৪ মে ২০১৭

নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সঙ্গে নাজমুল হাসান পাপনের কি তবে সন্ধি হয়ে গেলো? বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমানের সঙ্গে বিসিবি বিগ বস নাজমুল হাসান পাপনের মাঝে যে মতের অমিল ও দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা কি শেষ পর্যন্ত কেটে গেলো?

হাওয়া থেকে পাওয়া খবর নয়। ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জনও নয়। শনিবার বিকেলে দু’জনকে হাসিমুখে অন্তরঙ্গ পরিবেশে দেখা যাওয়ার পরই বোঝা গেলো মাঝে গড়ে ওঠা দূরত্বের প্রাচীরটা ভেঙে গেছে। দুইজন আবার কাছাকাছি।

ভাবছেন, একজন বর্তমান বোর্ড সভাপতি আর অন্যজন প্রথম টেস্ট অধিনায়ক- দুজনের বুঝি কোনো ক্রিকেট সম্পৃক্ত কোনো অনুষ্ঠানে দেখা এবং অন্তরঙ্গ আলাপ! বিষয়টি মোটেই তা নয়। দু’জনার দেখা মিললো মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মহাদেবপুর কলেজ মাঠে। সেটাও হঠাৎ নয়। একেবারে ঘটা করে। ওই মাঠে শেখ রাসেল স্মৃতি ফুটবলের ফাইনাল উপলক্ষে বোর্ড পরিচালক ও অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের আমন্ত্রণেই প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন নাজমুল হাসান পাপন।

বিশেষ হেলিপ্টারে করে নিজ নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ থেকে সরাসরি ঘিওর উড়ে আসেন বিসিবি বিগ বস। সঙ্গে ছিলেন খুব কাছের জন, বোর্ডের অন্যতম প্রভাবশালী পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক, আব্দুল আওয়াল চৌধুরী ভুলু এবং সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন।

বিকেলে ফাইনাল হলেও নাজমুল হাসান পাপন ঘিওর চলে আসেন দুপুরেই। সেখানেই আন্তরিক পরিবেশে এক টেবিলে খাওয়া-দাওয়া ও অন্তরঙ্গ পরিবেশে সময় কাটানো এবং সবশেষে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসে খেলা দেখা ও পুরস্কার বিতরণ- দু’জনার হাসিমুখ এবং প্রানোচ্ছল শরীরি অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল, মাঝে তাদের সম্পর্কের আকাশে যে কালমেঘ জমেছিল, সেটা কেটে গেছে। দুজনের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গতঃ হঠাৎ করেই বছর দুয়েক আগে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের একটা দূরত্ব তৈরি হয়। অবশ্য সে দূরত্ব খুব বেশি প্রকাশ পায়নি। ক্রিকেট এলাকায় যাদের নিয়মিত যাতায়াত, তারা ছাড়া সে অর্থে বেশিরভাগ মানুষের তা ছিল অজানা।

দু’জনের মত ও পথের অমিল শুরু হয় আসলে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার পর চন্ডিকা হাথুসিংহে দল নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করলে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান নাঈমুর রহমান দুর্জয় মুখ খোলেন এবং দল নিয়ে প্রকাশ্যে কোচের নেতিবাচক কথা বলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

সেই শুরু। তারপর কোচ হাথুরুসিংহেকে সন্তুষ্ট করার জন্যই হোক কিংবা নাঈমুর রহমানের কর্মকাণ্ড মনপুতঃ না হওয়ার কারণেই হোক- ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যানের গুরুত্বপূর্ণ পদ হারান নাঈমুর। যার জায়গায় তাকে বসানো হয়েছিল, সেই আকরাম খান আবার ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান নির্বাচিত হন।

মুলতঃ ওই ঘটনার পর থেকেই আড়ালে চলে যান নাঈমুর। ক্রিকেট বোর্ডের কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটিতেই আর তার দেখা মেলেনি। বোর্ডে যাতায়াতও কমে গেছে। মিডিয়ায় প্রকাশ্যে কোন সময় ক্ষুব্ধ ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও কথা বার্তায় মনোক্ষুণ্নই মনে হতো তাকে।

এদিকে গত মাস দুয়েক বোর্ডের আশপাশে নতুন গুঞ্জন- ‘আচ্ছা! বোর্ড সভাপতির সঙ্গে যে রকম দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাকে নাঈমুর রহমান দুর্জয় কি আগামী বোর্ডে থাকবেন? বিসিবির আগামী পরিচালক পর্ষদ নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের প্যানেলের সম্ভাব্য তালিকায় কি নাঈমুরের নাম থাকবে?

বোর্ডের পরিচালক পর্ষদের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ওই প্রশ্ন ততই জোরালো হচ্ছিল। জোরালো হবার যুক্তিযুক্ত কারণও আছে। ক্রিকেট পাড়ায় মোটামুটি একটা কথা চাউর হয়ে গেছে। তাহলো, বোর্ড পরিচালক পর্ষদে পরিবর্তন আসছে। বোর্ডে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংযোজন আবার কিছু ক্ষেত্রে কাটছাটও হবে।

আগামী নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সমর্থন ও আশির্বাদপুষ্ট প্যানেলে এখন যারা আছেন, তাদের দুই তিনজন বাদ যাবেন। আবার সমান সংখ্যক নতুন পরিচালকের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে। সেখানে নাঈমুর রহমান দুর্জয় থাকবেন কি থাকবেন না? তা নিয়েও ছিল বড় ধরনের সংশয়। তার পাশাপাশি, শোনা যাচ্ছে  ইকবাল মাহমুদ, তানজিল আহমেদ ও শওকত আজিজ রাসেলের যেকোনো দু’জন নতুন কমিটিতে বাদ পড়ার কথাও শেরে বাংলার আশপাশে চাউর হয়ে গেছে।

তবে একটি বড় অংশের মত, যতই মত পার্থক্য ও মত দ্বদ্ব থাকুক না কেনো, টেস্ট অভিষেকের অধিনায়ক ও দেশের অন্যতম তারকা ক্রিকেটার নাঈমুরকে বাদ দিয়ে বোর্ড পরিচালক পর্ষদ সাজালে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।

ভাবা হচ্ছিল, ক্রিকেট বোর্ড ও জাতীয় দলের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেই হয়ত নাঈমুর বোর্ডে থেকে যেতেন। আজ নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নির্বাচনী এলাকায় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাজমুল হাসান পাপনকে প্রধান অতিথি করা এবং তার আন্তরিক উপস্থিতি ও দুপুর থেকে দুজনার অন্তরঙ্গ মেলামেশায় পরিষ্কার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন কাটানো নিয়ে নাজমুল হাসান পাপন অবশ্য একটি কথাও বলেননি। শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ‘ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল উপলক্ষে মহাদেবপুর এসেও আমার খুব ভাল লেগেছে। এখানকার মানুষের ক্রীড়াপ্রেম দেখে আমি খুব আনন্দিত। এদিকে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নির্বাচনী এলাকায় একটি বিশাল ও পুর্ণাঙ্গ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কথা আছে।’

প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, সে স্টেডিয়ামের ভবিষ্যত কী? নাজমুল হাসান পাপন জানিয়ে দিলেন, ‘পদ্মার পাড়ে স্টেডিয়াম নীতিগতভাবে হয়েই গেছে। এখন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। স্টেডিয়াম হওয়া সময়ের ব্যাপার।’

এদিকে নাইমুর রহমান দুর্জয়ও বিসিবি সভাপতিকে তার নির্বাচনী এলাকায় পেয়ে খুব খুশি। জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে নাঈমুর বলেন, ‘পাপন ভাই দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, আমি ৬৪ জেলায় সফর করবো এবং সে সফর শুরুই হবে মানিকগঞ্জ দিয়ে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও খুশি যে দেরিতে হলেও পাপন ভাই সে সফর শুরু করেছেন এবং আমার জেলা দিয়েই।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।