অধিনায়কত্ব ছাড়া অন্য এক মাশরাফি


প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

বার বার ইনজুরি ও অস্ত্রোপচারের ধকল সামলে মাঠে ফিরে আসা। বিকেএসপি তিন ও চার নম্বর মাঠটি একদমই পাশাপাশি। ফিতা দিয়ে মাপলে সাকুল্যে ২০-২৫ ফুটের মতো জায়গা হবে মাঝে। এর মাঝে শুধু পাকা রাস্তা। রাস্তার এপারে তিন নম্বর মাঠ। আর ওপারে চার নম্বর।

সকাল ৯টায় দুই মাঠে একসঙ্গে খেলা শুরুর পর পরই একটি মোটরসাইকেল দুই মাঠের পাশ দিয়ে বার দুয়েক চক্কার দিল। মোটরসাইকেল চালকের পরনে কালো শর্টস আর এনটিভির লোগে সম্বলিত লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের জার্সি।

দূর থেকে চিনতে এতটুকু কষ্ট হয়নি। আরে মাশরাফি না! হ্যাঁ তাই তো। মাশরাফিই মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন; কিন্তু তার দল রূপগঞ্জের না খেলা। মাশরাফি তা বাদ দিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন?

নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে। তাই না? তাহলে শুনুন, মাশরাফির দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের খেলা ছিল, সেটাও যেমন ঠিক- মাশরাফি খেলেছেন, সেটাও সঠিক। তবে যেহেতু সকালে তার দল আগে ব্যাটিং করেছে, তাই নড়াইল এক্সপ্রেসের সামনে সুযোগ ছিল খানিকক্ষণ নিজের মতো এটা ওটা করে সময় কাটাবার।

মোটরসাইকেলে কয়েক প্রস্থ চক্কর দিয়ে যে সুবোধ বালকের মতো ড্রেসিং রুমে বসেছিলেন, তাও নয়। তিন নম্বর মাঠে আবাহনী আর পারটেক্সের ম্যাচ দেখলেন আবাহনীর রিজার্ভ ক্রিকেটাদের পাশে বসে।

সেখানে মিনিট বিশেক কাটিয়ে সোজা প্রতিপক্ষ শেখ জামাল ড্রেসিং রুমের সামনে। ভাবতে পারেন, ওহ! ছেলে বেলার প্রিয় বন্ধু আব্দুর রাজ্জাক রাজ শেখ জামাল অধিনায়ক, তার টানেই বুঝি ওই ড্রেসিং রুমের সামনে গিয়ে বসা এবং শেখ জামাল ক্রিকেটারদের সাথে সময় কাটানো!

আসলে মোটেই তা নয়। মাশরাফি যখন শেখ জামাল ড্রেসিং রুমের সামনে, তখন শেখ জামাল ফিল্ডিংয়ে। কাজেই রাজ্জাকের তখন ড্রেসিং রুমে থাকার প্রশ্নই আসে না। আসলে মাশরাফিও বন্ধু আকর্ষণে যাননি। গিয়েছিলেন নিজের মতো করেই।

আসলে এটাই মাশরাফি। এক সার্বজনীন চরিত্র। যার দেহ, মন সবই যেন পরের জন্য উৎসর্গকৃত। বেশ কয়েক বছর পর এবার ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে তিনি আর অধিনায়ক নন। সেটা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন অনুজপ্রতিম মুশফিকুর রহীমের হাতে।

তার মানে যে দায়িত্ব ও কর্তব্যের তাগিদ অনুভব করছেন না, তাও নয়। সেটা আছে পুরোপুরিই। রূপগঞ্জের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে কর্মকর্তাদের সাথে দলের ভালো মন্দ নিয়ে কথা বলছেন ঠিকই।

খেলা শেষে ম্যানেজার সেলিম শাহেদ ও অন্যান্য কর্তাদের জানিয়ে দিলেন, ‘ভাই দুই ম্যাচ জিতলেও চ্যাম্পিয়ন লড়াইয়ে থাকতে হলে একজন ভালো মানের বিদেশি দরকার। এখন যে খেলছেন, তাকে দিয়ে হবে না। যেহেতু আগে খেলে গেছেন, তাই শিগগিরই সম্ভব ইংলিশ অলরাউন্ডার আসহার জাইদিকে আনার ব্যবস্থা করেন।

যে কথা, সেই কাজ। যতটুকু জানা গেছে আগামীকালই আসছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আসহার জাইদি। মোদ্দা কথা খেলার মাঠে ও ড্রেসিং রুমে দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং পারফর্ম করার জায়গায় ষোলআনা সিরিয়াস।

আগের ম্যাচের মতো এদিনও স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত পাঁচ-ছয় স্টেপ কম দৌড়ে ছোট রানআপে বল করলেন। একটি উইকেটও নিলেন। আর ব্যাট হাতে ১৭ রানের ছোট্ট অথচ ঝড়ো ইনিংসে দুুট ছক্কাও হাঁকালেন। যার একটি সীমানার অন্তত ৩০ গজ দূরে ছিটকে পড়লো।

তবে এর এর বাইরে যেহেতু দল পরিচালনার দায়িত্ব নেই, তাই অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার অনেক রিলাক্সড মাশরাফি; কিন্তু মাঠে সহযোগীদের চাঙ্গা করতে ভুল হলো না একটুও। ডিপ মিড উইকেট থেকে ফজলে রাব্বির বাজে থ্রো কিপার মুশফিকের নাগালের অনেক বাইরে গিয়ে গেল পয়েন্টে দাড়ানো মাশরাফির হাতে।

তা ধরে ঠিক চড়া গলায় বলে উঠলেন, ‘এ কি! এটা কেমন থ্রো!’

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।