মন্ত্রণালয়েই বন্দি রেশন-ঝুঁকি ভাতার ফাইল


প্রকাশিত: ০৪:৫০ এএম, ২৪ মার্চ ২০১৫

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন ও ঝুঁকি ভাতার ফাইল আটকে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ফলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিভাগ/অধিদফতর/দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেশন ও ঝুঁকি ভাতা পেলেও নারকোটিক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত।

দীর্ঘদিন ধরে দেন-দরবার করেও তারা রেশন ও ঝুঁকি ভাতা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে নারকোটিক্স কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা চরম আকার ধারণ করেছে।

সূত্র জানায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি ১১ জন মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভায় রেশন ও ঝুঁকি ভাতার বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বিষয়টি আজও নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় ১১ মার্চ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন।

স্বরাষ্ট্র সচিবের চিঠিতে বলা হয়েছে, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ন্যায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মামলা দায়ের, তদন্ত ও মামলা পরিচালনাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। এটি নিরসন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন সুবিধার আওতায় আনা হলে তাদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে।

রেশন ও ঝুঁকি ভাতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় মতামত ও সুপারিশসহ এ সংক্রান্ত ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বজলুর রহমান বলেন, রেশন ও ঝুঁকি ভাতার বিষয়ে সরকার আন্তরিক। স্বরাষ্ট্র সচিব এক্ষেত্রে আমাদের দারুণভাবে সহায়তা করছেন। আশা করছি, শিগগিরই এ বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত তার কাছে এ সংক্রান্ত ফাইল উপস্থাপন করা হয়নি। তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।

নারকোটিক্স নির্বাহী অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে রেশন ও ঝুঁকি ভাতার দাবি জানিয়ে আসছি। আশা করি সরকার আমাদের এ যৌক্তিক দাবিটি পূরণ করবে।

নারকোটিক্স অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বর্তমান মহাপরিচালকের আন্তরিক উদ্যোগের ফলে বিষয়টি অনেকদূর এগিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আমাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হবে।

জানা গেছে, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স ও কারা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিধি অনুযায়ী রেশন ও ঝুঁকি ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছেন। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন প্রদানের ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হয়েও রেশন ও ঝুঁকি ভাতা পাচ্ছে না। অথচ আসামি গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধার অভিযানে কোনো ধরনের অস্ত্র ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ দফতরের কর্মচারীদের সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। নিয়মিত মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি তারা বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছেন।

এদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টাই দায়িত্ব পালন করতে হয়। সরকারি ছুটির দিনেও অনেক সময় মাদক উদ্ধারে তাদের অভিযান চালাতে হয়।

এছাড়া মামলার তদন্ত, আসামি আনা-নেয়া ও থানায় এজাহার দায়েরসহ সরকারি অনেক কাজের জন্য কোনো ব্যয় বরাদ্দ নেই। ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয়ে এসব সরকারি কাজ করতে হয় বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মচারীরা। এমতাবস্থায় রেশন ও ঝুঁকি ভাতা দেয়া হলে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের জনবল মাত্র এক হাজার ২৮৩। এদের রেশন ও ঝুঁকি ভাতার আওতায় আনা হলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকার মতো। এর বিপরীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবছর অন্তত ৫০০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেন।

এছাড়া অভিযানের সময় মাদক বিক্রির টাকাও উদ্ধার করা হয়। যার পরিমাণ বছরে দুই থেকে তিন কোটি টাকার কম হবে না। সর্বোপরি, এ দফতর থেকে আদায় করা বছরে প্রায় ৮০ কোটি টাকার রাজস্ব জাতীয় অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। সূত্র : যুগান্তর

বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।