আব্বাসকে ঠেকাতে একাট্টা সুইপাররা


প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

১৯৯৩ সালের কথা। দুই যুগ কেটে গেছে। কেটে যায়নি মনের ক্ষত। মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ পেলেও আজও চাকরি হারানোর আতঙ্কে থাকেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সুইপাররা। এ আতঙ্ক তৈরি করেছিলেন ঢাকার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মির্জা আব্বাস।

চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে চলা ওই আন্দোলনে পুলিশ উপর্যুপরি হামলা চালায়। হামলায় চারদিনের এক শিশু নিহত হয়। আহত হন অনেকেই। ওই ঘটনা আজও তাড়া করে বেড়ায় সুইপারদের।
   
আগের ঘটনা মনে রেখেই এবার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট দিবেন সুইপাররা। সুইপার কলোনিতে ভোট চাইতে গিয়ে এর প্রমাণও পেয়েছেন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। ২২ এপ্রিল পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে মির্জা আব্বাসের পক্ষে ভোট চাইতে গেলে সুইপারদের নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন আফরোজা আব্বাস।

রাজধানীর গণকটুলির সুইপার কলোনিতে গিয়ে জানা যায় নানা ক্ষেভোর কথা। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণা করে। কাঠামোতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরও আমলে নেয়ার কথা। নেয়া হয়ও বটে। তবে আংশিক। বাদ পড়ে যান সিটি কর্পোরেশনের সুইপাররা।

সেনাশাসক এরশাদ মনোনীত ঢাকার মেয়র নাজিউর রহমান মঞ্জুর সুইপারদের চাকরি স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় ৩৮ জন সুইপারের চাকরি স্থায়ীও করা হয়। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রামে নামও ছিল সুইপারদের। এরপর কর্নেল মালেক মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে ১৯৯০ সালে চাকরি স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। মির্জা আব্বাসও ক্ষমতায় এসে কর্নেল মালেকের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।

এদিকে বিএনপির ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামোয় সুইপাররা জায়গা না পেয়ে ক্রমশই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সুইপাররা মেয়র মির্জা আব্বাসকে শুরু থেকেই চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানান। প্রথমে ইতিবাচক সাড়া দিলেও ১৯৯২ সালের শেষের দিকে এসে চাকরি স্থায়ীকরণের বিপক্ষে অবস্থান নেন মির্জা আব্বাস। এদিকে চাকরি স্থায়ীকরণ এবং ১৯৯১ সালের বেতন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির জন্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সুইপাররাও আন্দোলনের ডাক দেন।

দাবি না মানার প্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালের ১৩ মে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী সমন্বয় কমিটি সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাজও বন্ধ করে দেন সুইপাররা। সাতদিন বন্ধ থাকার পর ঢাকার সমস্ত অফিস-আদালতে বিপর্যয় নেমে আসে। অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো নগরী।

অন্যদিকে দাবি না মেনে উল্টো আন্দোলনের ‘অপরাধে’ পুলিশি অ্যাকশনে যান মেয়র মির্জা আব্বাস। হাজারীবাগ, সায়েদাবাদ সুইপার কলোনিতে পুলিশ হামলা চালায়। সায়েদাবাদ সিটি কর্পোরেশনের মোটর গ্যারেজের কাছে আন্দোলনরত কর্মচারীদের ওপর পুলিশের সহায়তায় আব্বাসের অনুসারীরা হামলা চালায়। হামলায় শ্রমিক নেতা নাসিমা, ইব্রাহিমসহ অনেকেই আহত হন। পরের দিন সায়েদাবাদ ধলপুর আউটফল ১৪ নম্বর সিটি কলোনিতে আবারও পুলিশ হামলা করে। এসময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারসেলের আঘাতে তৎকালীন শ্রমিক নেতা হারুন মিয়ার চার দিনের শিশু সন্তান আতুর ঘরেই নিহত হয়।

এ ঘটনায় শ্রমিকরা আরও ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন। পরে অবস্থা বেগতিক জেনে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আব্দুস সালাম তালুকদার দ্রুত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন শ্রমিকেরা। ১৯৯৩ সালের ২৮মে এক বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।  ১৯৯১ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী, বেতন, ভাত, বোনাস, ছুটি যথারীতি পেলেও অবসরকালীন ভাতা থেকে এখনও বঞ্চিত সুইপাররা। আর এর জন্যও মির্জা আব্বাসকেই দায়ী করে আসছেন তারা।

সুইপার তথা স্কেভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মনু মিয়া ওই সময়ের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই ঘটনা আমাদের মনে বড় ক্ষত তৈরি করেছিল। আজও ভুলতে পারি না। অবসরকালীন ভাতা আজও পাই না, তৎকালীন মেয়র মির্জা আব্বাস বিষয়টি মীমাংসা করতে পারতেন’।

সংগঠনের সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘রক্ত দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। তবুও ভয়ে থাকি। কখন, কি হয়। আমরা নিম্নবর্গের কর্মচারী। প্রশাসন চাইলে যে কোনো সময়ে আমাদের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মেয়ররা এসে নগরের উন্নয়ন করেন। এই উন্নয়নে আমাদের অংশগ্রহণ প্রত্যক্ষ। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করা হয় না। সুইপারদের এখনও ৮০ ভাগ দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে শ্রম দিয়ে থাকে। ২৬৫ টাকায় এই শহরে কিছুই হয় না। যে আমাদের ভাগ্য উন্নয়নে অবদান রাখবে আমরা তাকেই প্রত্যাশা করছি’।  

এএসএস/একে/আরআইপি 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।