র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
আজ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে র্যাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে। একই বছরের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখে) রমনা বটমূলে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে মাঠে নামে র্যাব।
ওই বছর ২১ জুন রাজধানীর উত্তরায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানকে ধরার অভিযান দিয়ে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন কার্যক্রম শুরু করে বাহিনীটি। ২০০৪ সালে রাজধানীসহ সারাদেশের জনগণ যখন সন্ত্রাসীদের হাতে এক ধরনের জিম্মি হয়ে পড়ে, তখন র্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় প্রথমে গঠিত হয়েছিল র্যাপিড অ্যাকশন টিম (র্যাট)। পরে পূর্ণাঙ্গ বাহিনী হিসেবে যাত্রা শুরু করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাবের সঙ্গে প্রথম `ক্রসফায়ারে` নিহত হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১১ বছরে জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধীঅভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে অনেক জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এই বাহিনী।
তবে একই সময়ে র্যাব সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে `বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড` নিয়ে। তবে চরমপন্থী, জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাস দমনে র্যাবের রয়েছে অনেকে সফল অভিযান। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের শক্তি জানান দেওয়ার পরই মাঠে নামে র্যাব গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানিসহ শত শত জেএমবি জঙ্গিকে।
কার্যক্রম শুরুর সময় ব্যাটালিয়ন ছিল সদর দফতরসহ সাতটি। জনবল পাঁচ হাজার ৫২১ জন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাইকৃত চৌকশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদেরনিয়ে এখন ১৪টি ব্যাটালিয়নে অন্তত সাড়ে ১০ হাজার র্যাব সদস্য কর্মরত রয়েছেন।
এ দিকে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার হত্যাকাণ্ডে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ইমেজ সংকট দেখা দেয় বাহিনীর। তবে হত্যার সঙ্গে জড়িত র্যাবের ওইসব কর্মকর্তাকে বরখাস্তসহ শাস্তির সুপারিশ করায় র্যাবের সম্মান কিছুটা রক্ষা পায়। সবকিছুর মধ্য দিয়ে র্যাব সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এ বাহিনীর সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সে সব অকুতোভয় র্যাব সদস্যগণকে যাঁরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাব ফোর্সেস এর প্রতিটি সদস্যই তাঁদের পেশাদারী মনোভাব, দক্ষতা এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে দেশে জঙ্গিদমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে দেশবাসীর ভূয়সী প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, আমি জেনেছি র্যাব ফোর্সেস গুরুতর অপরাধ, সন্ত্রাস, অপহরণ, বনদস্যু, জলদস্যু, জঙ্গি, চরমপন্থি দমনসহ অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার, চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত, ভেজালবিরোধী অভিযান এবং অবৈধ মাদক ব্যবসা প্রতিরোধে ইতোমধ্যে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে।
তিনি তাঁর বাণীতে আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর ন্যায় র্যাবের এই অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে র্যাবের সকল স্তরের সদস্য দেশপ্রেম, কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা ও সততার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এটাই আমার প্রত্যাশা। আমি এ বাহিনীর অব্যাহত সাফল্য ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এ বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত র্যাব সদস্যগণ তাঁদের পেশাগত দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসদমন, অপহরণ, ভেজালবিরোধী অভিযান, অবৈধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে র্যাবের সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত। বিশেষ করে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতা দমনে এলিট ফোর্স র্যাব দেশের জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশ আজ বিশ্ববাসীর উন্নয়নের রোল মডেল। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, এলিট ফোর্স র্যাবের প্রতিটি সদস্য সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নাশকতারোধে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করবেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। আমি র্যাব ফোর্সেস-এর অব্যাহত অগ্রগতি এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
জেইউ/বিএ/পিআর