মুশফিক কিপিং ছাড়লেন যে কারণে


প্রকাশিত: ০৭:৪৩ পিএম, ০১ মার্চ ২০১৭

সিদ্ধান্তটা কতটুকু সঠিক? তা বলে দেবে সময়। যদিও সময়টা একদম যথার্থ। নিজের উইকেট কিপিং ক্যরিয়ার সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নেবার এটাই সেরা সময় ছিল মুশফিকুর রহীমের। কিপিংটা একটু-আধটু খারাপ হচ্ছিল কিছুদিন ধরেই। তবে সে খারাপের মাত্রাটা একটু বেশি চোখে পড়ে হায়দরাবাদে ভারতে বিপক্ষে টেস্টে।

পপিং ক্রিজ থেকে দু’পা সামনে বেরিয়ে যাওয়া ভারত কিপার ঋদ্ধিমান সাহাকে স্ট্যাম্প করতে না পারাটা অনেক বড় ব্যর্থতার দলিল হয়ে থাকলো। এমন নয় যে, তেমন মিস আগে হয়নি। হয়েছে; কিন্তু ৪ রানে বেঁচে যাওয়া ঋদ্ধিমান সেঞ্চরি (১০৬) করে ফেলায় ব্যর্থতাটা আরও বড় হয়ে দেখা দেয়।
Vision
এরপর থেকেই আসলে টেস্ট অধিনায়কের কিপিং ক্যরিয়ার হয় প্রশ্নবিদ্ধ। শুরু হয় সমালোচনা, তীর্যক কথা বার্তা। অধিনায়কত্ব, ব্যাটিং আর কিপিং- তিন চাপ সহ্য করা কঠিন হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ কিপিং করে তারপর ব্যাটিংয়ে নামা এবং দলের সমুদয় দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিজের সেরাটা উপহার দেয়ার কাজ ঠিকমত করা যাচ্ছে না। সে সঙ্গে আবার দল পরিচালনার মত গুরু দায়িত্ব কাঁধে।

সব মিলিয়ে নানামুখি চাপ। ১০০ থেকে ১৫০ ওভার কিপিং করে ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়া। তাতে করে মূল কাজ মানে ব্যাটিংটা ক্ষতিগ্রস্ত। এমন কথা-বার্তা শোনা গেছে অনেকের মুখেই। সে কথোপকোথনের ঢেউ যে মুশফিকের গায়েও লাগেনি, তা নয়। লেগেছে।

তবে মুশফিক তা সেভাবে আমলে আনেননি। শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার ২৪ ঘন্টা আগে সংবাদ সন্মেলনেও ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিং চালিয়ে যাবার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন তিনি। বলেছেন, কিপিং করবো কি করবো না, তা নির্ভর করছে টিম ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছের ওপর। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে করবো। না চাইলে কিপিং করবো না। তবে আমাকে যদি বলতে বলা হয়, তবে বলবো আমি ব্যাটিং আর কিপিং দুই’ই এক সঙ্গে চালিয়ে যেতে চাই। আমার মনে হয় ব্যাটিংয়র সঙ্গে কিপার হিসেবেও দলের সাফল্যে অবদান রাখার সামর্থ্য আছে আমার।’

এমন কথা বলার পর  মনে হচ্ছিল মুশফিক বিপিং চালিয়ে যেতে পারেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ভুল প্রমাণ হয়েছে। বুববার রাতে কলম্বোয় টিম মিটিংয়ে অবশেষে বরফ গলেছে। অবশেষে মুশফিক কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটিংয়ে মনোযোগি হবার মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হঠাৎ কি এমন আলোচনা হলো যে মুশফিক তার অতি পছন্দের কিপিং ছাড়তে রাজি হলেন? ক্রিকেট দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বুধবার রাতে জাগো নিউজের সাথে টেলিফোন আলাপে সে কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।

তিনি জানান, অনেক আলোচনা ও কথা-বার্তার পর মুশফিক কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খালেদ মাহমুদ সুজনের কথায় পরিষ্কার,  হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও তিনি নিজে মুশফিকের সাথে কথা বলেন।

খালেদ মাহমুদ জানান, ‘আমরা অনেক যুক্তি তুলে ধরি। প্রথমতঃ  তাকে বোঝানো হয় কিপিং তার জন্য একটা বাড়তি বোঝা। টেস্টে গড়পড়তা ১০০ থেকে ১৫০ ওভার কিপিং করতে হয়। প্রতিটি বলে বাড়তি মনোযোগ-মনোসংযোগ লাগে। হাটুমুড়ে বসে থাকতে হয়। এতে বাড়তি শক্তির অপচয় হয়। এত লম্বা সময় কিপিং করার পর শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। অবসাদ চলে আসে। যার প্রভাবে ব্যাটিং ও অধিনায়কত্ব দুই’ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এরপর তাকে কুমারা সাঙ্গাকারা ও ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের কথা বলা হয়। যাদের দু’জনই একটা সময় ব্যাটিং আর কিপিং করতেন। আবার কোন এক সময় গিয়ে তা ছেড়েও দেন। কিপিং ছাড়ার পর দু’জনারই ব্যাটিংয়ে উন্নতি হয়।

সাঙ্গাকারা কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে শুরু করার পর আরও বড় ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। তার ব্যাটের ধার বেড়ে যায় বহুগুণে। রানের নহর বইতে থাকে। ২৬ গড় বেড়ে যায়। ম্যাককালামেরও ব্যাটিংয়ে উন্নতি হয়। আমরা মুশফিককে বোঝাতে সক্ষম হই যে, কিপিং ছাড়লে তার শারীরিক, মানসিক ও ক্রিকেটীয় মনোযোগ-মনোসংযোগের পুরোটাই দল পরিচালনা ও ব্যাটিংয়ে দেয়া সম্ভব হবে। তাতে করে তার নিজের লাভ হবে। ব্যাটিং ক্যারিয়ার আরও উজ্জ্বল হবে। পরিসংখ্যানও সমৃদ্ধ হবে। আর অধিনায়ক হিসেবে ভাল করার পর্যাপ্ত সময় ও অবকাশও মিলবে।

তাতে তার পাশাপাশি দলেরও উপকার হবে। এসব উদ্দীপক ও ক্রিকেটীয় যুক্তি সম্বলিত কথোপকোথনের এক পর্যায়ে মুশফিক মেনে নিয়ে বলেন, ঠিক আছে আমি কিপিং করবো না। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলবো।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।