ভারতকে মেসেজ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সব মিলিয়ে আমরা ভালোই খেলেছি। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে পাঁচ দিন টেস্ট গড়ানো চাট্টিখানি কথা না। ক’দিন আগেও দেখেছি ওদের মাঠে আড়াই/তিন দিনে খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। সেখানে পাঁচ দিন লড়াই করেছে। ভারত আমাদের গত ১৭ বছর ডাকেনি। এতো বছর পর ভারতে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা সম্মানটা রেখেছে। ভালো খেলে প্রমাণ করেছে এখন বাংলাদেশ আগের সেই বাংলাদেশ নেই। আমরা অনেক এগিয়েছি। সব চেয়ে বড় কথা; ভারতকে সেই মেসেজটা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।

আমার কাছে মনে হয়, মুশফিকের আউটটাই টার্নিং পয়েন্ট। ওর আউটেই আমরা ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছি। আগের ইনিংসে ও সেঞ্চুরি করেছিল। ভালো ফর্মে ছিল, ওর কাছে সবাই আরেকটু দায়িত্বশীল ব্যাটিং আশা করেছিল। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষ আশা ছিল -ওর আউট সব শেষ করে দিয়েছে। সাকিবের আউটটা দুঃখজনক ছিল। এমন একটা জায়গায় বল পড়ে লাফিয়ে উঠেছিল। ওর কিছু করার ছিল না।

তবে যেটা আমি আগেই বলেছি আমাদের মূল পার্থক্য ছিল ফিল্ডিং আর ক্যাচিংয়ে। ওরা শেষ দিকে কিছু মিস করলেও পুরো ম্যাচে ওদের ফিল্ডিং ছিল দুর্দান্ত। এখানেই ওরা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। আমরা ওদের ব্যাটসম্যানদের এতো জীবন না দিলে ওরা এতো রান করতে পারতো না। সেক্ষেত্রে ম্যাচটা কিন্তু আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো।

পাঁচ দিনের টেস্ট খেলতে যে বোলার লাগে আমাদের; তা ছিল না! সাকিব ছাড়া আমাদের অভিজ্ঞ কোনো বোলার ছিল না। বাকি সবাই যারা ছিল; তাদের সিংহভাগই তিনটা/চারটা করে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা। আর সাকিবই বল করেছে কয় ওভার। ওকে দিয়ে আরও বল করানো উচিত ছিল। সে ইচ্ছা করলে ইনিংসে ৩০/৩৫ ওভার বল করতেই পারে। যদি অন্য কোনো পরিকল্পনা থাকে, তাহলে অন্য কথা।

আমাদের বোলিংয়ে উন্নতি করতে হবে। আগামীতে কোনো সিরিজে যাওয়ার আগে খেলোয়াড়দের ফিটনেস এবং অভিজ্ঞতা পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ের উন্নতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

braverdrin

আর আগেই বলেছি, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ধৈর্য একটু কম। বেশি শট খেলতে চায়। এর জন্য ওদের দোষ দেওয়ারও কিছু নাই। কারণ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খুব কম খেলে। তাই এর উন্নতি করতে হলে অব্যশই আরও অনেক বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে হবে। এবং সম্ভব হলে টেস্ট যত বেশি খেলা যায়। রাব্বি আজকে দারুণ খেলেছে। ওর হারানোর কিছু কিছু নাই, ও বল ঠেকিয়ে গেছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সুন্দর একটা ইনিংস খেলার পর এমন একটা শট। মুশফিকও লফটেড শটে আউট। আসলে সাকিব-মুশফিকের আউট হওয়ার পরই খেলা শেষ। লাঞ্চের আগেই, বাকি সময় ছিল (হারের) অপেক্ষা!

সব মিলিয়ে এটা হবেই। কারণ ভারত র্যাংকিংয়ের ১ নম্বর দল আর আমরা ৯ নম্বর দল। একটা পার্থক্য থাকেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নাই। তবে এখানে যে ভুল হয়েছে এগুলো নোট করে সামনে যে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে ওইখানে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। নিউজিল্যান্ড ও ভারতে আমাদের একই ভুল হয়েছে। এই ভুল আর করা যাবে না। এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে ভালো কিছু সম্ভব।

মাঠে যে সুযোগ আসবে; তা লুফে নিতে হবে। স্ট্যাম্পিং বা ক্যাচিং আর রানআউটগুলো করতে হবে। এ টেস্টেই যদি ওদের এতো জীবন না দিলে প্রথম ইনিংসে হয়তো সাড়ে পাঁচশ’র মতো করতো। তাহলে দ্বিতীয় ইনিংসে ওদের আরও বেশি ব্যাট করতে হতো। সেক্ষেত্রে ওদের আরও লাগতো। এটাই আসলে পার্থক্য হয়ে গেছে।

রাজ্জাক আমাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো খেলছে। ওকে আমরা অল্পতেই বাদ দিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশেই এটা বেশি হয়, একটা দুইটা সিরিজ খারাপ খেললে সরাসরি বাদ দিয়ে দেয়। ওদের দেখেন ইশান্ত শর্মা কত দিন পর ফিরলো। অস্ট্রেলিয়ায় দেখেছি ব্র্যাড হগ ৪০ বছর বয়সেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। অভিজ্ঞতার মূল্য আছে; এটা দিতে হবে। টেস্টের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ২০টি উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে।

তবে আমি খুব খুশি বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। তবে কষ্ট শুধু ফিল্ডিংয়ের জায়গাটায়। আর আমাদের শট খেলার প্রবণতা থাকবেই; যতদিন না প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আরও বেশি না খেলানো হয়। টেস্টও কম খেলি। বছরে ১০/১২টা টেস্ট খেললেও হতো। আমার বিশ্বাস- ভারত আমাদের যে অজুহাতে এতো দিন আমন্ত্রণ জানায়নি। এবার এটা তারা বুঝতে পেরেছে। ইংল্যান্ড তিন দিনে আউট হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ পাঁচদিন খেলেছে।

আরটি/এনইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।