আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি চান মাশরাফি


প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৭

সাফল্য হচ্ছে আকাশের মত। অনেক ওপরে উঠলেও তা শুধু দেখাই যায়। ছোঁয়া যায় না। এমন কোন মানদণ্ড নেই, যেখানে পৌঁছুলে বলা যায়, সাফল্যের একদম চুড়ায় পৌঁছে গিয়েছি। আর ওপরে ওঠার জায়গা নেই।

তেমনি ভালো খেলারও শেষ বলে কিছু নেই। বাংলাদেশ ৭২ ঘন্টা আগে এই ডাম্বুলায় ব্যাটিং-বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের নজর কাড়া নৈপুণ্যের দ্যুতিতে শুধু ভক্ত সমর্থকদের মনই জয় করেনি, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাও জাগিয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ কেমন ভাল খেললে উপুল থারাঙ্গার দলকে পরের ম্যাচে মানে কালও হারাতে পারবে? ক্রিকেট এমন এক খেলা, যাকে কোন নির্দিষ্ট ছক বা ফর্মূলায় ফেলারও উপায় নেই। এমন কোন নির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই যা প্রতিদিন প্রয়োগ ঘটাতে পারলেই জেতা যাবে। ভাল খেলারও এমন কোন বাঁধাধরা রূপ নেই, যা দিয়ে প্রতিদিন জেতা সম্ভব।

তবে চলতি ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে একটা সত্য মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তাহলো- বাংলাদেশ যদি তার সামর্থ্যরে সেরাটা উপহার দিতে পারে, তাহলে শ্রীলঙ্কার এই দলটির তাদের সামনে কুলিয়ে ওঠা কঠিন।

Babuঅনেকেরই মত, মাশরাফির দল ৭২ ঘন্টা আগে এই রণগিরি স্টেডিয়ামে যে ক্রিকেট খেলেছে, তা খেলতে পারলেই ব্যস- শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ বিজয় আনন্দে মেতে ওঠা যাবে। লঙ্কা বধের উৎসবও উদযাপন করা যাবে। অধিনায়ক মাশরাফির অনুভবও তাই।

টাইগার অধিনায়কের একান্ত বিশ্বাস, ‘অস্বাভাবিক কিছু করার প্রয়োজন নেই। প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংটা হলেই চলবে।’

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের হাতছানি সামনে। কী করলে সিরিজ নিশ্চিত হবে’- সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠলো। মাশরাফি কোনরকম ভনিতা না করে সোজা বাংলায় বলে উঠলেন, ‘অবশ্যই আমাদের সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা আছে প্রচুর। তার জন্য প্রথম ম্যাচে যেভাবে খেলেছি, ঠিক সেভাবে খেলতে পারলেই হবে।’

প্রথম ম্যাচে কেমন খেলেছে মাশরাফির দল? যারা দেখেছেন তারা ভালই জানেন। একটা ছকে বাঁধা পারফরমেন্স। শুরু তেমন ভাল হয়নি। উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গেছে ২৯ রানে। ফিরে গেছেন মারকুটে ওপেনার সৌম্য, ১০ রানে।

প্রথম উইকেটে খুব বড় স্কোর আসেনি তাতে কি? তামিম আর সাব্বির দেখে ও বুঝে খেলে সেই অপূর্ণতা ও ঘাটতি পুষিয়ে ফেলেন। তাদের দ্বিতীয় উইকেটে তোলা ৯০ রানের পার্টনারশিপে বাংলাদেশ পেল শক্ত ভীত।

তারপর সাব্বির পঞ্চাশের ঘরে পৌছে হঠাৎ আউট। মুশফিকুর রহীমও আলতো হাতে খেলতে গিয়ে ল²ণ সান্দাকানের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। মাত্র ১ রানের ব্যবধানে পড়ল দুই উইকেট। ওই ছোট্ট ছন্দপতনের পর যা দরকার ছিল, ঠিক সে কাজটিই করলেন তামিম ও সাকিব।

লঙ্কানরা যাতে আর চেপে না বসতে পারে, তাই বাড়তি সতর্কতা। সাবধানী রূপ। তাই তো সাকিবের মত হাত খুলে খেলা পারফরমারও পঞ্চাশে পৌঁছুলেন একটি মার বাউন্ডারিতে। ওই জুটিতে উঠল আরও ১৪৪। জুটি ভাঙ্গার পর তামিম আরও কিছুক্ষণ উইকেটে কাটিয়ে ৪৮ নম্বর ওভারের পঞ্চম বলে আউট হলেন।

তাতে হাতে পর্যাপ্ত উইকেট থাকলো। আর সে কারণেই শেষ ১৩ বলে ৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি সাজালেন মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন। তারই যোগফল ৩২৪। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর।

এই পাহাড় সমান স্কোর গড়া মানেই বাংলাদেশের নৈতিক জয়। তারপর দরকার ছিল লঙ্কান টপ অর্ডারে অল্প সময় ও সংগ্রহে ভাঙ্গন ধরানো। শূন্য রানে প্রথম, ১৫ রানে দ্বিতীয় আর ৩১ রানের ভিতর সাজঘরে তিন সেরা ব্যাটসম্যান। এখানেই কার্যত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে উঠলো।

Vision

শুরুর ক্ষত সারাতে মাঝে একটু দেখে খেলা ছাড়া পথ ছিল না। তাতেই বাড়লো ওভার পিছু  রানরেটের লক্ষ্য মাত্রা। আর সেই বেড়ে যাওয়া লক্ষ্য মাত্রা ছুঁতে গিয়ে আর জুটিও গড়া হলো না লঙ্কানদের।

থিসারা পেরেরা শেষ দিকে ৩৫ বলে ৫৫ রানের ঝড়ো ইনিংস না খেললে হয়ত স্কোর দু‘শোর নিচেই শেষ হয়ে যেত। বোলাররা তাদের কাজগুলো করলেন ঠিকমত। প্রথম ওভারে ব্রেক থ্রু উপহার মাশরাফির।

অধিনায়ক যখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, তখন বাকিরাও সে পথেই হাঁটেন। মাশরাফির সাথে নতুন বলে নেয়া অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম স্পেলেই ফিরিয়ে দিলেন লঙ্কান ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ কুশল মেন্ডিসকে।

এরপর তাসকিনও প্রথম ওভারে আঘাত হানলেন, লঙ্কান অধিনায়ককে ফিরিয়ে দিয়ে। তারপরের কাজটা সারলেন মোস্তাফিজ। সাকিবও নিজের ভূমিকা পালন করলেন ঠিকমত। সব বোলার ভাল লাইন ও লেন্থে বল ফেললেন। আর ফিল্ডিং ব্যাকআপ হলো সে রকম। ক্যাচিং হলো যারপরনাই ভাল। সৌম্য-মিরাজের সাথে দু’ দুটি অসাধারন ক্যাচ ধরলেন পরিবর্তিত ফিল্ডার শুভাগত হোম। এক কথায় ‘আদর্শ টিম পারফরমেন্স।’

সবার চেষ্টার ফসল ওই জয়। যেখানে তামিম ইকবালে বিগ হান্ড্রেড অবশ্যই বড়। সঙ্গে সাব্বির-সাকিবের জোড়া ফিফটির অবদানও কম নয়। আবার শেষ ১৩ বলে মোসাদ্দেক-মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো উইলোবাজিও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

তারপর বোলারদের মাপা বোলিং, সাথে ফিল্ডিং, ক্যাচিং- সব ডিপার্টমেন্ট এক সাথে জ্বলে ওঠা। এর চেয়ে ভাল টিম পারফরমেন্স আর কী হয়? তাই তো এর চেয়ে ভাল কিছু নয়, ঠিক ২৫ মার্চের দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং, সাঁড়াশি বোলিং আর টাইট ফিল্ডিং এবং দক্ষ ক্যাচিংটাই চান মাশরাফি।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।