হায়দরাবাদে না থেকেও আছেন ধোনি


প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্টেডিয়ামে প্রবেশের মূল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একজন জার্সি বিক্রি করছেন। বিরাট কোহলির জার্সিই চলছে সবচেয়ে বেশি। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নন শুধু এখন ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয়ও বলা চলে তাকে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট- তিন ফরম্যাটেই তিনি রয়েছেন সেরা পাঁচজনের ভেতর। ভারতে এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কোহলি। তার জার্সিই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে, তার জার্সি পরেই ভক্ত-দর্শকরা সবচেয়ে বেশি মাঠে উপস্থিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক।

sohelতবে, শুনলে অবাক হবেন, কোহলির পাশাপাশি রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনিও। কী অবাক হলেন! হওয়ারই কথা, যিনি ২০১৪ সালেই সাদা জার্সিকে গুডবাই জানিয়ে রাখলেন, যিনি আর কখনও ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন না, তিনি কী করে টেস্ট ম্যাচে স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলিদের পাশাপাশি থাকেন!

কিন্তু স্টেডিয়ামে প্রবেশ পথের পাশে ওই অস্থায়ী জার্সি বিক্রেতার কাছে কোহলির পাশাপাশি রয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির জার্সিও। দেদার বিক্রি হচ্ছে ধোনির নামাঙ্কিত জার্সি। শ্রী চৈতন্য টেকনিক্যাল কলেজের একদল শিক্ষার্থী তার কাছ থেকে ধোনির জার্সি পরে গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে। একজনের গায়ে দেখা গেলো ধোনির জার্সি আবার মুখে আঁকা বিরাট কোহলির নাম। বোঝাই যাচ্ছে ভারতের সদ্য সাবেক এবং বর্তমান- দু অধিনায়ককেই পছন্দ তার। এ কারণে একজনকে জড়িয়ে নিলেন শরীরে, আরেকজনকে ঠাঁই দিলেন কপালের ওপর।

২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরকালেই টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়ার পাশাপাশি সাদা জার্সিকেও গুডবাই জানিয়ে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বকে গুডবাই জানিয়ে দিয়েছেন কিছুদিন আগে। যদিও ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলার ইচ্ছা আছে তার, তবুও ধোনি এখন ভারতীয় ক্রিকেটে বলতে গেলে একজন সাবেক ক্রিকেটারের নাম।

তবে হায়দরাবাদে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্টের সিরিজে কোনোভাবেই তাই দলে থাকার প্রশ্ন আসে না; কিন্তু টেস্ট শুরুর প্রথম দিনও দেখা গেছে ধোনির নামাঙ্কিত জার্সি পরে দলে দলে দর্শক প্রবেশ করছে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে।

dhoni
দ্বিতীয় দিনও একই চিত্র। টেস্টের দ্বিতীয় দিন গ্যালারিতে দর্শক সমাগম প্রথম দিনের তুলনায় অনেক বেশি। এর কারণও আছে, প্রথম দিন শেষ বিকেলে যে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত রয়েছেন বিরাট কোহলি! দ্বিতীয় দিন তার ব্যাট থেকে ডাবল সেঞ্চুরি দেখার আশায় সকালেই হাজার হাজার দর্শক প্রবেশ করে গ্যালারিতে। কোহলিও হতাশ করেননি তাদের। টানা চারটি সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরির বৃত্ত পূরণ করেই তবে থামলেন তিনি। ক্যারিয়ারের চারটি ডাবল সেঞ্চুরিই এলো তার গত সাত মাসে।

কোহলির ব্যাটিং দেখতে এসেছে হায়দরাবাদের দর্শকরা ধোনির জার্সি পরে। শ্রী চৈতন্য টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী শ্রীনিবাস, ভামসি এবং থ্রিপুথির কাছে জানতে চাওয়া হলো, কেন তারা এই টেস্টে ধোনির জার্সি পরে খেলতে নেমেছে? এক কথায় জবাব, ‘আমরা ধোনিকে ভালোবাসি। এ কারণেই তার জার্সি পরে আসছি। তিনি এই ম্যাচে না থাকলে কী হবে, আমাদের হৃদয়ে তো আছেন।’

braverdrink
একই সঙ্গে ধোনি এবং কোহলি? থ্রিপুথি জানালেন, ‘আমি ধোনিকে ভালোবাসি। আমাদের ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। আর কোহলি এখন দলের অধিনায়ক। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। এ কারণে তাকেও পছন্দ করি। ধোনিকে হৃদয়ে ধারণ করে কোহলির খেলা দেখবো।’

কলকাতা থেকে হায়দরাবাদ এসেছেন উত্তম রায়। খেলা দেখার জন্য নয়, তার উদ্দেশ্য জার্সি, পতাকা-ফেস্টুন এসব বিক্রি করা। ভারতের মাটিতে যেখানেই খেলা হয়, সেখানেই সৌখিন এই বিক্রেতা চলে যাবেন জার্সি বিক্রি করার জন্য। দমদম মতিঝিল কলেজে বাংলায় অনার্স করছেন উত্তম রায়। পড়ছেন তৃতীয় বর্ষে। তিনি জানালেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় কোহলির জার্সি। তবে, ধোনির জার্সিও কম বিক্রি হয় না। এখানে এসে এ ধরনের জার্সি যারা বিক্রি করছে, তাদের সবার কাছেই ধোনির জার্সি পাবেন। বিক্রি হয় বলেই আমরা ধোনির জার্সি নিয়ে এসেছি।’

হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত টেস্টের আগে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট। আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে, ২০১৩ সালের মার্চে। মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়াকে ধোনির নেতৃত্বে ভারত হারিয়েছিল এক ইনিংস ও ১৩৫ রানের ব্যবধানে। চার দিনেই খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল সেই টেস্টে। ব্যাট হাতে ৪৪ রান করলেও নেতৃত্বে ছিলেন ক্ষুরধার। এ কারণেই হয়তো হায়দরাবাদের মানুষ মনে রেখেছে তাকে। শুধু তাই, ভারতকে টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতানোর পাশাপাশি টেস্ট র্যাং কিংয়ে শীর্ষে তুলেছিলেন তিনি। এ কারণেও ধোনিকে হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছেন হায়দরাবাদের দর্শকরা।

আইএইচএস/এমআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।