‘ডাগআউটে আমি কাউকে চিনি না’


প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ১০ মে ২০১৭

সৈয়দ নাইমুদ্দিনকে রেখে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়নের। শেষ পর্যন্ত পারেনি গোপীবাগের ক্লাবটি। ব্রাদার্সের ঘরের মানুষ হয়ে যাওয়া ভারতের এ বর্ষিয়ান কোচ এবার নিয়েছেন মোহামেডানের দায়িত্ব।

সৈয়দ নাইমুদ্দিনের চেয়ারে আরেকজন ভারতীয়কেই বসিয়েছে কমলাজার্সিধারীরা। তার নাম সুব্রত ভট্টাচার্য। ৫২ বছর বয়সী এ ভারতীয় বুধবার সকালে ঢাকায় এসেছেন। সর্বশেষ তিনি ছিলেন কলকাতা মেডানের কোচ।

বিকালে ফুটবলারদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। গোপীবাগের দায়িত্ব নিয়ে নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তার দীর্ঘ কথাপোকথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : ব্রাদার্সের দায়িত্ব নেয়ার পেছনে কোন বিষয়টি বেশি কাজ করেছে আপনার মধ্যে?
সুব্রত : আমের ভাইয়ের (ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খান) সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। তিনি আমাকে হঠাৎ একদিন বললেন ব্রাদার্সে কাজ করবো কিনা। আমি সঙ্গে সঙ্গে তার প্রস্তাবে রাজি হলাম। আমি ব্রাদার্সে এসেছি এ কারণে নয় যে, ভারতবর্ষে আমার কোনো অপসন ছিল না। আসলে আমি ভারতবর্ষের বাইরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ব্রাদার্সে এসেছি। নাইম দাদা (সৈয়দ নাইমুদ্দিন) ছাড়া আর কোনো ভারতীয় দেশের বাইরে কোচিং করাননি। আমি দ্বিতীয় ভারতীয় অন্য কোনো দেশে কোচিং করাতে এলাম। আমি মনে করেছি, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ব্রাদার্স সবচেয়ে ভালো প্লাটফর্ম।

প্রশ্ন : সৈয়দ নাইমুদ্দিনকে নিয়ে এবার অনেকটা লড়াই হয়েছে মোহামেডান ও ব্রাদার্সের। তিনি মোহামেডানের দায়িত্ব নিলেন, আপনি এলেন ব্রাদার্সে। এটা আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ কি না?
সুব্রত : দেখুন, তিনি আমার চেয়ে কুড়ি বছরের বড়। তার অধীনে আমি ফুটবল খেলেছি। মাঠের বাইরে নাইমুদ্দিন আমার কাছে অনেক শ্রদ্ধেয়। তবে মাঠে কিন্তু আমরা দু’জনই পেশাদার। আমার মনে হয় না এখানে কেউ কাউকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ আছে। আমিও আমার দলের জন্য শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করবো। নিশ্চয় নাইম ভাইও তা করবেন। ডাগআউটে আমরা যতক্ষণ থাকবো ততক্ষণ আমরা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। বাইরে তিনি যতই শ্রদ্ধার হোক, ডাগআউটে দাঁড়ালে আমি কাউকে চিনি না। তিনিও কাউকে চিনবেন না।

প্রশ্ন : ব্রাদার্স তো এবার ততটা ভালো দল গড়েনি। এ দলটি নিয়ে আপনি কতদূর যেতে পারবেন বলে মনে করেন?
সুব্রত: ব্রাদার্সকে ভালো একটা জায়গা নেয়াটাই আমার চ্যালেঞ্জ। লিগে গত মৌসুমে ব্রাদার্স চতুর্থ হয়েছে। আমার টার্গেট থাকবে দলটিকে তিন নম্বরে নিয়ে যাওয়া।

প্রশ্ন : আপনি তো আই লিগের কয়েকটি ক্লাবের দায়িত্বে ছিলেন। এখন বাংলাদেশের শীর্ষ লিগের ক্লাব ব্রাদার্সের দায়িত্ব নিলেন। কোন লিগের দলগুলোকে সামলানোকে টাফ মনে করছেন?
সুব্রত : দেখুন বাংলাদেশের ফুটবলটাকে আমি আজ থেকে চিনবো। এর আগে কলকাতা মোহামেডানের কোচ হয়ে প্রথম শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চট্টগ্রামে এসেছিলাম। তখন মোহামেডান, আবাহনী, চট্টগ্রাম আবাহনী- বাংলাদেশের তিনটি ক্লাবের খেলা দেখেছি। আরেকটা কথা বলি, স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে গুণগত তেমন কোনো তফাৎ নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পার্থক্য গড়ে দেয় বিদেশিরা। ভারতেও তাই। তবে ভারতীয় ফুটবলে এই জায়গাগুলোতে গ্লামার বেশি প্রচার-প্রচারণার জন্য। তাই আমি মনে করি, চ্যালেঞ্জ দুই দেশেই। ভারতীয় ফুটবলও ফুটবল। বাংলাদেশের ফুটবলও ফুটবল। ক্লাব পর্যায়ে দুই দেশের ফুটবলের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ন্যাশনাল পর্যায়ে কতটুকু আছে জানি না।

প্রশ্ন : আপনি এমন সময় দায়িত্ব নিলেন যখন মৌসুম শুরু হতে মাত্র ৩ দিন বাকি। সাধারণত কোচরাই দল গোছান। আপনি তো সে সুযোগ পাননি।
সুব্রত : হ্যাঁ। এটা টেকনিক্যাল কথা। তবে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় এমনটিই হয়। এ অঞ্চলের কোনো ক্লাব অনেক দিন আগে কোচ নিয়োগ দেয় দেখাতে পারবেন না। তাই এ প্রতিবন্ধকতাগুলো মেনে নিয়েই এ অঞ্চলের কোচদের কাজ করতে হয়। আমাদের আই লিগেও এমন হয়। দেখা যায় কুড়ি দিন আগেও কোচ নিয়োগ হচ্ছে। মৌসুম শুরুর আগ মুহূর্তে দায়িত্ব নিলাম। লড়াইটা লড়ে যাই, দেখা যাক না কি হয়।

প্রশ্ন : গত মৌসুমের তুলনায় ব্রাদার্সের এবারের দলটা একটু নিম্নমানে। এ দলটিকে নিয়ে আপনি কি লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন?
সুব্রত : দেখুন আমাকে আগে দলটাকে একটু দেখতে দিন। আমি কোনো খেলোয়াড় এখনো দেখিনি। আমাকে কিছুদিন সময় দিন। আর ফেডারেশন কাপ শুরু হচ্ছে তিন দিন পর। মাত্র ৩ দিনে কোচ-খেলোয়াড়দের মধ্যে সমঝোতাটা গড়ে ওঠে না। আমাদের প্রধান ফোকাস লিগে। ফেডারেশন কাপে যতটা ভালো করা যায় সে চেষ্টা করবো। আশা করি, লিগের আগে দল পুরোপুরি তৈর হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : আপনাদের সময়কার বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারের কথা মনে আছে?
সুব্রত : আছে। দুই জনের কথা তো ভালোই মনে আছে আসলাম ও মুন্না। মুন্নাতো মারা গেছেন। আসলাম এখন দেখা হলে চিনতে পারবেন কিন জানি না। সে বদলে গেছে, আমিও তো বদলে গেছি। দেখা হলে বোঝা যাবে কেউ কাউকে চিনতে পারবো কি না।

প্রশ্ন : কোচিংয়ে আপনার দর্শন কি?
সুব্রত : দেখুন দর্শনটা তৈর হয় দলের খেলোয়াড়দের উপর ভিত্তি করে। একটা কোচ নানাভাবে কৌশল তৈর করেন। একটা দলকে আমি চেলসির মতো খেলাতে পারবো না। আমাকে আগে দেখতে হবে ওই দলটি চেলসির মতো কি না। আসলে ব্রাদার্সে যে কৌশলটি কার্যকর মনে হবে আমি সেই কৌশলেই এগুবো। আমার চেয়ে শক্তিধর টিমের সাথে একরকম কৌশল হবে। আমার চেয়ে দূর্বল দলের সঙ্গে হবে আরেক রকম। আবার দুই দলের শক্তি যদি সমান হয় সেখানে হবে আরেক রকম কৌশল। আমার মনে হয় সব কোচের দর্শনই হওয়া উচিত ফিটনেস।

আরআই/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।