শেষ বিকেলে এ কি ব্যাটিং বাংলাদেশের!


প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ১৬ মার্চ ২০১৭

ইস কি রমরমা অবস্থাতেই না ছিল! স্কোরবোর্ডটাকে বেশ মোটা-তাজাই মনে হচ্ছিল। লঙ্কানদের ৩৩৮ রানের জবাবে স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৯২। হঠাৎ এক ঝড়ে সব লণ্ডভণ্ড। দিন শেষে রান দাড়ালো ৫ উইকেটে ২১৪।

৫৬.৪ থেকে ৫৭.৪- শেষ সাত বলে ৭ রানে পতন ঘটলো তিন উইকেটের। আউট হলেন ইমরুল, সাব্বির ও তাইজুল। আরও একটি উইকেট বেশি পড়তে পারতো। টি-টোয়েন্টি মেজাজ ও ধরনে এদিক ওদিক ব্যাট ছুড়ে আট বলে তিন বাউন্ডারিতে শেষ অবধি ১৮ রানে অপরাজিত অবস্থায় সাজ ঘরে ফিরলেও সাকিব দুইবার আউট হতে পারতেন।

Babuপ্রথমবার ল²ন সান্দাকানের বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে সীমানার ওপর ক্যাচ দিয়ে বসেন সাকিব। উপুল থারাঙ্গা ঠিকমক ফ্লাইট ঠাউরে উঠতে না পারায় বেঁচে যান। বল তার হাতে লেগে সীমানার ওপারে পড়ে বাউন্ডারি পেড়িয়ে যায়।

পরেরবার লাকমালকে পুল খেলতে গিয়ে আবার ক্যাচ তুলে বেঁচে যান তিনি। এবারও ডিপ মিউইকেটের ফিল্ডারের সামনে পড়ে বল। ওই দুই শটের একটিতেও নিয়ন্ত্রণ ছিল না সাকিবের। তাই এই ২১৪ রানটাই পাঁচ উইকেটের বদলে ৬ উইকেটে থাকলে মোটেই অবাক হবার কিছু থাকত না।

তা যে ছিল না, তার প্রমাণ মিললো ব্যাটিং কোচ সামারাবিরার কথায়। খেলা শেষে তার মুখেও শোনা গেলো, ‘পাঁচ উইকেট হারিয়েছি আমরা। ওটা ছয় উইকেটও হতে পারতো।’

অথচ পড়ন্ত বিকেলের আত্মঘাতি ব্যাটিং পর্ব শুরুর আগের অংশটা দারুণ। ৩৩৮ রানে লঙ্কানদের থামানোর পর তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের কি সাবধানী অ্যাপ্রোচ। যতটা সতর্ক হয়ে খেলা যায়- এ দুই বাঁ-হাতি তেমনই খেললেন।

Vision

অযথা কোন উচ্চাভিলাষী শট খেলার চেষ্টাই ছিল না। একমদম উইকেট আগলে শুধু আলগা বলগুলো থেকে রান করার চেষ্টা। তাতে ফলও মিললো। বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে রঙ্গনা হেরাথ, লাকমাল, ল²ন সান্দাকান আর পেরেরার সে কি প্রাণপন চেষ্টা!

সম্ভাব্য সব চেষ্টাই বেশ অনেকটা সময় ভেস্তে গেছে। অবশেষে দুই ঘণ্টা পর প্রথম সাফল্যের মুখ দেখলো লঙ্কানরা। ৯৫ রানে ভাঙ্গলো উদ্বোধনী জুটি। ৯১ বলে ৪৯ রানে বাঁ-হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের বলে রিভিউতে আউট হলেন তামিম।

মিডল স্ট্যাম্পের সামনে আঘাত হেনেছিল বল। মনে হচ্ছিল বেরিয়ে যাবে। তাই আলিমদার প্রথমে আউট দেননি। পরে রিভিউতে কপাল পোড়ে তামিমের। তামিম মাত্র ১ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারলেও সৌম্য ঠিক হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন; কিন্তু তারপর ধৈর্য্য ও মনোযোগ হারিয়ে ফেলা।

এটা যেন তার রোগ হয়ে গেছে। পঞ্চাশ করছেন নিয়মিতই। শেষ দুই টেস্টের তিন ইনিংসে পঞ্চাশ; কিন্তু একবারও সেটাতে শতকে পরিণত করতে ব্যর্থ। আজও তাই। ১২১ বলে ৬১ রান করে চায়নাম্যান বোলার ল²ন সান্দাকানের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে বোল্ড সৌম্য।

আসল বিপর্যয় শুরু হলো দিনের খেলা শেষ হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে। চায়নাম্যান বোলার সান্দাকানকে অযথা পুল খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন ইমরুল। ৭৮ বলে ৩৪ রান করে ইমরুল সান্দাকানের যে খাট লেন্থের ডেলিভারিতে পুল খেলতে গিয়ে লেগবিফোর উইকেট হয়েছেন, তা চোখে দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন।

বাজে ও আলগা ডেলিভারি যাকে বলে। একদম খাট লেন্থে পিচ পড়ে তার দিকেই আসছিল। ইমরুল উইকেট ছেড়ে পুল করতে না গিয়ে অনায়াসে নরম হাতে প্লেস করতে পারতেন। তাহলে অতবড় বিপদ ঘটতো।

দিনের অল্প কিছু সময় বাকি, তাই অধিনায়ক নিজে না গিয়ে কিংবা সাকিবকে না পাঠিয়ে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তাইজুলকে পাঠালেন। সান্দাকানের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং সামলাতে না পেরে প্রথম বলেই বিদায় এ বাঁ-হাতি স্পিনারের। একটু দ্রুতগতির ডেলিভারি। সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ। প্যাডে লেগে। আম্পায়ার প্রথমে নট আউট দিলেও রিভিইতে সর্বনাশ নেমে আসে।

ব্যর্থতার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন সাব্বির। সাহস নিয়ে কিছু নজর কাড়া শট খেললেও শেষ পর্যন্ত বেপরোয়া পুল খেলার খেসারত দিয়েছেন এই তরুণও। ৫৪ বলে ৪২ রান করে লাকমালের বলে পুল খেলতে গিয়ে মাঝ ব্যাটে আনতে ব্যর্থ হন। বল গ্লাভসে লেগে চলে যায় লেগ স্লিপে।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।