পাকিস্তানকে হারানোর সেরা সুযোগ বাংলাদেশের
পাকিস্তানকে হারানোর এটাই সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশের। পুরো ক্রিকেটবিশ্ব একমত হবে যে, এই সিরিজে বাংলাদেশই ফেভারিট। বৃহস্পতিবার প্রাক-সিরিজ কথোপকথনে সাকিব আল হাসানের মুখেও একই কথা, ‘পাকিস্তানকে হারানোর এটাই আমাদের সেরা সুযোগ। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’
প্রতিপক্ষ অধিনায়কও এটা মেনে নিতে কুণ্ঠিত নন যে, ‘বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বেশ কয়েকজন ভালো ক্রিকেটার রয়েছে ওদের দলে।’ সব মিলিয়ে এই প্রথম বাংলাদেশ ফেভারিট পাকিস্তানের বিপক্ষে। যাদের একবারই শুধু হারিয়েছে বাংলাদেশ ১৬ বছর আগে। সেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। এরপর শুধুই খরা। এতদিন পর অধরা সোনার হরিণ ধরার সুযোগ।
সবকিছুই স্বাগতিকদের অনুকূলে। বিশ্বকাপে দুরন্ত পারফরম্যান্সে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্নপূরণ, গত পরশু একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে সাব্বির রহমানের শতকে মধুর জয় ইঙ্গিত দিচ্ছে শুভ সূচনার। এই পটভূমিতে আজ শুক্রবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ডে-নাইট ম্যাচ শুরু হবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। সরাসরি দেখা যাবে গাজী টিভিতে।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এলেন আজকের ম্যাচে টাইগারদের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু একটু পরে আজহার আলীর সঙ্গে ট্রফি উন্মোচন করলেন সিরিজের অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। এক ম্যাচে নিষেধাজ্ঞার কারণে আজ তিনি খেলতে পারবেন না। প্রথম ম্যাচে খেলতে না পারলেও অনুশীলনে দলের সঙ্গে থেকে সহযোদ্ধাদের উৎসাহ জোগাতে কার্পণ্য করেননি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক।
শেষ অনুশীলনেও স্বাগতিকদের দেখা গেল ফুরফুরে মেজাজে। নাসিরকে লম্বা সময় নেটে বোলিং করিয়ে কোচ বুঝিয়ে দিলেন ১০ ওভার বোলিং করার মানসিকতা থাকতে হবে তার। পাকিস্তানের বিপক্ষে নাসির হোসেনের ভালো পারফরম্যান্সও রয়েছে। অনুশীলন ম্যাচে সাব্বির রহমানের মনোমুগ্ধকর সেঞ্চুরিতে পাওয়া জয়ে দলের সবার মনোবল চাঙ্গা। বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা রয়েছেন ফর্মে।
বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর টানা দুটি সেঞ্চুরি, সৌম্য সরকারের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং কিংবা রুবেলের বিধ্বংসী বোলিংয়ের টুকরো টুকরো ছবি আজ মিরপুরে দেখার অপেক্ষায় টাইগার ভক্তরা।
শুধু দুশ্চিন্তা ওপেনিং জুটি নিয়ে। অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল ফর্মে নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করে ডাক পাওয়া রনি তালুকদার প্রস্তুতি ম্যাচে করেছেন শূন্য। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণে আবুল হাসান জায়গা পেলেও আজ তার একাদশে থাকার সম্ভাবনা কম। পেস বোলিংয়ে রুবেলের সঙ্গী হবেন তাসকিন আহমেদ। আর স্পিনে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে আরাফাত সানি, নাসিরই ভরসা। পার্টটাইমার মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির তো রয়েছেনই। উইকেটে ঘাসের লেশমাত্র নেই।
২০১২ সাল থেকে দুই বোর্ডের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পর আবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হচ্ছে। এর আগে পাকিস্তান সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে এসেছে ২০১১ সালে। ২০১২ সালের সফরে না যাওয়ার কারণে বিসিবি পিসিবিকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে এই সিরিজের আয়োজন করেছে। বৃষ্টি হতে পারে আজ। এদিকে তুলনায় বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান অনভিজ্ঞ। দলে ১০০-র বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার রয়েছেন মাত্র দু’জন- সাঈদ আজমল ও মোহাম্মদ হাফিজ।
সেখানে বাংলাদেশের পাঁচ ক্রিকেটার ১০০-র বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। মিসবাহ-উল-হক ও শহীদ আফ্রিদিকে ছাড়া মাঠে নামবে পাকিস্তান। অধিনায়ক আজহার আলী সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৩ সালে। অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে নিষেধাজ্ঞার দরুন দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকা সাঈদ আজমল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন। মোহাম্মদ হাফিজ এখনও বোলিং করার অনুমতি পাননি। বিশ্বকাপে ওয়াহাব রিয়াজের আক্রমণাত্মক বোলিং কিছুটা হলেও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে সাকিবদের জন্য। ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান নড়বড়ে। এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে স্বাগতিকদের।
হোম কন্ডিশন ও নিজেদের ফেভারিট হিসেবে ধরে নেয়ায় চাপটা বেশি অনুভব করছেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘এই সিরিজটাকে আলাদা কিছু বলব না। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো করার এখন পর্যন্ত এটাই আমাদের জন্য সেরা সুযোগ। এই কারণেই আমাদের সবার মধ্যে ভালো করার আত্মবিশ্বাস রয়েছে।’ সাকিব মনে করছেন, পাকিস্তানের এই দলটা অনভিজ্ঞ। বাংলাদেশ ভালো করছে। তাই নিজেদের ফেভারিট মনে হচ্ছে। তবে চাপটাও বেশি।
অন্যদিকে নিজেদের জন্য সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক আজহার আলী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন ধরে ভালো খেলছে। দলে কিছু ভালো ক্রিকেটারও রয়েছে। তবে পাকিস্তানেরও একাধিক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে।’
উল্লেখ্য, প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট দলের গর্বিত স্পন্সর হয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অন্যতম ব্র্যান্ড প্রাণ ফ্রুটো এবং কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ভিশন।
এআরএস/এমএস