‘ব্যাটসম্যান’ সাঙ্গাকারার পরিসংখ্যানেই অনুপ্রাণিত মুশফিক!


প্রকাশিত: ১১:৪২ এএম, ০২ মার্চ ২০১৭

কথায় বলে ‘হিস্ট্রি রিপিটস ইটস সেলফ।’ ইতিহাস নাকি আপনা-আপনি ফিরে আসে। আবার এমনও বলা হয়, মানুষও নাকি কখনো কখনো ঘুরে ফিরে আবার সেখানেই ফিরে আসে। যেখানে তার শুরু।  

মুশফিকুর রহীমের অবস্থা ঠিক তাই। ২০০৭ সালের ৩-৫ জুলাই কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে অভিষেক ঘটেছিল কিপার মুশফিকুর রহীমের। ঠিক ১০ বছর পর সেই মাঠেই গ্লাভস ছেড়ে শুধু অধিনায়ক আর ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নামবেন মুশফিক।

গতকাল রাতে কলম্বোয় টিম হোটেলে হয়েছে ওই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। বুধবার রাতে অবশেষে কিপিং ছেড়ে শুধুই ব্যাটসম্যান হওয়ার ঘোষণা বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের। দেশে অনেক কথা-বার্তা আর রাজ্যের সমালোচনার পর সিদ্ধান্ত না পাল্টালেও শ্রীলঙ্কার মাটিতে হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আর ক্রিকেট ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথে কথা বলে ১১ বছর পর টেস্টে কিপিং ছেড়ে আবার শুধুমাত্র ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় ফিরে গেলেন মুশফিক।

২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক, পরের বছর ২০০৬ সালের মার্চে দেশের মাটিতে বগুড়ায় দ্বিতীয় টেস্টেও শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা। আর ১৬ মাস পর কলম্বোর পি সারায় প্রথম গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে দাঁড়ান তিনি।

তারপর টানা ৫০ টেস্টে উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করে অবশেষে ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরা। সিদ্ধান্ত পাল্টে আবার কিপিং করার ইচ্ছা প্রকাশ না করলে আগামী ৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম শুধুই ব্যাটসম্যান।

সবার জানা, পরিশ্রমী-অধ্যবসায়ী মুশফিক ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিংটাও বেশি পছন্দ করেন। বার বার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কিপিংটাকে জড়িয়ে রাখার কথা বলা মুশফিককে মূলত দুটি কথা বলে বোঝানো হয়েছে।

প্রথম কথা ছিল, উইকেটকিপিংটা তার ব্যাটিংকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একটানা এক-দুদিন করে উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়িয়ে থাকায় অনেক শক্তি ক্ষয় হয়। মানসিক চাপও থাকে। যার প্রভাবে ব্যাটিং ও দল পরিচালনায় শতভাগ মনোযোগ-মনোসংযোগ দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
Vision
এর বাইরে মুশফিকুর রহীমের সামনে লঙ্কান ক্রিকেটের সফলতম টেস্ট ব্যাটসম্যান কুমারা সাঙ্গাকারার উদাহরণ উপস্থাপন করা হয়। হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আর ক্রিকেট ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন মুশফিককে কিপিং ছাড়তে লঙ্কান গ্রেট কুমারা সাঙ্গাকারার উপমা টানেন। যা যে কোনো ব্যাটসম্যান কাম কিপারকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট খেলতে দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করবে।

একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানই যথেষ্ট- ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কুমারা সাঙ্গাকারা কিপার হিসেবে খেলেছেন ৪৮ টেস্ট। যার ৮১ ইনিংসে তার রান ছিল ৩১১৭। মাঝারি গড়- ৪০.৪৮। অর্ধশতক ১১টি। আর শতরান ছিল ৭টি। সর্বোচ্চ ছিল ২৩০।

অন্যদিকে কিপিং ছেড়ে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হওয়ার পর গড়ে ২৬’র চেয়ে বেশি রান বেড়ে যায় সাঙ্গাকারার। শুধু ব্যাটসম্যান সাঙ্গাকারা ৮৬ টেস্টে ১৫২ ইনিংস ব্যাট চালিয়ে রান করেছেন ৯২৮৩। ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকানোসহ টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৩১৯ রানের ইনিংসটিও খেলেন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে।

শুধু স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে সাঙ্গাকারার গড় ৬৬.৭৮। সেঞ্চুরি ৩১টি। আর হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪১। সবচেয়ে বড় তথ্য হলো, ২০০৮ সালের এপ্রিলে কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হবার পর সাঙ্গাকারার ব্যাটে রানের নহর বয়ে যায়।

ওই সময়ের পর থেকে ক্যারিয়ারের ইতি টানার আগে পর্যন্ত তার গড় ছিল ৬৬। যা ক্রিকেটের কিংবদন্তী ড্রন ব্র্যাডম্যানের পর আর যে কোন ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি। শচীন, লারা, পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, দ্রাবিড় ও মার্ক ওয়াহর মত বিশ্ব বরেণ্য ব্যাটসম্যানের চেয়েও বেশি।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।