৬৩ বল মোকাবেলা করাটাই রাব্বির কাছে সেরা


প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

নিউজিল্যান্ড সফরে আসার আগে ঘরের মাঠে খেলেছেন দুটি মাত্র টেস্ট। যাতে সাকুল্যে উইকেট ছিল মোটে একটি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও শেরেবাংলার স্লো-লো ট্র্যাকে সে অর্থে কামরুল ইসলাম রাব্বি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তার বোলি কারো নজরেও পড়েনি।

কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বরিশালের এ পরিশ্রমী যুবাকে ঠিকই নিউজিল্যান্ড সফরে নিয়ে এলেন। দুই টেস্ট সিরিজে আহামরি সাফল্য না পেলেও তার নিজেকে মেলে ধরার আন্তরিক চেষ্টা এবং সমীহ জাগানো বোলিংয়ের প্রশংসা সবার মুখে মুখে।

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্টে কামরুল ইসলাম রাব্বির উইকেট মোট ছয়টি। দুই টেস্টেই দরকারি সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার কাজটি করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও দলের প্রয়োজন মেটাতে ছিলেন সচেষ্ট।

Babuক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০ নম্বরে নেমে একদিক আগলে রাখার কাজটি করেছেন অনেক্ষণ। ৬৩টি বল খেলে সবার অকুণ্ঠ প্রশংসাও কুড়িয়েছেন রাব্বি। আজও (সোমবার) চরম বিপদের সময় ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ২৫ রানে অপরাজিত থাকলেন।

শুধু তাই নয়, তাসকিনের সাথে মিলে কিউই ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে লড়াই করে নবম উইকেটে ৫১টি মূল্যবান রানও তুলেছেন তিনি। যেখানে নামি-দামি ব্যাটসম্যানরা সাউদি, বোল্ট, ওয়েগানারের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়েছেন। সেখানে রাব্বির উভয় ইনিংসে ভালো খেলা এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাউন্সারে শরীর, মাথা, মুখ ও ব্যাট সরিয়ে নেয়ার কৗশলটিও বেশ ভালোই রপ্ত করেছেন এ যুবা।

আজ খেলা শেষে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিম বাসে ওঠার আগে কয়েকজন স্বদেশি সাংবাদিকের সাথে আলাপে কামরুল ইসলাম রাব্বি একটা কথাই বলেছেন, ‘আসলে মেধা-প্রজ্ঞার চেয়ে কোনো বিষয়ে ফোকাস থাকাই আসল। মনোযোগ-মনোসংযোগ ও ইচ্ছে থাকলে ভালো করাই যায়।’

এ কারণে দেশে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্টে একটিমাত্র উইকেট পাওয়ার প্রসঙ্গ এনে রাব্বি বলেন, ‘প্রথম লক্ষ্য ছিল আগের দুই টেস্টের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া। প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। আর নিউজিল্যান্ডে পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিংয়ের চেষ্টা করেছি।’

braverdrink

এ দেশের কন্ডিশনে বোলিং করা আর নিজ দেশের উইকেরট বোলিং করার প্রসঙ্গ তুললে রাব্বির ব্যাখ্যা, ‘আমাদের দেশের উইকেটের সাথে এখানকার উইকেটের রাজ্যের পার্থক্য। এখানকার উইকেটগুলো স্পোর্টিং। একটু বাজে বা আলগা বোলিং করলে আর রক্ষে নেই। বাউন্ডারি খেতে হবে।’

আর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বোলিং করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিরয় মুখে রাব্বির মন্তব্য, ‘এখানে একেক সময় একেক রকম বোলিং করতে হয়েছে। প্রথম দিনে সুইং গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর তৃতীয় দিনে ছিল গতি। লাইন লেন্থও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

এবারের সিরিজে প্রিয় উইকেট কিউই ক্যাপটেন উইলিয়ামসনের। তাকে প্রথম ইনিংসে অউট করার স্মৃতিচারণ করে রাব্বি বলেন, ‘তাকে নিয়ে অনেক ভেবেছি। হোমওয়ার্কও করেছি। খেলার আগের রাতেও শুয়ে শুয়ে ভেবেছি কিভাবে তাকে আটকানো যায়। তার দুর্বলতা চিহ্নিত করে বল করেছি। আল্লাহর রহমতে সফলও হয়েছি।’

নিজের ব্যাটিংয়ের প্রসঙ্গ আসতেই কোচের কথা তার মুখে, ‘কোচের পরিকল্পনা ও পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাটিং করেছি। তিনি আমাকে প্রথম ইনিংসে একদিক আগলে রাখতে বলেছিলেন। আমি সে কাজটিই করেছি। আর আজ যখন আমি উইকেটে গেছি তখন কোন ব্যাটসম্যান নেই। চেষ্টা করেছি মেরে কিছু  রান বাড়াতে। তবে আমি আগের ইনিংসটাকেই এগিয়ে রাখবো। কারণ ওই ইনিংসে ৬৩ বল খেলেছি।’

দলের অনেক পরিণত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান এখানে এসে সাউদি ও বোল্টের বাউন্সারে দিশেহারা; কিন্তু রাব্বি উভয় ইনিংসেই বাউন্সার বেশ সাহস-আস্থা নিয়ে মোকাবিলা করেছেন। যা দেখে অনেকেরই চোখ ছানাবড়া! এটা কিভাবে সম্ভব? দশ নম্বর ব্যাটসম্যান এ রকম হাই কোয়লিটি ফাস্ট বোলিং কিভাবে মোকাবিলা করলেন? বাউন্সারগুলোই বা কিভাবে মোকাবিলা করলেন?

রাব্বির মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘আসলে বাউন্সার এড়ানোর অনেক প্র্যাকটিস করেছি। আমাদেরকে  এ কন্ডিশনে বাউন্সারের মুখোমুখি হতে হয় বেশি। তাই প্রচুর প্র্যাকটিস করানো হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমার চেষ্টা ছিল। আমি সব সময়ই ভেবেছি, আমাকে কিছু না কিছু করতে হবে।  মনোযোগ রাখলে যে কোন কাজই করা সম্ভব।’

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।