ব্যাংক খাতে কর্মী হয়রানি বন্ধ করুন : আতিউর রহমান
ব্যাংকিং খাতে কর্মী হয়রানি বাড়ছে উল্লেখ করে কর্মীদেও হয়রানি বন্ধ করতে প্রধান নির্বাহীদের হুশিয়ার করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাংকার্স বৈঠকে তিনি এই হুশিয়ারি দেন।
আতিউর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোরপূর্বক স্বেচ্ছায় চাকরিতে ইস্তফা, বরখাস্ত বা অপসারণ এবং এর পরবর্তীতে দায়দেনা প্রাপ্তিতে জটিলতা সৃষ্টি, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা পদোন্নতি স্থগিত করার নানা অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এসেছে। এসব অভিযোগের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অন্যায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে অনেক ভালো কর্মকর্তার দীর্ঘদিনের ব্যাংকিং ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যা ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে অন্তরায়।
তিনি আরো বলেন, এর ফলে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকুরির ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে যে, কোনো রকম কারণ দর্শানো ছাড়াই ব্যাংক তার কর্মীকে অপসারণ করতে পারবে -এমন অমানবিক বিধি বা ধারা ব্যাংকের মানবসম্পদ নীতিমালায় সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, সন্ধ্যা ৬ টায় কার্যদিবস শেষেও কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি নারী কর্মীদেরও কাজের নামে অহেতুক অফিসে আটকে রাখা হচ্ছে, যা মানবিক ব্যাংকিংয়ের পরিপন্থী।
তিনি বলেন, আরো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, ব্যাংকগুলো সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অযৌক্তিকভাবে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে তাদের মনোযোগ গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের পরিবর্তে আমানতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এ জন্যে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃত ব্যাংকিং সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।
আতিউর রহমান আরো বলেন, মূলত জনগণ ব্যাংক ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতি তাদের আস্থার প্রতিফলন হিসেবে সদিচ্ছায় ব্যাংকে আমানত রাখবে। ব্যাংকগুলো তাদের বার্ষিক বাজেট নির্ধারণের সময় ব্যবসায়ের যথাযথ উন্নতির দিকে নজর না রেখে সামর্থের চেয়ে অধিক মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরাও পর্ষদকে সন্তুষ্ট করতে এ ধরনের অযৌক্তিক মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা মেনে নেন। অযৌক্তিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নানামুখী অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেন। ফলে অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়। ব্যাংকগুলোর সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের পাশাপাশি এ খাতের পেশাজীবীদের কল্যাণের বিষয়টি দেখভাল করাও বাংলাদেশ ব্যাংকের নৈতিক দায়িত্ব। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি ও তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি চাই, ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের হয়রানির পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদ রিরূপাক্ষ পালসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এসএ/আরএস/পিআর