সেই মুশফিক, এই মুশফিক


প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ৩০ মার্চ ২০১৭

‘মুশফিক হঠাও, মুশফিক হঠাও’ কদিন আগেও সারা দেশে মুখ্য আলোচনা ছিল এটাই। তবে ব্যাটসম্যান মুশফিককে নয়, উইকেটরক্ষক মুশফিকই সবার চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। আর তাই বাধ্য হয়েই গ্লাভস ছাড়েন তিনি। শ্রীলঙ্কায় প্রথম টেস্টে উইকেটের পেছনে ছিলেন লিটন দাস। প্রথম টেস্টে দারুণ কিপিং করে মুশফিকের গ্লাভস হাতে ফিরে আসার পথটাও কঠিন করে দেন এ নবীন।

উইকেটকিপিং যে মুশফিকের আবেগের জায়গা, এ কথা কম বেশি সবাই জানা। বোঝাতে চেয়েছেন কিপিংটা ছাড়লে ব্যাটসম্যান মুশফিককেও হারাবে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেও বলেছেন, ‘কিপিং আমাকে ভালো ব্যাটিং করতে সাহায্য করে।’

এ কথা যেন শুনেছিলেন স্বয়ং ভাগ্যদেবীও। তা না হলে দ্বিতীয় টেস্টের আগে করে কেন ছিটকে গেলেন লিটন? তাও এমন সময়ে ইনজুরিতে পড়েছিলেন লিটন, যখন বিকল্প উইকেটরক্ষক উড়িয়ে নেওয়ার সময়ও ছিল না। আবার গ্লাভস হাতে সেই মুশফিক। কিন্তু পুরো ম্যাচে কি সেই মুশফিককে দেখেছে বাংলাদেশ?

এ মুশফিক যেন বদলে যাওয়া একজন। উইকেটের পেছনে মুভমেন্ট দেখে অবাক হয়েছেন ক্রিকেটবোদ্ধারাও। লুফে নিয়েছেন দারুণ সব ক্যাচ। রানআউট-স্ট্যাম্পিংয়েও ছিলেন চটপটে। আবার আলোচনায় মুশফিক। তবে এবার আর ‘মুশফিক হটাও’ নয়। এবার আলোচনা, ‘কিভাবে বদলে গেলেন মুশফিক?’

জানতে চাওয়া হয় সদ্য সাবেক হওয়া গেম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছে। কারণ তার হাত ধরেই আজকের মুশফিককে পেয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিক যখন বিকেএসপির ছাত্র তখন ফাহিম ছিলেন তার কোচ ও শিক্ষক।

একান্ত আলাপে জাগোনিউজকে ফাহিম বলেন, ‘ইদানিং উইকেট কিপিংয়ে আমরা মুশফিকের অনেক উন্নতি দেখছি, বিশেষ করে পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রে। আমি আগে যেটা লক্ষ্য করেছিলাম পেস বোলিংয়ের সময় ওর যে স্টান্সটা হয়, পাওয়ার পজিশনটা হয় ওইটা খুব দুর্বল ছিল আগে। যে স্ট্রাইপটা ও নিত অনেক বড় বড় স্ট্রাইপ থাকতো। যে কারণে ওর সাইডবেজ মুভমেন্টে সমস্যা হতো, ডাইভ দিতে অসুবিধা হতো। এখন যেটা হয়েছে ও এখন অনেক শর্ট পাওয়ার পজিশন নিচ্ছে, শর্ট স্টান্স নিচ্ছে; যে কারণে ও খুব দ্রুত মুভমেন্ট করতে পারছে, সাইডবেজ মুভ করতে পারছে এবং এখন বল ধরায় আগের চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে।’

ফাহিমের মতে, মুশফিক বাংলাদেশের সেরা কিপারের একজন। তবে সামান্য কিছু কনসেপচুয়াল ভুলের কারণে মাঠে মিস করেন তিনি। আর এ জায়গায় মুশফিক নিজেই নিজেকে পরিবর্তন করেছেন বলে জানান ফাহিম, ‘ওর কনসেপচুয়াল ভুল ও কিছু ধারণাগত ভুল ছিল সে সম্পর্কে ওর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। এবং ও জানতে পেরেছে যে ওর কি করা উচিত। সে আলাপের ফলশ্রুতিতে ও কিছু নতুন কাজ করছে নিজে নিজেই তার ফলে ওর কিপিংয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’

এখনও মুশফিককে অনেক কাজ করতে হবে বলে মনে করেন ফাহিম। তার মতে পেস বোলিংয়ে সাবলীল কিপিং করলেও স্পিন বোলিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু ভুল ধরা পড়েছে তার চোখে। তবে এ নিয়ে কাজ করলে মুশফিক বাংলাদেশের সেরা কিপার হবেন বলেই বিশ্বাস তার। আর মুশফিক চ্যালেঞ্জ নেওয়াকে উপভোগও করেন। এ চ্যালেঞ্জও ঠিকই উতরে যাবেন তার শিষ্য, এমন বিশ্বাস ফাহিমের।

‘আমার মনে হয় যে কোন চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষেত্রে ওকে কেউ দ্বিতীয় বানাতে পারবে না। ওর ছোট খাট ভুল গুলো আছে তা কাটিয়ে উঠতে পারলে সে অন্যতম সেরা একজন উইকেটরক্ষক। আমাদের এখন যারা আছে তাদের সবার সমকক্ষ এমনকি তাদের চেয়ে বেশি ভালো হতে পারে। এবং সে খুব স্মার্ট, খুবই ফোকাসড এবং কঠোর পরিশ্রমী। সব মিলিয়ে আমরা আরেকটি মুশফিককে দেখতে পাবো যে হয়তো কিপার হিসেবে আরেকটু বেশি ভালো বা সমৃদ্ধ এবং বিশ্বস্ত।’

আরটি/এনইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।