ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সীমান্ত পরিদর্শন,গরু আসা কমেছে ৮৭ শতাংশ


প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০১৫

ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় সীমান্তের হাটবাজারগুলোতে মাংসের বাজার বেশ চড়া। গত তিন মাসের ব্যবধানে মাংসের দাম বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। ভারত থেকে গরু আসা কমেছে ৮৭ শতাংশ। ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় সীমান্তের বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে তার প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে সীমান্ত পরিদর্শন করে গেলেন ভারতীয়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। অনুপ্রবেশ, পাচার রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। এজন্য মমতার সাহায্যও চেয়েছেন মন্ত্রী।

বাজারে তিন মাস আগে ২১০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকায়।

অন্যদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ গরু পাচার বন্ধে বুধবার গরু পাচারের প্রধান রুট বেনাপোলের পুটখালি সীমান্তের বিপরীতে ভারতের আংরাইল বিএসএফ ক্যাম্প ও সীমান্তবর্তী ইছামতি নদী এলাকা পরিদর্শন করেন। অনুপ্রবেশ, পাচার রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

যশোরের বড় গরুর মাংসের বাজার শার্শার নাভারনের মাংস ব্যবসায়ী ইন্তাজুল ইসলাম জানান, সীমান্তের পশু হাটগুলোতে যে গরু ও মহিষ বিক্রি হয় তার ৯০ ভাগই ভারতীয়। ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায়  পশুহাটে ওপারের গরু পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য গরুর বাজার খুব চড়া। চড়া দামে গরু কিনে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে বলে মাংসের দামও বেশ চড়া।  আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫ মণ মাংস বিক্রি হতো এখন তা কমে ৭-৮ মণে দাঁড়িয়েছে।

বেনাপোলের মাংস ব্যবসায়ী কামরুল হাজারি জানান, তিন মাসে আমাদের মাংস বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ। আগে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ মণ মাংস বিক্রি হলেও দাম বাড়ার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ মণে। ভারতীয় গরু না আসায় ছোট ছোট মাংস ব্যবসায়ীরা এখন বাজার থেকে গরু কিনতে পারছেন না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা দু’তিন জন মিলে একটি গরু কিনে মাংস বানিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট বাজারে বিক্রি করছেন।

বাংলাদেশে ভারতীয় গরুর সবচাইতে বড় ‘খাটাল’ যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালি খাটাল। ভারত থেকে প্রতিদিন এই খাটালে গড়ে তিন হাজার গরু ও মহিষ আসতো। তবে এখন তা কমে এক দুই শ’তে দাঁড়িয়েছে বলে জানান খাটাল নিয়ন্ত্রনকারী ব্যবসায়ী  রফিকুল ইসলাম।

পুটখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফ্ফার সরদার জানান, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে দিল্লী বিধানসভা নির্বাচন শুরু হওয়ার পর ওপারের গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে মাঝে মধ্যে গরু আসা বন্ধ হলেও তা ২-৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লী বিধানসভার নির্বাচন শেষ হলেও গরু আসা শুরু হয়নি। সীমান্তের চোরাগলি দিয়ে বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে অল্প কিছু গরু রাখালরা নিয়ে আসছে।

যশোরের নাভারন গবাদি পশু শুল্ক করিডোরের রাজস্ব কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, যশোরের নাভারনে গেল বছর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ তিন মাসে শুল্ক করিডোর করা হয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৮টি গরু মহিষের। অথচ চলতি বছরের একই সময় ওপার থেকে এসেছে মাত্র ৩৭ হাজার ৪৮৭টি গরু মহিষ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ৮ হাজার ৭শ’ এবং মার্চ মাসে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭শ’ ৯২ গরু মহিষে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গরু এসেছিল ৪৬ হাজার ২১টি, আর মার্চে এসেছিল ৪২ হাজার ২শ’১৫টি।

২৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পুটখালি কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার সামছুর রহমান জানান, বিএসএফ গরু আসতে দিচ্ছে না তাই বন্ধ রয়েছে। ওপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় গরু পাচার ঠেকাতে সাম্প্রতিক সময়ে পুটখালির বিপরীতে বিএসএফ তাদের জনবল কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। তারা সীমান্তে এমনভাবে পাহাড়া দিচ্ছে যাতে একটি গরুও বাংরাদেশে না আসে।  

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ রাজ্যের সহযোগিতা নিয়েই সীমান্তে গরু পাচার এবং অনুপ্রবেশের মতো সমস্যার সুরাহা করবেন বলে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকা ঘুরে আশ্বাস দিয়ে গেলেন। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ বনগাঁ স্টেডিয়ামে রাজনাথের হেলিকপ্টার নামে। সেখান থেকে সড়কপথে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালি সীমান্তের বিপরীতে ভারতের আংরাইল সীমান্তে বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পরে আংরাইলের সীমান্ত-লাগোয়া এলাকায় গিয়ে ইছামতী নদীর ধারে কিছু জায়গা ঘুরে দেখেন। বনগাঁয় রাজনাথ বলেন, ‘‘সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। রাজ্যের সহযোগিতা আশা করছি।’’

ঘটনাচক্রে, বেলা ১২টা নাগাদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ যখন আংরাইলে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, ওই সীমান্ত থেকেই ছ’জন অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েন। তবে বিএসএফ নয়, তাদের ধরে রাজ্য পুলিশ। এদের একজন সন্দেহভাজন জঙ্গি হতে পারে বলে জেলা পুলিশের দাবি। পুলিশ সুপার তন্ময় রায় চৌধুরী জানান, এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

কয়েক মাস আগেই আংরাইল সীমান্তে আরপিএফ জওয়ান নির্মল ঘোষকে কুপিয়ে খুন করেছিল গরু পাচারকারীরা। নির্মলের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে  মন্ত্রী দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।

সীমান্ত ঘুরে দেখার সময়েই স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে স্মারকলিপি দিয়ে জানান, গত দু‘মাস ধরে গরু পাচার প্রায় নেই। এলাকায় শান্তি ফিরেছে। কিন্তু অনুপ্রবেশ চলছে। মন্ত্রী গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। পরে বনগাঁ থেকে বেরিয়ে সরবেড়িয়া হয়ে সোজা ধামাখালি চলে যান রাজনাথ। সেখানে তিনি দাবি করেন, আগের কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে প্রায়ই জলপথে শত্রুরা আসত। অনুপ্রবেশ হত। গরু ও জাল টাকা পাচার হত। তাঁদের সরকার ক্ষমতায় এসেই তিন-চার মাসের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। তা রিপোর্টও পেশ করেছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে। জলপথে হামলা, অনুপ্রবেশ, পাচার রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। গরু পাচার বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান।

বনগাঁতেই মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা মিটিয়ে ফেলা হবে। যেখানে আলোর সমস্যা আছে, আলোর ব্যবস্থা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘যাতে এগুলো করা যায়, তার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গেও কথা বলব।’’  গরু, জাল টাকা, মাদক পাচার ঠেকানো যে একা কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব নয়, তা-ও বলেন রাজনাথ। এর জন্য রাজ্যগুলিকেও উদ্যোগী হতে হবে। খুব শীঘ্রই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।