নেপালে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৩২০০ ছাড়িয়েছে
নেপালে শনিবারের শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩,২১৮ জনে পৌঁছেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান রামেশ্বর দাঙ্গাল এ তথ্য জানান। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে বলা হয়েছে, ৮১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ৫৩৮ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
ভূমিকম্পের দুই দিন পর আজ সোমবার অনেক নেপালিকে তাঁবুর নিচে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তাঁরা প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট অনুভব করছেন। দুর্ঘটনায় আহত ও গৃহহীন বিপুলসংখ্যক লোককে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
নেপালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য দীপক পান্ডা বলেন, ‘সারা দেশ থেকে আসা উদ্ধার ও সহায়তার আবেদনে সাড়া দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
কাঠমান্ডু যেন তাঁবুর শহর :
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নগরী কাঠমান্ডুর হাসপাতাল গুলোতে আহত ও অসুস্থ অনেকের জায়গা না হওয়ায় তাদেরকে বাধ্য হয়ে আরেকটি রাত কাটাতে হয়েছে তাঁবু অথবা খোলা আকাশের নিচে। ফের ভূমিকম্পের আতঙ্কে তারা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতেও ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। এছাড়া, বিপুলসংখ্যক মানুষের চাপ সামলাতে না পেরে কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজের মাঠেই তাঁবু টানিয়ে করা হয়েছে অপারেশন থিয়েটার। সেখানেই চলছে অসুস্থ ব্যক্তিদের অস্ত্রোপচার। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঠিক চিত্র এখনো জানা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
অক্সফাম অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী হেলেন এসজোকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত, হাসপাতালে রোগী বা লাশ রাখার জায়গা হচ্ছে না।’
ত্রাণের আহ্বান
ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিকে দুর্যোগপূর্ণ উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছে নেপাল। দেশটির তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজাল ভারতীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের দেশ একটি দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনেক সহায়তা ও ত্রাণ প্রয়োজন।’
আন্তর্জাতিক সহায়তা
নেপালের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমেরিকা একটি বিশেষ দল পাঠাচ্ছে। প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসএইড। নরওয়ে দিচ্ছে ৩৯ লাখ ডলার। প্রতিবেশী ভারত বেশ কিছু হেলিকপ্টার, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল এবং ৪০টি শক্তিশালী উদ্ধারকর্মী দল ও ডগ স্কোয়াড পাঠিয়েছে। চীন ডগ স্কোয়াডসহ উদ্ধারকর্মীদের ৬২টি দল পাঠিয়েছে। পাকিস্তান চারটি এয়ারক্রাফট, ৩০টি হাসপাতাল শয্যা, সেনাবাহিনীর চিকিৎসক দল, খাবার, তাঁবু ও কম্বল পাঠাচ্ছে।
নেপালের জনগণকে সহায়তার জন্য ছয়টি চিকিৎসা দলসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমানে করে মোট ৩৪ জনের একটি দল কাঠমান্ডু পৌঁছায়।
এছাড়া ইরান, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দুর্যোগে নেপালের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে এ ভূমিকম্পটি। রিখটার স্কেলে ৭.৯ মাত্রার শক্তিশালী এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কাঠমান্ডু ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পোখারার মধ্যবর্তী লামজুংয়ের ভূগর্ভের ৯.৩ মাইল গভীরে।
এআরএস/পিআর