নেত্রকোনায় ধান ক্ষেতে বিটল পোকা, দিশেহারা কৃষক
নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দার বড়খাপন ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের নানীয়া হাওরের ধান খেতে নতুন প্রজাতির পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার নাম রাইস ব্লাক বিটল। এ পোকাগুলো ক্ষেতের ধান গাছ গুঁড়ি থেকে কেটে ফেলছে। এতে করে এলাকার কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
এলাকাবাসী ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ খানেক আগে গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক ও বর্তমান ইউপি সদস্য সুবোধ চন্দ্র শীল (৪৬) তাঁর বাড়ির সামনের একটি ক্ষেতে ধান গাছ গোড়া থেকে কাটা অবস্থায় মাটিতে পড়ে শুকিয়ে থাকতে দেখেন। প্রথমে তিনি ভাবেন গাছগুলো ইঁদুরে কেটে ফেলছে। কাছে গিয়ে দেখেন তেলাপোকার মত শক্ত আবরণ যুক্ত কালো রংয়ের ছোট ছোট পোকায় সারা ক্ষেত ভরে আছে। পোকাগুলো ক্ষেতের কাঁচা ধান গাছ গুঁড়ি থেকে কেটে ফেলছে।
পরদিন পার্শ্ববর্তী শ্যামল শীল, পীযুষ চন্দ্র, যতীন্দ্র সরকার, জীতেন্দ্র দেবনাথ, বিকাশ দেবনাথসহ অন্যান্য কৃষকের ক্ষেতেও এ পোকা ছড়িয়ে পড়ে। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার জন্য কৃষকরা স্থানীয় বরইউন্দ ও যাত্রাবাড়ি বাজার থেকে কীটনাশক এনে তা ক্ষেতে প্রয়োগ করেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। এ অবস্থায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে ইউনিয়ন ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বেটা ফ্লোরা, ওরাজেনসহ সাত ধরনের কীটনাশক প্রয়োগেও কোন ফল আসেনি।
এতে করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিরি) সাহায্য চায়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পিএসও) ড. মোফাজ্জল হোসেন, রোগতত্ত্ব বিভাগের ড. শিরিন আক্তার, বিজ্ঞানী মনিরুজ্জামান ও বিজ্ঞানী ফারজানা নওরিনসহ চার সদস্যের একটি দল মাঠে আসেন। দলটি সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিমকো ঔষধ কোম্পানির রাগবি নামে একটি কীটনাশক কৃষকদেরকে ক্ষেতে প্রয়োগের পরামর্শ দেন।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক সুবোধ মেম্বার বলেন, আমি এবার দুই একর জমিতে ইরি ৫৮ প্রজাতির ধান করেছিলাম। সব ধানই পোকা কেটে ফেলছে। ঔষধে কোন কাজ হয়নি। এমন পোকা আগে কখনো দেখিনি। কৃষি কর্মকর্তারা সারাক্ষণ মাঠে রয়েছেন।
ভূক্তভোগী কৃষক পীযুষ চন্দ্র (৪৩) বলেন, এই পোকা সাত আট দিনের মধ্যে সমস্ত মাঠে ছড়াইয়া পড়ছে ও ধানগাছ কেটে ফেলেছে। আমি দেড় একরের মতো জমিতে ইরি ২৮ ও ২৯ প্রজাতির ধান করেছিলাম। সব ধানই পোকা কেটে ফেলছে। এই ফসলের উপরেরই আমার সব কিছু নির্ভর। আমি এবার পথে বসব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, এ পোকা ফসলের ক্ষেতে আগে কখনো দেখা যায় নি। গ্রামে ২০ হেক্টরের মতো ইরি ২৮, ২৯ ও ৫৮ প্রজাতির ধান চাষ করা হয়েছিল। সমস্ত ধান গাছ পোকা কেটে ফেলছে। আমি ও আমার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সব সময় মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিরি) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পিএসও) ডা. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি কিছু পোকা নিয়ে আজ পরীক্ষা করে দেখেছি এগুলো শুষ্ক স্থানে থাকতে পছন্দ করে। অরগানো ফসফরাস গ্রুপের ঔষধে এটি মারা যায়। কৃষকদের ক্ষেতে যদি পানির ব্যবস্থা করা যেত তাহলে হয়তো কিছু ফসল রক্ষা পেত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সমীর কুমার সরকার বলেন, রাইস ব্লাক বিটল নামের পোকাটি শান্ত স্বভাবের। এর আগে তেমন কোন ক্ষতি করতে আমি শুনিনি। যেখানে ইরিগেশনের সুযোগ নেই সেখানে এরা সাধারণত বাস করে থাকে।
এসএস/এআরএস/পিআর