দিন শেষে আফসোস সেই ‘নো’ বল


প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৭

কিছু কিছু আফসোস, অনুশোচনা আর আক্ষেপ একটু অন্যরকম হয়। যেখানে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দল ছাপিয়ে মানুষ ভাগ্যকে দোষারোপ করে। ঠিক তেমনি এক আফসোস এখন বাংলাদেশ শিবিরে।

Babuআজ গলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম দিন শেষে পুরোপুরি না হলেও মুশফিক বাহিনীর মনের গহীনে একটা অস্ফুট আক্ষেপ কাঁটার মত বিধছে। সবাই দুষছেন ভাগ্যকে।

খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের কণ্ঠেও অনুশোচনা, ‘ইস ব্যড লাক’! সমালোচকরা হয়ত টিপ্পনি কাটবেন। বলবেন, সারা দিনে চারটি মাত্র উইকেটের পতন ঘটিয়ে আবার ভাগ্যকে দোষারোপ করা কেন? এমন কথা উঠতেই পারে।

মঙ্গলবার প্রথম দিন শেষে স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে অবশ্য তেমনই মনে হবে। তবে ঘটনার পিছনেও যেমন ঘটনা থাকে, দিন শেষে লঙ্কানদের ৩২১ রানের (চার উইকেটে) মোটা তাজা স্কোরের পিছনেও আছে অন্য কাহিনী।

যেখানে খানিক ভাগ্য বিড়ম্বনা আছে বৈ কি। তাই তো মুশফিক বাহিনী এবং বাংলাদেশ সমর্থকরা আফসোসে পুড়ছেন। আর বলছেন, সত্যিই ভাগ্য খারাপ। তাই যদি না হবে, তবে শুভাশিসের ওই ডেলিভারিটিই বা কেন ‘নো’ হবে?

যদিও সারা দিনে ১৬ ওভারে আরও একটি ‘নো বল’ করেছেন শুভাশিস। তারপরও সে নো বল নিয়ে একটি কথাও নেই। ঘুরে ফিরে সবার মুখে একটাই কথা, ইস শুভাশিসের প্রথম ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিটি যদি ‘নো’  না হতো! তাহলে দিন শেষে খেলার চালচিত্র ভিন্নই হতে পারতো।

এমন কথা উঠতেই পারে। কারণ, দিন শেষে যার প্রায় একার ব্যাটে ভর করে লঙ্কানদের রান ৩০০ পেরিয়ে গেছে, সেই ২২ বছরের যুবা কুশল মেন্ডিস ফিরে যাচ্ছিলেন প্রথম বলে শূন্য রানে; কিন্তু ‘নো’ বলে বেঁচে যাওয়া সেই কুশল শেষ পর্যন্ত আর আউটই হননি।

দিন শেষে সাজঘরে ফিরলেন অপরাজিত অবস্থায়। তাও অল্প-স্বল্প রানে নয়। ১৬৬ রানের বিশাল ইনিংস খেলে। ক্রিকেট শুধু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলাই নয়। সব সম্ভবের আর নানা হিসেব নিকেশ ও ‘যদি’ ‘তবের’ও খেলা।

Vision

দিন শেষে সব সময়ই ওই ‘যদি’ ‘তবে’ উঠে আসে আলোচনায়। আজও উঠছে। ভাবা ও বলা হচ্ছে, কুশল মেন্ডিস খালি হাতে ফিরে গেলেই হয়ত দিন শেষে বাংলাদেশের অবস্থা আরও ভাল থাকতে পারত।  

অতিবড় বাংলাদেশ বিরোধীও এ কথার প্রতিবাদ করতে পারবেন না। এমন ধারনাকে অমুলক ভাবারও অবকাশ নেই। কারণ, আজ বাংলাদেশের বোলারদের চেপে বসা অবস্থা থেকে খেলার নিয়ন্ত্রণ লঙ্কানদের দিকে গেছে কুশল মেন্ডিসের একার কৃতিত্বেই। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে দিন শেষে নিজ দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছেন মোরাতুয়ার এ ২২ বছরের উচ্ছল যুবা। কে জানে, তাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিনের ‘হিরো’ বনে যেতে পারতেন বাংলাদেশের পেসার শুভাশিস রায়?

হয়ত এ পেসারের প্রথম ওভারটিই হতে পারতো দিনের টার্নিং পয়েন্ট। তাসকিন আহমেদের বদলে দিনের ছয় নম্বর বোলিংয়ের শুরুতে বাজিমাৎ করে ফেলেছিলেন শুভাশীষ। চার নম্বর ডেলিভারিতে উপুল থারাঙ্গার উইকেট উপড়ে দেবার ঠিক পরের বলে আবার আঘাত; এবার তার ভিতরে আসা ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন কুশল মেন্ডিস। ব্যাটের ভিতরের কানায় ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটের পিছনে।

কিপার লিটন দাস অসাধারণ ক্ষিপ্রতা ও চপলতায় বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা গøাভসে নিয়ে ফেলেন। মাথা নিচু করে সাজঘরের পথে পা বাড়ান এ লঙ্কান টপ অর্ডার; কিন্তু সাজঘরে যেতে যেতে থমকে দাঁড়ান। টিভি রিপ্লে দেখে নিজেই পুলকিত! মুখে স্মিত হাসি।

নিশ্চয়ই মনে মনে বলেছেন ‘ইস কি বাঁচাই না বেঁচে গেলাম বাবা!’ টিভি রিপ্লে‘তে দেখা গেল বলটি ‘নো’  ছিল। ডেলিভারির সময় শুভাশিসের সামনের পা‘র প্রায় পুরোটাই বাইরে চলে গিয়েছিল। বাঁ  পায়ের তলার নীচের অংশটা দাগের ওপরে থাকলেও চলতো।

কিন্তু সেটাও ক্রিজের বাইরে। পরিষ্কার নো বল। আর তাতেই বেঁচে যাওয়া। আর একবারের জন্য ভুল না করে শতরানের পর দেড়শো পেরিয়ে ১৬০ এর ঘরে। কুশল মেন্ডিসের সৌভাগ্যের দিনে দুর্ভাগ্য শুভাশিসের। দিন শেষে তার নামের পাশে এক উইকেটের বদলে হয়ত ৩-৪ কিংবা তারও বেশি উইকেট জমা হতে পারতো।

কারণ কুশল মেন্ডিস দিনের বাকি সময় একা একদিক আগলে রাখায় বাংলাদেশের বোলারদের ঘুরে দাঁড়ানোর পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও সুযোগ ছিল; কিন্তু করুনারত্নে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিলে সে সম্ভাবনা যায় ভেস্তে।

চতুর্থ উইকেটে অনেকটা সময় কাটিয়ে ১৯৬ রানের বিরাট পার্টনারশিপ গড়ে বসেন কুশল মেন্ডিস আর করুনারত্নে (৮৫)। কে জানে কুশল সকালে প্রথম বলে আউট হয়ে গেলে অতবড় পার্টনারশিপ আর তৈরি নাও হতে পারতো। তাই তো ভাগ্যকে দোষ দেয়া।

দিন শেষে কথা বলতে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের কন্ঠে তাই হতাশা, ‘কি আর বলবো ভাই, ব্যাড লাক। ওই ডেলিভারিটাই নো হলো। তবে কেউ তো আর ইচ্ছে করে নো বল ছোড়ে না! ওটা হয়ে যায়।’

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।