মাশরাফির ধারণা, শেষ ম্যাচও বিগ স্কোরিং হবে
প্রাচীন সভ্যতা ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের শহর ডাম্বুলা ছেড়ে আবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী ব্যস্ত শহর কলম্বোয় টাইগাররা। স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১১টার দিকে ডাম্বুলার আলিয়া রিসোর্ট থেকে মাশরাফি বাহিনীর টিম বাস যাত্রা করল কলম্বোর পথে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুুনিক শহর কলম্বোয় ভারত মহাসাগরের পাড়ে তাজ সমুদ্র হোটেলে যখন এসে বাস থামল তখন ঘড়ির কাটা বিকেল তিনটা ছুঁইছুঁই। হোটেলে চেক ইন করেই সবাই যার যার রুমে। পুরোপুুরি বিশ্রাম। আগামীকাল সকাল নয়টায় প্র্যাকটিস।
এবার আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নয়। যে মাঠে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে হবে, সেই সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠেই কাল অনুশীলন করবে মাশরাফির দল। তিন ম্যাচের সিরিজে এখনো ১-০তে এগিয়ে টাইগাররা। বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ম্যাচ ধুয়ে মুছে গেছে। এতে করে অপেক্ষার প্রহর লম্বা হয়েছে।
এখন সিরিজ নিজেদের করতে হলে কলম্বোয় শেষ ম্যাচ জিততে হবে। একটা পক্ষের ভাবনা এমন। আবার বিপরীত চিন্তার ভক্ত-সমর্থকও কম নয়। বরং সে সংখ্যাই বেশি। ২৮ মার্চ ডাম্বুলার রণগিরি স্টেডিয়ামে বৃষ্টিতে খেলা পণ্ড না হলে কি হতো? বাংলাদেশ ৩১২ রানের বড় টার্গেট ছুঁয়ে ফেলতো? নাকি না পারার হতাশায় পুড়তো? এ প্রশ্ন এখনো অনেকের মনেই উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।
টাইগাররা বছর তিনেক ধরে ওয়ানডেতে ভালো খেলে সত্য, কিন্তু ৩০০ করে কম। তাও আবার রান তাড়া করে! নাহ কাজটা সহজ হতো না; এমন চিন্তার সমর্থক-ভক্তের সংখ্যাই হয়তো বেশি। অনেকেই হয়তো কাল রাতে এমন ভেবে বলেছেন, ‘যাক বাবা, শাপে বর হলো। বৃষ্টিতে খেলা না হয়েই ভালো হয়েছে। হলে হয়তো মাশরাফির দল পারতো না। তার চেয়ে বরং কলম্বো গিয়ে আবার নতুনভাবে শুরু করার যাবে। সেটাই মঙ্গল।’
যারা এমন ভেবে বসে আছেন, তাদের জন্য খানিক অবাক করা খবর, বাংলাদেশ দল কিন্তু মোটেই তা ভাবেনি। আজ সকালে ডাস্বুলার আলিয়া রিসোর্টে নাস্তার টেবিলে প্রায় সব ক্রিকেটারকেই পাওয়া গেল। তাদের সবার অভিব্যক্তি ও কথাবার্তায় পরিষ্কার ফুটে উঠল, খেলা হলেই ভালো হতো। কারণ উইকেট খুব বেশি ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি ছিল।
অধিনায়ক মাশরাফি এবং ওপেনার তামিম ইকবালের সাথে কথা বলে মনে হলো, তারা বরং আফসোসই করছেন, ‘ইস, কেন যে খেলাটা হলো না। হলে আমাদের সম্ভাবনাই থাকতো বেশি। তা কি করে হয়? লক্ষ্য তো বড়; ৩১২। তাতে কী?
এটা আসলে ছিল সাড়ে তিনশো রানের উইকেট। ঠিক কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবের মাঠের পিচের মতো ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ। ওই পিচে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি একাদশের করা ৩৫৪ রানও প্রায় তাড়া করে ফেলছিলাম আমরা।’
ধরে নিন ওই পিচের কার্বন কপি এক উইকেটে খেলা হয়েছে মঙ্গলবার। ওপেনার তামিম ইকবালের কথাও তা-ই, ‘ইস কেন যে বৃষ্টি আসলো। খেলাটা হয়ে গেলে খুব ভালো হতো। উইকেট খুব ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি ছিল। মনে হয় সমস্যা হতো না।’
এমন নয় বাংলাদেশ আগে কখনো অত বড় স্কোর তাড়া করে জিতেনি। জিতেছে। তাও একবার নয়, দুবার। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩১২ আর গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের সাথে ৩১৮ রানের পিছু ধেয়ে ঠিকই লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের।
এদিকে অধিনায়ক মাশরাফি শেষ ম্যাচেও ব্যাটিং উইকেটের আশাই করছেন। এখন যেটা সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে রূপান্তরিত হয়েছে, সেই তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি হবে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির ধারণা, এসএসসির (সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব) মাঠও হবে ব্যাটিং সহায়। মাশরাফির ধারণা, ওই পিচেই তিনশোর আশপাশেই রান উঠবে।
তাই তো মাশরাফির মুখে এমন কথা, ‘আমি জেনেছি, সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠেও ২৮০-২৯০ রান ওঠে।’সোজা সাপটা কথা বলা যার স্বভাব, সেই বাংলাদেশ অধিনায়ক নিশ্চয়ই তার দলকে এ বার্তা দিতে ভুল করেননি। হয়তো কাল রাতেই সহযোগী ক্রিকেটারদের জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ সিরিজ নিশ্চিত করতে হলে আর একটি সিড়ি পাড় হতে হবে। শেষ ম্যাচ জিতলেই সিরিজ আমাদের। এবং ধরে নিতে হবে শেষ ম্যাচটিও হবে বিগ স্কোরিং। কাজেই বিগ স্কোরিং গেমের মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই থাকতে হবে।’
এনইউ/জেআইএম