হাথুরুসিংহের স্মৃতি ঘেরা মাঠেই শততম টেস্ট বাংলাদেশের


প্রকাশিত: ০৩:৪৩ এএম, ১৪ মার্চ ২০১৭

সময়; গত পরশু (রোববার) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। মুশফিক, তামিম, সাকিবদের  টিম হোটেল ‘তাজ সমুদ্রে’র লবির পাশে লাগোয়া রেস্টুরেন্টে হঠাৎ প্রানচাঞ্চল্য। কোলাহল। জাতীয় দলের ক্রিকেটার, কর্মকর্তা, কোচিং স্টাফ আর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের সরব উপস্থিতি।

উপলক্ষ বাংলাদেশের  শততম টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেটে পথ চলার এক অন্যরকম মাইলফলক স্পর্শ করার শুভক্ষণকে সামনে রেখে তাজ সমদ্র’র রেস্তোরাঁয় এক নৈশভোজের আয়োজন করলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি এবং আবাহনী ক্লাবের কর্মকর্তা শেখ বশির আহম্মেদ মামুন।

Babuজাতীয় দলের ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ এবং ম্যানেজার সবাই উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না শুধু একজন; চন্দিকা হাথুরুসিংহে। টিম হোটেলেই ডিনার। কোচ কেন নেই? পরে জানা গেল চন্দিকা হাথুরুসিংহে গিয়েছিলেন অসুস্থ মা‘কে দেখতে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কলম্বো হাথুরুসিংহের নিজের শহর। পিতা গত হয়েছেন অনেক আগে। তবে তার মা এখনো জীবিত। বয়স হয়েছে বেশ; ৭৯। তার মা শুধু বার্ধক্যজনিত কারনেই অসুস্থ নন। পারকিনসন্স নামক কঠিন রোগেও আক্রান্ত। যে রোগে ভুগে পৃথিবী থেকেই বিদায় নিয়েছেন কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলী।

যে রোগে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এমনিতেই আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধা। তারওপর জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত। তাই মাকে দেখতে মন ছুটে গিয়েছিল হাথুরুর। এ কারণেই নিজের ভিটে-মাটিতে ছুটে যাওয়া। সবচেয়ে বড় কথা দুরত্বও কম। মাত্র ২০ মিনিটের পথ।

রাতে  মাকে দেখে তাজ সমুদ্রের লবিতে দাড়িয়ে জাগো নিউজকে এসব তথ্যই জানালেন হাথুরুসিংহে। বললেন, ‘মা তো মাই। তার কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। শিশুই থাকে। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, তুমি খাওয়া দাওয়া করছো ঠিক মত?’

কী কাকতালীয়! ২৪ ঘন্টা পর যে শহরের যে মাঠে বাংলাদেশ ১০০ নম্বর টেস্ট খেলতে নামবে, সেই শহর ও মাঠ আর আজকের টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যেন অভিন্ন স্বত্তা। হাথুরুসিংহের গোটা ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডই জড়িয়ে আছে কলম্বোর এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু, বেড়ে ওঠা, এমনকি লঙ্কান ক্রিকেটে প্রথম অংশগ্রহণ এবং প্রথম অধিনায়ক নির্বাচিত হওয়া সবই এই পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামে খেলে খেলেই।

Vision

কলম্বোর যে এলাকায় পি সারা স্টেডিয়াম, এলাকাটির নাম ‘বোরেল্লা।’ ঠিক শহরের প্রানন্দে না হলেও অন্যান্য ক্রিকেট ভেন্যুর মত শহরের উপকন্ঠে নয়। একদম শহরের ভিতরেই পি সারা। আসল নাম ‘পাইকিয়াসোথি সারাভানামুত্তু’ স্টেডিয়াম। ভদ্রলোক ছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের প্রথম সভাপতি। তার নামেই এ স্টেডিয়াম।

তবে অবাক করা বিষয় হলো, মাঠটি কিন্তু শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের নয়। বাংলাদেশের বাইরে সারা বিশ্বে যে সংস্কৃতি চালু আছে, এখানেও তাই। মাঠটি একটি ক্লাবের। মাঠের মালিক তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট ও এ্যাথলেটিক ক্লাব।

যেটা একটা ছেটখাট কমপ্লেক্সের মত। সাথে সুইমিংপুল ও ব্যাডমিন্টন কমপ্লেক্সও আছে। এ মাঠের সাথেই জড়িয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের নানা স্মৃতি। তার শৈশব, কৈশোর, বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটার হওয়া এবং লঙ্কান ক্রিকেটে প্রথম অধিনায়কত্ব করা- সবই এ তামিল ইউনিয়ন ক্লাবের হয়ে।  

এ মাঠ যে তার ক্যারিয়ারের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত তা নিজেই বলেছেন হাথুরু, ‘ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে আসতাম খেলা দেখতে। তারপর এই ক্লাবের অনূর্ধ-১৪ দলে নাম লিখাই। সেখানে নিয়মিত অনুশীলন ও চর্চা করে এক সময় ক্লাবটির মূল দলে জায়গা কওে নিয়েছি। এক সময় ক্লাবের অধিনায়কও হয়ে যাই।’

দীর্ঘসময় তিনি ছিলেন এই ক্লাবের সঙ্গে। হাথুরু নিজেই জানালেন, ‘১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে ছিলাম কলম্বোর তামিল ইউনিয়ন ক্লাবের সাথে। আমি খুব সৌভাগ্যবান। লঙ্কান ক্রিকেটের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও নামী ক্লাব এই তামিল ইউনিয়ন। এ ক্লাবের হয়ে অনেক সুখ স্মৃতি আছে। প্রচুর স্মরনীয় ঘটনার সাক্ষী এই মাঠ ও ক্লাব। অনেক আসরে এ ক্লাবের হয়ে খেলেছি আমি।’

মুরালিধরন পর্যন্ত তার নেতৃত্বে খেলেছেন বলে জানালেন হাথুরু, ‘নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে হয়, এই ক্লাবের হয়ে আমার নেতৃত্বে বিশ্বসেরা অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনও খেলেছেন। আজ যিনি শ্রীলঙ্কার বোলিং কোচ- চাম্পাকা রামানায়েকে, তিনিও তামিল ইউনিয়ন ক্লাবে আমার সঙ্গী ছিলেন বেশ ক’ বছর। বর্তমান লঙ্কান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথও এই ক্লাবের হয়ে আমার সঙ্গেই খেলেছে।’

১৯৯৮ সালে তামিল ইউনিয়ন ক্লাব ছেড়ে যান হাথুরু। সে গল্প শোনালেন নিজ মুখে, ‘১৯৯৮ সালে এ ক্লাব ছেড়ে আমি অন্য ক্লাবে যোগ দিই; কিন্তু তারপরও তামিম ইউনিয়ন ক্লাবের সাথে আমার সম্পর্ক অটুটু ছিল। আমার প্রথম ক্লাব কোচিংও শুরু হয় এই মাঠে, এই ক্লাবের হয়েই। সেটা ২০০৪ সালের ঘটনা।’

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।