মিরাজের কাছ থেকে সিনিয়রদের শিক্ষা নেওয়া উচিত
সব মিলিয়ে আমাদের দিনটা ভালোই গেছে। উইকেটটা একটু বেশি গেছে। এ সময় দুই বা তিনটা উইকেটে ৩২২ হলে খুব ভালো হতো। তিনটা এলবিডব্লিউ আর একটা রান আউটই ভুগিয়েছে। এলবিডব্লিউগুলো খুবই দুঃখজনক ছিল। সাকিব যদি আউটটা না হতো। একটা হেঁয়ালি শটে আউট হয়ে গেছে। অবশ্য ও এভাবেই খেলে। ওর স্বাভাবিক খেলা এটাই। যে শটটায় ও আউট হয়েছে; সেটা ছয় হলে আমরাই খুব খুশি হতাম।
সাকিব এর আগেও এমন শটেই বেশি আউট হয়েছে। আর এটা কমিন্ট্রিতে সে আজকে স্বীকারও করেছে। ও ভালো খেলেছে। বিশেষ করে মেহেদী হাসান মিরাজের খেলায় আমি মুগ্ধ। মুশফিকের সঙ্গে ৩৩টা ওভার খেলছে, একটা সেশন প্রায় দেড়টা সেশন যেভাবে ওরা কাটিয়ে দিল এটা আমাদের সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় ব্যাপার।
ওরা এলবিডব্লিউর যে ফাঁদ পেতেছে তাতে আমরা নিজেরাই পড়েছি। দেখা যায়, আমাদের ব্যাটসম্যানদের পা-টা একটু আসতে দেরি যায়। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে কখন, যখন দেখে ব্যাটসম্যানদের ফুটওয়ার্কে একটু গণ্ডগোল থাকে। এটা বুঝলেই তারা এলবিডব্লিউ করার ফাঁদ পাতে। কোনোভাবে সুইং দিয়ে বলটা পায়ে পৌঁছে দিতে পারলেই এলবিডব্লিউ পাওয়া যাবে। মিস করলেই পায়ে লাগবে।
আমার কাছে মনে হয়েছে সাব্বিরের ওই সময় এমন শট খেলা উচিত হয়নি। সে একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছে। ওই সময়ে সুইপ শটে এলবিডব্লিউ হওয়া আর সুইংয়ে বিট হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা। শট খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ সবসময়ই দুঃখজনক, তা-ও এমন পরিস্থিতিতে। মুশফিক খুবই ভালো খেলেছে। একটা মাইলফলকও সে পার করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের তিন হাজার রান পার করলো।
আর আজকের উইকেট সাংঘাতিক এমন কিছু ছিল না। ভারতীয় বোলাররা ভালো বল করেছে। ওদের বোলাররা যত ভালো তার চেয়ে বেশি ভালো বল করেছে। ওদের শারীরিক ভাষাও অনেক ইতিবাচক ছিল। আমাদের সিনিয়র ব্যাটসম্যানরা যদি আরেকটু সচেতন হয়ে খেলতো তাহলে হয়তো আরেকটু ভালো হতো।
আমার মনে হয় আগামীকালের প্রথম সেশনটা কাটাতে পারলে এখনও ড্রয়ের সম্ভবনা আছে। তবে আমাদের একটা সমস্যা হলো- দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা একটু নড়বড়ে থাকি, একটু অস্বস্তিতে থাকি ফলে ১৭০/৬০ এমন রানেই অলআউট হয়ে যাই। দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের পরিসংখ্যান মোটেও ভালো না। এটা নিয়ে অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্ট ভাবছে। আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসে কেন এমন হয়। ওই ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে খেলতে পারলে আশা করি এবার ভালোই হবে।
১০৪ ওভারে ৩২২ রান। খেলার গতি ঠিক আছে। সবই ঠিক আছে। ওদের তিনটা সেঞ্চুরি আর দুইটা হাফ সেঞ্চুরি। আমাদের তিনটা হাফ সেঞ্চুরি। এই হাফ সেঞ্চুরিগুলোই সেঞ্চুরি বানাতে হয়। এই জায়গায় আমাদের আরও পেশাদার হওয়া উচিত। পঞ্চাশ করলে একশর লক্ষ্যে খেলা উচিত। একশ করলে দেড়শর লক্ষ্যে খেলা উচিত। দেড়শ করলে দুইশর লক্ষ্যে। এ ধরনের লক্ষ্য রাখতে হয় ব্যাটসম্যানদের। এমন হলেই মস্তিষ্ক এটা ধরে নেয় -আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।
আর শট খেলার প্রবণতা আমাদের সবসময়ই বেশি। আগেই বলেছি এটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ কম খেলার কারণেই হয়। বিপিএল খেলার পর নিউজিল্যান্ড এরপর ভারত, প্রথম শ্রেণি খেললাম কোথায়? মুশফিককে সাপোর্ট দিয়ে যদি লাঞ্চের পরের ড্রিঙ্কসটা পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারি তাহলে ইতিবাচক কিছু আশা করতেই পারি।
চা বিরতি পর্যন্ত যাওয়ার আশা আমি করি না, করলে খুবই ভালো। কমপক্ষে লাঞ্চ বা লাঞ্চের পর ড্রিঙ্কসটা পর্যন্ত খেলতে পারলে ড্র করা সম্ভব। কারণ ভারত সম্ভবত আমাদের ফলোঅন করাবে না। চতুর্থ ইনিংস খেলার ঝুঁকি ওরা নাও নিতে পারে। আমার মনে হয় একটা টার্গেট দাঁড় করিয়ে চতুর্থ দিনের চ্যালেঞ্জটা আমাদেরই দেবে।
মুশফিক ও মিরাজ যদি একটা সেশন ভালোভাবে খেলে দিতে পারলে আমাদের জন্য খুব ভালো হয়। এরপর আর প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যাটসম্যান নেই। তাসকিন-রাব্বির কাছে এতো বড় কিছু আশা করা ঠিক হবে না। তবে কখনো কখনো ওরা খুব ভালো খেলে। আজকেই মিরাজকে নিয়ে তেমন আশাবাদী কেউ ছিল না। কিন্তু ১০৩ বল খেলে ফিফটি করেছে। এতে মিরাজের টেম্পারমেন্টের প্রমাণ হয়ে গেল। ১০৩ বল খেলা চাট্টিখানি কথা নয়। রাব্বি ৭৬ বল খেলেছিল নিউজিল্যান্ডে।
উইকেট এখনও তত একটা কার্যকরী হয়নি। ভারতে যেটা দেখা যায় তিন দিনের মাথায় উইকেট ভেঙে যায় আজকে এটা হয় নাই। অশ্বিন ও জাদেজার মতো স্পিনাররা সুবিধা করতে পারেনি এখনও। পেসাররা উইকেট পেয়েছে বেশি। তবে শেষদিকে টার্ন শুরু হয়েছে। কালকেই সম্ভাবত মূল ম্যাজিকটা শুরু হবে। স্পিনে আমরা দুর্বল বলে আমার মনে হয় না। আমরা স্পিন ভালোই খেলি। সব মিলিয়ে আমার আশা শেষ হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, এখন ড্র করা সম্ভব।
আরটি/এনইউ/আরআইপি